বসন্তের এক রঙীন টেস্ট

‌মাত্র আটটা সেশন। আর তাতেই কেল্লা ফতে!‌ মাত্র আড়াই দিন।‌ বিপক্ষের নটে গাছটি মুড়িয়ে গেল এটুকু সময়েই!‌ হ্যাঁ, বেঙ্গালুরুতে ভারত–শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় টেস্টের কথাই বললাম। মোহালির প্রথম টেস্টেরও তো সেই একই হাল। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটই করতে হল না রোহিত ব্রিগেডকে। বড্ড একপেশে একটা টেস্ট সিরিজ। অবশ্য এমনটা যে হবে, প্রত্যাশিতই ছিল। প্রবল শক্তিশালী ভারতের সামনে শ্রীলঙ্কা ছিল নিতান্তই লিলিপুট। ফল যা হওয়ার তা–ই হয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটের প্রাচীন ফরম্যাটের যারা অনুরাগী, তারা মনমরা, আশাহত। একপেশে লড়াই নয়, টক্কর হবে সেয়ানে সেয়ানে। এমনটাই মত তাদের। 

ছবি : গুগল

অবশ্য টেস্টপ্রেমীদের এমন ভাবনায় আশার আলো ফেলল পাকিস্তান–অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় টেস্ট। টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহ্য, গরিমা, আকর্ষণ, উত্তেজনা, মজা, ওঠা–নামা, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরেও অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন— সবই চোখে পড়ল করাচি টেস্টে। পাঁচদিনের জমজমাট লড়াই, যাকে বলে কমপ্লিট প্যাকেজ। প্রথম ইনিংসে সাড়ে পাঁচশোর বেশি রান তুলে অস্ট্রেলিয়ার সমাপ্তি ঘোষণা। জবাবে পাকিস্তান পারেনি দেড়শোর গন্ডি টপকাতে। অনেকেই ভাবতে শুরু করে দিলেন টেস্ট অস্ট্রেলিয়ার মুঠোয়। দ্বিতীয় ইনিংসে একশোর কাছাকাছি রান তুলে অসিরা ৫০৬ রানের টার্গেট ছুড়ল পাকিস্তানকে। রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের স্কোর যখন ২১/‌২, অনেকেই করাচি টেস্টের দেওয়াল লিখন পড়তে শুরু করে দিয়েছিলেন। যদিও তাদের হিসেব মেলেনি।

টেস্ট মানেই প্রয়োজনে দাঁতে দাঁত চেপে একরোখা লড়াই। টেস্ট মানেই প্রয়োজনে ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে থাকা। টেস্ট মানেই ধৈর্যের অসীম পরীক্ষা। টেস্ট মানেই বিপক্ষের চোখরাঙানিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার সাহস দেখানো। সবটাই করলেন পাক অধিনায়ক বাবর আজম। প্রকৃত নেতার মতোই কঠিন সংগ্রামে দলকে দিশা দেখালেন। বাবর খেললেন টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম মহাকাব্যিক ইনিংস। দ্বিশতরানের সামনে গিয়ে যখন থামলেন, বিপদের কালো মেঘ সরে আকাশ তখন অনেকটাই পরিষ্কার। নেতাকে যোগ্য সঙ্গত করলেন শতরান হাতছাড়া করা ওপেনার আবদুল্লা শফিক এবং শতরান করে অপরাজিত থাকা কিপার–ব্যাটসম্যান মহম্মদ রিজওয়ান। ম্যাচ তো ড্র হলই, জিততেও পারত পাকিস্তান। টেস্টের মজা তো এটাই, তাই না?‌ 

২৪ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে সিরিজ খেলছে অস্ট্রেলিয়া। ২০০৯–এ শ্রীলঙ্কা টিম বাসে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেকটাই একঘরে হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান। গত বছর সে দেশে পৌঁছেও মাঠে নামার ঠিক আগের মুহূর্তে সিরিজ বাতিল করেছিল নিউজিল্যান্ড। নিরাপত্তার অজুহাতে। তারপর একই কারণ দেখিয়ে সিরিজ বাতিল করে ইংল্যান্ডও। কিন্তু এবার অস্ট্রেলিয়া আসায় পাক ক্রিকেটের মরা গাঙে জোয়ার এসেছে। বসন্তে বিশ্ব ক্রিকেটও সাক্ষী থাকল এক রঙীন টেস্ট ম্যাচের।