রাহুল দ্রাবিড়কে জনৈক ক্রিকেটপ্রেমীর চিঠি

প্রিয় রাহুল দ্রাবিড়,
আপনাকে লেখা এই চিঠি হয়ত দিনের আলো দেখত না যদি ইন্দোর টেস্টের কাহিনী অন্যরকম হত। কিন্তু তাতেও অপ্রীতিকর প্রশ্নগুলোকে আড়াল করে রাখা যেত কি? জাতীয় দলের কোচ হয়ে আপনি এসেছেন বছর দেড়েক হতে চলল।কয়েকটা গুরুত্বহীন দ্বিপাক্ষিক সিরিজে জয় ছাড়া আপনার আমলে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন সাফল্য না থাকার অজুহাতে আপনাকে এখন‌ই যারা শুলে চড়াতে চাইছে এই অধম সেই দলে নেই।কারণটা খুব পরিস্কার। আপনার ক্রিয়াকলাপ মূল্যায়ণ করার ক্ষেত্রে দেড়বছর সময়টা যথেষ্ট নয় বলেই মনে হয়। শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ হার বাদ দিলে গতবছর ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টেও একসময় সুবিধাজনক অবস্থায় থেকেও ম্যাচ হাতছাড়া করার বিদেশে উপুর্যপরি ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতেও আপনার প্রতি নির্মোহ আস্থাহীনতার কারণ দেখিনি।দেড়খানা সিরিজে ব্যর্থতার খতিয়ান বিশ্লেষণ করে আপনার সম্পর্কে চূড়ান্ত অবস্থান নেওয়া ক্রিকেট প্রজ্ঞার প্রতি স্বাভাবিক অবিচার। কিন্তু টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে টিম ইন্ডিয়া নাস্তানাবুদ হ‌ওয়ার পর প্রথম মনে হল আপনি নিজের ক্রিকেটীয় পান্ডিত্যের প্রতি সন্দেহাতীতভাবে সুবিচার করছেন তো? বিভ্রান্তিকর দল নির্বাচন সহ সঠিক রণকৌশল তৈরীর ক্ষেত্রে অদূরদর্শিতা ছাড়াও কতিপয় স্নেহভাজনের ( পড়ুন কে এল রাহুল) প্রতি অযৌক্তিক পক্ষপাতিত্ব এর রাশি রাশি অভিযোগের পাহাড় তখন আপনার বিরুদ্ধে ক্রম পুঞ্জিভূত ক্রোধের আকার নিচ্ছে। তখন এমনটাও ভেবেছিলাম দেশের মাঠে অষ্ট্রেলিয়া সিরিজে সম্ভাব্য কতৃত্বব্যঞ্জক জয় নিমেষে জনতার অসন্তোষ ভুলিয়ে দেবে।আর কে না জানে ঘরের মাটিতে এই টিম বরাবরই অপরাজেয়।

 

আজ ইন্দোর টেস্ট‌ সর্বসাকুল্যে সোয়া দুই দিনেরও কম সময়ে শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেদিন আমার চিন্তাধারা ভুল ছিল বলে মনে হচ্ছে।হোম সিরিজে নিজের শক্তি অনুযায়ী পছন্দমত উইকেট বানাতে চাওয়া ন্যায়সঙ্গত অধিকার। প্রাথমিকভাবে এহেন চিন্তাভাবনায় সমস্যা নেই। মুশকিল হল আন্ডার প্রিপেয়ার্ড উইকেটে নিজেদের ব্যাটসম্যানরাও যে হামাগুড়ি খেতে পারেন এই সম্ভাবনার অঙ্ক বোধহয় আপনার সিলেবাসে ছিল না। নাগপুর আর দিল্লী টেস্ট শেষ পর্যন্ত জিতলেও ব্যাটিং ভরাডুবির কঙ্কালসার চেহারাকে লুকিয়ে রাখা যায় নি।তখন‌ই আপনি সতর্ক হলে আজ হয়ত হোলকার স্টেডিয়ামে স্টিভদের নাচানাচি দেখতে হত না।সে যাত্রায় লোয়ার অর্ডার মুখরক্ষা করে দিলে বারবারই যে ক্রিকেট বিধাতা এক‌ই গল্প লিখবেন এটা আপনি ভেবে থাকলে সেটা চরম নির্বুদ্ধিতা।বিক্রম রাঠোর এর এই দলে ঠিক কি ভূমিকা সেটা আপনিই জানেন। টেস্টে কোহলি তিনবছর ধরে ছন্দে নেই।তার সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তিনি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন অদূর বা সুদূর অতীতে সেটা কিন্তু শুধু ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে চর্চার বিষয় হতে পারে না।মোটা মাইনে দিয়ে একটা নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের জন্য যাকে রাখা হয়েছে তার অপদার্থতার প্রকাশ্য জবাবদিহি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত দাবী হিসেবে বিবেচিত হ‌ওয়া উচিত।এই যে নিয়মিতভাবে প্রায় প্রতি ম্যাচেই টপ অর্ডার ব্যর্থ হচ্ছে এই রোগের উপযুক্ত প্রতিষেধক আবিস্কারের চেষ্টা হয়েছে কি? গোড়া কেটে গাছের আগায় জল দেওয়ার হঠকারিতা আপনার মত সুবিদিত বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেট মস্তিস্কের থেকে আশা করা যায় না।

ভবিষ্যতকে পড়তে পারলে খুব সঙ্গত আশা নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের বাইশ গজ নিয়ে আপনি সচেতনভাবেই সেই কেলেঙ্কারিটা করার দুঃসাহস দেখাবেন না যা এযাবৎ আপনাকে ডুবিয়ে এসেছে। আপনার শুভবুদ্ধি উদয়ের প্রত্যাশায় রইলাম।
ইতি-
জনৈক ক্রিকেটপ্রেমী

 

 

লেখক অনুভব ব্যানার্জী