তিনি বর্তমান থাকতেই ক্রিকেটের দুনিয়ায় ‘২৯’ সংখ্যাটা অতিক্রান্ত হ’তে দেখেছেন – ১৯৮৩ সালের ২৮শে ডিসেম্বর মাদ্রাজের চিপক মাঠে, এক ‘বেঁটেখাটো’ ভারতীয়ের দ্বারা। তার অনেক আগেই ‘৪৫২’ সংখ্যাটাও অতিক্রান্ত হতে দেখেছেন – ১৯৫৯ সালের ১১ই জানুয়ারি করাচির মাঠে, এক ‘বেঁটেখাটো’ পাকিস্তানির দ্বারা। ‘৯৭৪’ সংখ্যাটা অবশ্য আজ ৯২ বছরেও কেউ টপকাতে পারেননি, তবে ভবিষ্যতে কেউ হয়ত পারলেও পারতে পারেন, যদিও ওঁর পরে এই বাবদে ৯০০-ও কেউ ছুঁতে পারেননি, পাঁচের জায়গায় ছ’টা ম্যাচ পেয়েও।
তবে ’৯৯.৯৪’ সংখ্যাটা বোধহয় চির-অনতিক্রম্যই রয়ে গেল! আজ্ঞে হ্যাঁ, ওটাই স্যর ডন ব্র্যাডম্যান-এর টেস্ট-জীবনের ব্যাটিং গড় – ‘ডনগড়’ বললেই ভাল – আর আজ পর্যন্ত ৭৪ বছরেও সেই ‘গড়’ জয় করা তো দূরস্থান, তার কাছকাছিই পৌঁছে উঠতে পারলেন না রথী-মহারথী ব্যাটাররা কেউই। সেই গড় রয়ে গেছে ক্রিকেট-বিশ্বের এক ‘সংখ্যাতাত্ত্বিক ব্যতিক্রম’ হয়ে। অনেক ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞ পন্ডিত অনেক কাটাছেঁড়া করে অনেক কিছু বলেছেন-লিখেছেন – বিপক্ষ দলগুলোর দুর্বল বোলিং-ফিল্ডিং, অত্যধিকভাবে ব্যাটিং-সহায়ক উইকেট-পরিবেশ, স্বদেশের বাইরে মাত্র একটা দেশেই বারবার খেলবার সৌভাগ্য, স্পিন-সহায়ক উইকেটে উচ্চমানের স্পিন-বোলিংয়ের সম্মুখীন না হওয়া, প্রবল গরম-আর্দ্রতাময় আবহাওয়াতে খেলতে না যাওয়া, বিপক্ষের অধিনায়কদের কৌশলগত দুর্বলতা, স্বপক্ষের শক্তিশালী দলের সুবিধা, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। নাঃ, সেই সংখ্যাটা কিন্তু রয়েই গেল একমেবাদ্বিতীয়ম হয়ে, খানিকটা যেন সেই “batters may come and batters may go but I go on for ever” – এ এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা, তাই না!
আসুন, আজ একবার মনে করা যাক ডন-এর সেই গড়ের নিকটবর্তী কয়েকজনের প্রতিবেশীর নাম, যাঁরা তাঁদের টেস্ট-জীবনে ইতি টেনে দিয়েছেন – তিন দেশের তিন ধনুর্ধর ব্যাটার – দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রেম পোলক (৬০.৯৭), ওয়েস্ট ইন্ডিজের জর্জ হেডলি (৬০.৮৩), ইংল্যান্ডের হারবার্ট সাটক্লিফ (৬০.৭৩) এই ত্রয়ী। অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ (৬০.০০) এখনও খেলছেন, তাই ওঁকে আপাতত ধরছিনা। ব্যস, এই মাত্র ক’জন? না, একজনের কথা ভুলেই যাচ্ছিলাম, অনেকেই ভুলে যান – অস্বাভাবিক নয়, কারণ সর্বদেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটারদের মধ্যে তো নয়ই, তাঁর নাম তাঁর দেশের তাঁর সময়ের সেরা ব্যটারদের মধ্যেই গণ্য করা হ’তনা। তাঁর নাম অ্যাডাম ভোগস (Adam Voges) – মনে পড়ছে কি? মাত্র তো বছর ছ’-সাত বছর আগেকার কথা। তাঁর ২০ টেস্টে ৩১ ইনিংসে মোট ১,৪৮৫ রান (সর্বোচ্চ ২৬৯*) পাঁচটা শতরান (দু’টো দ্বিশতাধিক) ও চারটে অর্ধশতরান সমেত, গড় ৬১.৮৭ – অতএব টেস্ট-জীবনের অন্তে তিনিই ডনের নিকটতম প্রতিবেশী! এ এক অদ্ভুত ঘটনা!!
