ভারতের এক অন্য জয়

দুজনের দুরকম গল্প। 

একজনের মধ্যে যে মশলা আছে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল না কিন্তু মাঠের বাইরের জীবনটাই যেন বারবার পাচ্ছিল অতিরিক্ত প্রাধান্য। ক্রিকেট নয়, ক্রিকেটের বাইরের বিষয় নিয়েই বারবার উঠে আসছিলেন আলোচনায়। কখনও জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে আলপটকা মন্তব্য তো কখনও হীরেখচিত ঘড়ির ছবি দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তোলা। সঙ্গে লম্বা চোট সমস্যা। 

২০২২ এর আইপিএলের সবচেয়ে বড় অবদান, এই আইপিএল ফিরিয়ে দিল ‘ক্রিকেটার’ হার্দিক পান্ডিয়াকে। হয়তো অধিনায়কত্বের বাড়তি দায়িত্বই তাঁকে করে তুলল অনেক বেশী ক্রিকেটমুখী, হয়তো বা নয়। কিন্তু নিজেকে ফিরে পেলেন হার্দিক, ব্যাটে রান আসছে, নিয়মিত বল করছেন। এই হার্দিককে ভীষণ প্রয়োজন ছিল ভারতীয় দলের। হ্যাঁ, অবশ্যই ম্যানচেস্টারে ঋষভ ছিলেন কিন্তু হার্দিকের এই অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ছাড়া বোধহয় বড় কঠিন হতো ভারতের এই জয়। আর তার থেকেও বড় কথা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে  যে দলের ব্যাটিংকে মাথাভারী ব্যাটিং লাইনআপ বলা হতো, তারা এখন মিডল অর্ডারের দাপটেও ম্যাচ জিতছে।

আর দ্বিতীয়জন? যতই বলা হোক না কেন বোধহয় কম হবে। বিরাট, বুমরা, রোহিতকে মাথায় রেখেই বলা যায় কোভিড বিরতির পরে গত দু বছরে (প্রায়) যতটুকু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়েছে, তাতে সম্ভবত ভারতের সবথেকে প্রভাবশালী ক্রিকেটারের নাম ঋষভ পন্থ। মাঠের বাইরের কোন অতিরিক্ত বিষয়ে সাধারনত নিজেকে জড়ান না, মুখ বন্ধ রাখতে ভালবাসেন, শুধু নিজের ব্যাটকে দিয়ে কথা বলিয়ে যান। সমালোচকদের একটা বড় অংশ প্রশ্ন তুলতেন তাঁর সীমিত ওভারের ক্রিকেটের পারফরম্যান্স নিয়ে, রবিবারের পর সম্ভবত সেটাও বন্ধ হবে। মাঝেমধ্যে দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলার অপবাদ আসে বটে, তবে গত দুবছরে এমন কিছু ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে তিনি ভারতের পক্ষে নিয়ে এসেছেন, তাতে করে কোনভাবেই তাঁকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলা যায় না। তাহলে ওই আউটগুলো? ওটাই ঋষভের স্বাভাবিক ক্রিকেট, যেমন ছিল বীরেন্দ্র শেহবাগের। ওটাই ঋষভ। আর?

এখনও অবধি সমস্ত কিছু দেখে শুনে যা মনে হচ্ছে, আগামী দু-আড়াই বছর পর থেকেই শুরু হবে ভারতীয় ক্রিকেটের এক বিরাট ট্রানজিশন পিরিয়ড। হয়তো ২০২৩ বিশ্বকাপের পর থেকেই ধীরে ধীরে এই ট্রানজিশন শুরু হয়ে যাবে। আর তারপর যে নতুন ভারতীয় দলটা তৈরি হবে, এখনও অবধি পারফরম্যান্স-এর যা আভাষ, তাতে করে এই ছেলেটাকে ঘিরেই সেই দলটা তৈরি হবে। হয়তো ওঁর নেতৃত্বেই। এই স্বল্প সময়ে এই জায়গাটা তিনি তৈরি করেছেন, নিজের প্রতিভা এবং পরিশ্রমের সংমিশ্রনে। এটাই ঋষভের সবচেয়ে বড় সাফল্য।