ভারতের যেন বরুণদেবের অভিশাপ লেগেছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপে

৩০ বছর আগের ঘটনা। প্রথম দেখা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ছিল আমার। আজও মনে আছে সেই বিশ্বকাপের বল-বাই-বল স্মৃতি।হয়ত ২০১৯ বিশ্বকাপের থেকেও বেশী মনে আছে ১৯৯২ বিশ্বকাপের কথা। ৮ ম্যাচের রাউন্ড-রবিনের শেষে ভারত মাত্র ৫ পয়েন্ট পেয়ে সপ্তম স্থান লাভ করে। চতুর্থ দল হিসাবে পাকিস্তান সেমিফাইনালে যায় ৯ পয়েন্ট পেয়ে।

বিগত ৩০ বছরে “কোনওদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে” যখন ভেবে দেখেছি সেই বিশ্বকাপে ভারত প্রত্যাশা মতো না খেলতে পারলেও খুব খারাপও খেলেনি। ভাগ্যদেবতা সহায়তা তো দূরের কথা, উল্টে ছুরি মেরেছে ভারতকে। ৩৩ কোটি দেবতার এক দেবতা  বরুণদেবই ডোবালেন ভারতকে। এবং জেতালেন পাকিস্তানকে।

৮ টি ম্যাচের মধ্যে পাকিস্তান এবং জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ভারত জেতে। অখ্যাত স্টেডিয়াম ‘ম্যাককে’তে শ্রীলঙ্কা ম্যাচ পুরো ভেসে যায়। মাত্র এক বল খেলা হয়। কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত ১ বলে ৩ রান করেন। ঐ সময় ধারে ও ভারে ভারত শ্রীলঙ্কার থেকে কয়েকশোগুণ এগিয়ে থাকা দল। ক্রিকেটের সমস্ত অনিশ্চয়তা বিবেচনা করেও বলা যায়, বহু যদি-কিন্তু-অলৌকিকতা ব্যতীত ঐ ম্যাচশ্রীলঙ্কা জিততে পারত না। নিশ্চিত ২ পয়েন্টের বদলে ভারতের কপালে জোটে মাত্র ১ পয়েন্ট। 

হেরে যাওয়া ৫ টি ম্যাচের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটির কথা বলব। ব্রিসবেনের ‘উলুন গাব্বা’য় প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া শুরুর দিকে বেশ সমস্যায় পড়ে কপিল দেব ও মনোজ প্রভাকরকে সামলাতে। প্রথম স্পেলেই কপিল তুলে নেন অজি ওপেনার মার্ক টেলর এবং জিওফ মার্শকে। পরে ডেভিড বুন এবং ডিন জোন্স খেলা ধরেন। যায় ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৩৭ রানে। কপিলের দুটি মেডেন ওভার ছিল।

এবং এই মেডেন ওভার দুটিই কাল হয় ভারতের। কয়েকদিন আগে “উইলোর উইল”-এর পাতায় সাংবাদিক শ্রী কাশীনাথ ভট্টাচার্য এই বিষয়ে লিখেছিলেন। সেই বিশ্বকাপের “রেইন রুল” অনুযায়ী, পরে ব্যাট করা দলের ওভার সংখ্যা কম হলে লক্ষ্যমাত্রা বদল হওয়ার নিয়মটি ছিল অদ্ভুত। প্রথমে ব্যাট করা দলের কম রান করা ওভারের রানসংখ্যা কেবলমাত্র বাদ যেত। 

অজি-দের বিরুদ্ধে গাব্বায় ভারতের ইনিংসে ১৭ তম ওভারে বৃষ্টি নামে। ভারতের নির্ধারিত ওভার কমে দাঁড়ায় ৪৭, এবং সব থেকে কম রান দেওয়া তিনটি ওভার করেন কপিল। যার মধ্যে দুটি মেডেন ওভারের কথা আগেই বলেছি। আরেকটি ওভারে ২ রান। এই তিন ওভারের রানসংখ্যা বাদ দিয়ে ভারতের পরিবর্তিত লক্ষ্যমাত্রা হয় ৪৭ ওভারে ২৩৬। ২৩৫ রান করলে খেলা ড্র হত। 

অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন একটি ৯৩ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। হাতে ৩ উইকেট। শেষ বলে দরকার  ছিল ৪ রান। জাভাগাল শ্রীনাথের পুল সীমানা পার হতে ব্যর্থ হয়। এবং শ্রীনাথ-রাজু দৌড়ে ২ রান যোগ করার পর তৃতীয় রান নেওয়ার আগে আউট হন। ফলত, ভাগ্যদোষে ভালো খেলার ‘অপরাধে’ ভারতকে হারাতে হয়। 

এই দুই ম্যাচ থেকে ৩ পয়েন্ট হলে ভারতের মোট ৮ পয়েন্ট হত। 

এদিকে অ্যাডিলেড ওভালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ৭৪ রানে গুটিয়ে যায়। বৃটিশরা ব্যাট করতে নেমে ৮ ওভারে ৩ উইকেটে ২৪ রান করার পর আবার বরুণদেবের দয়ায় ম্যাচ পণ্ড হয়। নিশ্চিত হারা ম্যাচ থেকেও ১ পয়েন্ট পায় পাকিস্তান। নচেৎ তাঁদের পয়েন্ট হত ৮।

অর্থাৎ, ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েরই পয়েন্ট হত ৮। এক্ষেত্রে ভারত রান রেটে পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে ছিল এবং দুই দলের খেলায় জয়ী হয়েছিল ভারত। অতএব, বলা চলে, ১৯৯২ সালে ভারতের ব্যর্ততার অন্যতম কারণ বৃষ্টি।

বরুণদেব কি সেবার পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিলেন?

ছবি :ইন্টারনেট