অ্যাডাম ভোগস-এর জন্ম পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরের সুবিয়াকো অঞ্চলে – ঐ অঞ্চলেই জন্ম ডেনিস লিলি, টেরি অল্ডারম্যান, ও (বর্তমানের) ক্যামেরন গ্রীন এঁদেরও – তারিখটা ছিল ১৯৭৯ সালের ৪ঠা অক্টোবর। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া রাজ্যদলের হয়ে, ২০০২-০৩ ঘরোয়া মরশুমের ডিসেম্বরে প্যুরা কাপ (শেফিল্ড শিল্ড) প্রতিযোগিতায়, মিডল-অর্ডার ব্যাটার হিসেবে টাসমানিয়া রাজ্যদলের বিপক্ষে। তবে সে মরশুমে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেননি, চারটে ম্যাচে তাঁর গড় ছিল ১৭, পরের মরশুমে, ২০০৩-০৪, নিজের রাজ্যদল থেকে বাদও পড়েন।
তাঁর নামটা প্রথম ছড়ায় যখন ২০০৪-০৫ মরশুমে ঘরোয়া ওডিআই-তে দেশের দ্রুততম শতরান তিনি করেন ৬২ বলে, তাঁর সাতটা ছক্কার একটা মাঠের ধারে স্পন্সরের সাইনবোর্ডে গিয়ে লাগে। ঐ ইনিংসটার জন্য প্রভূত প্রশংসা [ঐ ম্যাচে তাঁর বিপক্ষের ব্র্যাড হ্যাডিন বলেন: “That is the first time we have had a look at him. I am not sure if we want a second look.”], এবং ঐ বিশেষ শটটার জন্য ৫০,০০০ (অস্ট্রেলিয়ান) ডলারের বোনাস তিনি লাভ করেন। ২০০৬-০৭ মরশুমে দেশের মাঠে অ্যাশেজ সিরিজের মাঝপথে দ্বিতীয় টেস্টের পর ড্যামিয়েন মার্টিন হঠাৎ করে অবসর নিলে ভোগস দলের সঙ্গে যুক্ত হন, তবে প্রথম একাদশে মার্টিন-এর জায়গাটা পান অ্যানড্রু সাইমন্ডস। এরপর ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টন ওডিআই-তে তাঁর ওডিআই-অভিষেক ঘটে ১৬* (১০) ও ৩-০-৩৩-০ দিয়ে – রুদ্ধশ্বাস রান-তাড়া-করবার ম্যাচে তিন বল ও এক উইকেট হাতে থাকতে ৩৫০/৯ তুলে কিউয়িরা জেতে। ঐ বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে সীমিত-ওভারের ভারত-সফরে জাতীয় দলে জায়গা পেলেও সাতটা ওডিআই-এর কোনওটাতেই প্রথম একাদশে ভোগস জায়গা পাননি। ঐ বছরের ডিসেম্বর মাসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পার্থ টি২০আই-তে তাঁর টি২০আই-অভিষেক ঘটে ২৬ (২০) দিয়ে – দল ম্যাচটা সহজেই জেতে। ততদিনে তাঁর বয়স ২৮ বছর ছাড়িয়েছে। সীমিত ওভারের মারকুটে ব্যাটার ও দক্ষ ফিল্ডার হিসেবে একটু পরিচিতিও হয়েছে।
