বাংলার ‘নন-ফিকশন’ ক্রিকেট-চর্চার ক্ষেত্রে বাংলায় লেখা কয়েকটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজের একটি প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হ’ল। এর জন্য লেখক, প্রকাশক ও এই বই প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত সকলের সাধুবাদ অবশ্যপ্রাপ্য।
বইটির ‘প্রোডাকশন কোয়ালিটি’ (কাগজ-ছাপাই-বাঁধাই-অলঙ্করণ ইত্যাদি) বেশ ভাল। প্রায় তিনশো পৃষ্ঠার বইতে মুদ্রণ-প্রমাদ ও বানান-ভুল সংখ্যায় নেহাতই নগণ্য। অর্থাৎ সম্পাদনা ও প্রুফ রিডিং-এর কাজে যত্নের ছাপ আছে।
ছবিগুলি বেশ মূল্যবান, বিশেষ করে সমর চক্রবর্তীর পারিবারিক জীবনের, সৈনিক কালের ও কলকাতা ক্লাব-ক্রিকেটের সময়কার। তবে সফরকারী বিভিন্ন বিদেশি দলের (গ্রাহাম ডাউলিং-এর নিউজিল্যান্ড, বিল লরির অস্ট্রেলিয়া, ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ) বিরুদ্ধে খেলার কয়েকটি ছবি থাকলে আরো ভাল লাগত। বহু আগেকার (সংবাদপত্রে বা পত্রিকায় প্রকাশিত) সাদা-কালো ছবিগুলির মধ্যে অল্প কয়েকটির ছাপা বিশেষ ভাল আসেনি, কারণটি অন্তত আমার কাছে সহজবোধ্য তাই অনুযোগ করছি না।
“পরিসংখ্যান”, “স্কোরকার্ড” ও “অ্যলবাম” অংশগুলি বইটিতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে, এ কথা বলতেই হয়।
“অনুলিখন” অংশে “পরিচিতি”-গুলো ছোট্ট কিন্তু দরকারি, বিশেষ করে নব্য-প্রজন্মের কাছে। তবে সেলিম দুরানি ভারতের হয়ে খেলেন ১৯৬০-১৯৭৩ (১৯৭৬ নয় – মুদ্রণ-প্রমাদ?) সাল।
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর রচনাটিতে সমরের ভারতীয় টেস্ট দলে জায়গা না পাওয়ার ব্যাপারটিকে (আফশোসের বদলে) একটু অন্যরকম, ক্রিকেটীয় দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী ভারতীয় দলের তিন দশকব্যাপী বোলিং স্ট্র্যাটেজিতে তাঁর বা তাঁর মতন স্যুইং-সিম বোলারদের পরিসর কতটা ছিল, এই প্রশ্নটা খানিকটা অস্বস্তিকর হলেও খুবই অপ্রাসঙ্গিক কি? এখানে তাঁর বা তাঁদের দক্ষতাকে খাটো করে দেখান নয়, জাতীয় দলের কৌশলনীতির কথা হচ্ছে।
কিছু তথ্য এবং কয়েকটি বানান বা শব্দগুচ্ছ বা বাক্যবন্ধ নিয়ে কিছু প্রশ্নচিহ্ন থাকতে পারে।
- “বার্গেস” না “বার্জেস” (নিউজিল্যান্ডের ব্যাটার Mark Burgess)
- “ক্যালিঞ্জার” না “কালিনজ” না “কলিঞ্জ” (নিউজিল্যান্ডের পেসার Richard Collinge)
- “ভারতের প্রাক্তন ওপেনার চান্দু বোরদে” – বোরদে ৯৭-টা টেস্ট ইনিংসে কখনও ওপেন করেননি।
- “টাবের” না “ট্যাবার” না “টেবার” (অস্ট্রেলিয়ার কীপার Brian Taber)
- “স্টেকপোল” না “স্ট্যাকপোল” (অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার Keith Stackpole)
- “আদিম হিংস্রতা নিয়ে বল হাতে ছুটছেন রবার্টস, প্যাডমোর, জুলিয়ান, বারেটরা।“ –প্যাডমোর (Albert Padmore) ও ব্যারেট (Arthur Barrett) দুজনই স্পিনার ছিলেন, পেসার নয়, তবে তাতে অবশ্য হিংস্রতা নিয়ে বল হাতে ছোটা আটকায় না।
- “প্রাক্তন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রয় ফ্রেডরিক্স” – ফ্রেডরিক্স ৫৯-টা টেস্ট ও ১২-টা ODI-তে কখনো অধিনায়ক ছিলেন না।
- “নরসিংহ রায়” না “নরসিমহা রাও” (Narsimha Rao) – মুদ্রণ-প্রমাদ?
- “কলেজ স্ট্রিটে গ্রে সিনেমার সামনে” না “কলেজ স্ট্রিটে গ্রেস সিনেমার সামনে” – মুদ্রণ-প্রমাদ?
- “প্রকাশ পদ্ম” না “প্রকাশ পোদ্দার (Prakash Poddar) – মুদ্রণ-প্রমাদ?
- “১৯৭১ সালে ব্রাবোর্ণ স্টেডিয়ামে রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল।“ না “১৯৭১-৭২ সালে ব্রাবোর্ণ স্টেডিয়ামে রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল।“ – মুদ্রণ-প্রমাদ?
সবশেষে জানাই, বইতে কি থাকলে আরো ভাল হ’ত – সমরের বোলিং নিয়ে কিছু technical points – তাঁর swing grip, seam position, wrist position / usage, run-up, bowling action, delivery stride, line / length, pace / bounce, delivery variation, new-vs-old ball usage এইজাতীয় ব্যাপারস্যাপার নিয়ে যদি কোন প্রাক্তন ক্রিকেটার বা কোচ (সহজ করে) কিছু বলতেন – সমরের সাফল্যের চাবিকাঠি ও তাঁর সীমাবদ্ধতা – তাহলে শুধু প্রকৃত ক্রিকেট-রসিকরা নয়, স্বয়ং চাকুদাও নিশ্চয়ই আরো খুশি হতেন কারণ উনিও যে ক্রিকেটার তৈরি করতেন / করতে চাইতেন। এই আশা কি পরবর্তী সংস্করণে পূর্ণ হবে?