এরপর থেকে পরবর্তী সাত-আট বছর এমনই চলতে লাগল – এমনকি সীমিত ওভারের জাতীয় দলেও তাঁর জায়গা পাকা হ’লনা। তার মধ্যে আবার ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলের সঙ্গে যাওয়ার বদলে তিনি বিয়ে করতে দেশে রয়ে গেলেন। তাঁর কথায়: “It’s a big thing to give up an opportunity to play for Australia. But I guess you only get married once and that’s important to me and a decision I’ve made and one that I’m comfortable with”. এই সব মিলিয়ে ৩০টা ওডিআই খেলতেই তাঁর লেগে যায় প্রায় পৌনে-সাত বছর, যদিও ৩১টা ওডিআই-তে ৪৫.৭৮ গড় ও ৮৭.১৭ স্ট্রাইক-রেট সহযোগে একটা শতরান ও চারটে অর্ধশতরান সমেত তাঁর ৮৭০ রান (সর্বোচ্চ ১১২*) মোটেই অবজ্ঞা করবার মতন নয়। সুযোগ কম পেলেও তিনি তা ভালই কাজে লাগাতেন। ওডিআই-তে তিনি কখনও ‘গোল্লা’ করে আউট হননি। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে তিনি তাঁর শেষ ওডিআই ম্যাচটা খেলেন। বছর পাঁচেকের একটু বেশি সময়ে মোট সাতটা টি২০আই খেলে ৪৬.৩৩ গড় ও ১২১.২ স্ট্রাইক-রেট সহযোগে একটা অর্ধশতরান সমেত মোট ১৩৯ রান (সর্বোচ্চ ৫১) তিনি করেন, ‘গোল্লা’ নেই এখানেও। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি তাঁর শেষ টি২০আই ম্যাচটা খেলেন।
২০১৪-১৫ ঘরোয়া মরশুমে শেফিল্ড শিল্ড প্রতিযোগিতায় ১১টা ম্যাচে তিনি করলেন ১,৩৫৮ রান (গড় ১০৪.৪৬, ছ’টা শতরানসহ। নির্বাচকদের পক্ষে আর তাঁকে উপেক্ষা করা সম্ভব থাকল না, (২০০৬-০৭ অ্যাশেজ-সিরিজের) প্রায় ন’বছর বাদে তাঁকে আবার জাতীয় টেস্ট-দলে জায়গা দেওয়া হ’ল। ২০১৫ সালের জুন মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তাঁর টেস্ট-অভিষেক হ’ল, তখন তাঁর বয়স ৩৬ বছর ছুঁতে চার মাস বাকি। তিনি একটা টেস্ট-রেকর্ড করে বসলেন, (১০১তম) টেস্ট-অভিষেক-শতরানকারী হিসেবে সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার – ডমিনিকা টেস্টে দলের ৬১/৩ অবস্থায় নেমে দলের ইনিংস ৩১৮ রানে শেষ হওয়ার সময় তাঁর রান ১৩০* (২৪৭ বল, ৩৩২ মিনিট, ৪x১৩ ও ৬x১) – শেষ উইকেটে জশ হ্যাজলউড-এর সঙ্গে ৯৭ রানের জুটি – দল ইনিংসে ম্যাচ জিতল, তিনি ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হলেন। জ্যামাইকার পরের টেস্টে করলেন ৩৭ রান – দল আবার ম্যাচ জিতল, দু’টেস্টের সিরিজও।
২০১৫ সালের অ্যাশেজ-সিরিজে তাঁর জায়গা হ’লেও ইংল্যান্ডের মাঠে তাঁর ব্যাটে পাঁচ-ম্যাচের সিরিজে আট ইনিংসে মাত্র ২০১ রান এল, দু’টো অর্ধশতরান সমেত। অ্যান্ডারসন-ব্রড-ফিন-স্টোকস-উড এঁদের উচ্চ-মানের সিম-স্যুইং বোলিংয়ের বিরুদ্ধে বেশ অসুবিধেয় পড়লেন। সিরিজের শেষের দিকে, ট্রেন্টব্রিজের চতুর্থ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩১ রানের বোঝা নিয়ে ইনিংস পরাজয় এড়াতে দলের ১৩৬-৪ রানে নেমে ২৫৩-তে ইনিংস শেষ হওয়ার সময় ৫১* থাকলেন – দল হারল, সিরিজ ১-৩ হ’ল। পরের টেস্টে ওভালে দলের ১৮৬-৩ রানে নেমে চতুর্থ উইকেটে স্টিভ স্মিথ-এর সঙ্গে ১৪৬ রানের জুটি করলেন, নিজে আউট হলেন ৭০ রানে – দল ইনিংসে জিতে সিরিজ ২-৩ ক’রে কিছুটা মুখরক্ষা করল। ঐ সিরিজের পর মাইকেল ক্লার্ক, ব্র্যাড হ্যাডিন, ক্রিস রজার্স, ও শেন ওয়াটসন টেস্ট-ক্রিকেট থেকে অবসর নিলে বাংলাদেশ সফরের জন্য স্মিথ-এর পাশে ভোগস সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন, আহত ডেভিড ওয়ার্নার-এর পরিবর্তে। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে এই সফর হয়নি।
এর পরের মরশুমে, ২০১৫-১৬, নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চার মাসে আটটা টেস্টের ১১টা ইনিংসে তিনি করলেন – ৮৩*, ১*, ৪১, ১১৯, ১৩, ২৮, ২৬৯*, ১০৬*, ২৩৯, ৬০, ১০* – ৯৬৯ রান, স্বপ্নের ফর্মে ছিলেন সাড়ে-৩৬-বছরের এই ব্যাটার। অংশীদার হলেন আরেকটা বিশ্ব-রেকর্ডের – হোবার্ট টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চতুর্থ উইকেটে শন মার্শ-এর সঙ্গে ৪৪৯ রানের জুটি করলেন (৮৭.৩ ওভার, ৩৮২ মিনিট), নিজে ২৬৯* (২৮৫ বল, ৪১০ মিনিট, ৪x৩৩) থাকলেন, ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হলেন। তিন-টেস্টের সিরিজে তিনি সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ও হলেন। ওয়েলিংটন টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দলের ১৩১-৩ রানে নেমে দলের ইনিংস ৫৬২/১০ রানে আউট হওয়ার সময় তাঁর রান ২৩৯ (৩৬৪ বল, ৫০৪ মিনিট, ৪x৩০ ও ৬x৩) – চতুর্থ উইকেটে উসমান খোওয়াজা-র সঙ্গে ১৬৮ রানের জুটি করলেন, ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হলেন। ঐ মরশুমে বছরের সেরা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার নির্বাচিত হন (সঙ্গের ছবি)।
কিন্তু তাঁর ‘সুখের দিন’ ফুরিয়ে এল! ২০১৬-১৭ মরশুমে, জুলাই-অগাস্টে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে রঙ্গনা হেরাথ-এর স্পিনে নাজেহাল অবস্থা – তিন টেস্টের ছ’ইনিংসে (চারবার হেরাথ-এর হাতে বধ) মাত্র ১১৮ রান, সর্বোচ্চ ৪৭ – দল হারল ০-৩ ম্যাচে। দেশে ফিরে নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম দু’টেস্টের চার ইনিংসে করলেন ২৭, ১, ০, ২ – রাবাডা-ফিলান্ড্যার-অ্যাবট এঁরা বুঝিয়ে দিলেন যে ৩৭-অতিক্রান্ত ভোগসের দিন শেষ। অতএব ২০১৭ সালের ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তিনি অবসর নেন।
ভোগস-এর ব্যাটিং-এর আরেকটা রেকর্ড উল্লেখ করি যেখানে তিনি শচীন তেন্ডুলকর-কেও ছাড়িয়ে গেছেন – পরপর টেস্ট-ইনিংসে একবারও আউট না হয়ে তিনি ৫০০-রও বেশি রান করেন ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে – ২৬৯*, ১০৬* ২৩৯ – পরপর তিন ইনিংসে। তেন্ডুলকর ২০০৪ সালের মার্চ মাসে করেছিলেন ৪৯৫ রান – ২৪১*, ৬০*, ১৯৪* – যেটা ছাড়িয়ে যান ভোগস তাঁর ঐ ২৩৯ রনের ইনিংসটা খেলবার সময়ে।
বিরাট কোহলি-কে বাদ দিলে খুব কম ব্যাটারই আছেন যাঁর তিনধরণের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই ৪৫-র বেশি ব্যাটিং গড়। তবে ভোগস কোহলির তুলনায় অনেক কম ম্যাচ খেলেছেন, সুতরাং এটা বিশেষ বড় ব্যাপার ব’লে মনে করা উচিৎ নয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিরুদ্ধে পাঁচটা টেস্টে চারটে ইনিংস খেলে তাঁর অবিশ্বাস্য গড় – ৫৪২.০০ – অবশ্যই তিনবার অপরাজিত থাকবার সুবাদে। যদিও জেসন হোল্ডার, জেরোম টেলর, কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, ও জোমেল ওয়ারিক্যান এঁদের সম্মিলিত বোলিং আক্রমণ বিশেষ সুবিধের নয়, কিন্তু সে তো ১৯৫৫-৫৬ মরশুমের ভারত-সফরকারী নিউজিল্যান্ড দলেরও প্রায় একইরকম অবস্থা ছিল। তাই বলে তো রায়-মানকড় জুটির ৪১৩ রানের রেকর্ডটা উড়িয়ে দেওয়া যাবেনা! উড়িয়ে দেওয়া যাবে কি ২০০৩-০৪ মরশুমের অস্ট্রেলিয়া-সফরকারী দুর্বল জিম্বাবোয়ে দলের বিরুদ্ধে ম্যাথু হেডেন-এর ৩৮০ রানের রেকর্ডটা!
এটাও মনে করিয়ে দিই যে তাঁর অভিষেক-ইনিংসের ১৩০* বাদ দিলে ভোগস তখনই বড় রান পেয়েছেন যখন দলের অন্য ব্যাটাররাও রান পেয়েছেন এবং দল ভাল অবস্থায় ছিল। এতে অবশ্য তাঁর কোনই হাত ছিলনা, কিন্তু দলের অন্য ব্যাটারদের ব্যর্থতার চাপের মধ্যে বড় ইনিংস তাঁকে খুব কমই গড়তে হয়েছে।
তাই একথা নির্দ্বিধায় বলাই যায় যে ভোগস তাঁর দেরিতে-পাওয়া সীমিতসংখ্যক সুযোগের চমৎকার সদ্ব্যবহার করেছেন। আবার সেইসঙ্গে প্রশ্ন তোলাই যায় যে তাঁর পরিসংখ্যান যেমন বলছে তিনি কি সত্যিই ততটা ভাল ব্যাটার ছিলেন? কিন্তু এটাও মেনে নিতে হবে যে, কি ঘটেছিল তা নিয়েই ইতিহাস লেখা হয়, কি ঘটতে পারত তা নিয়ে নয়। আর সেটা মেনে নিয়েই অ্যাডাম চার্লস ভোগস আজও ‘ডনগড়’-এর নিকটতম প্রতিবেশী, তা কারোর ভাল লাগুক বা না লাগুক।