হাজারের সেরা ১১

একদিনের ক্রিকেটে হাজারতম ম্যাচের পর সেরা একাদশ বা সেরা ষোল তো ভারতীয় ক্রিকেটের মক্কা মুম্বই-এর মুন্নাভাইদের মুখের ভাষায় ‘বনতাইচ হ্যায়’, তাই না?

খুব একটা কঠিন কাজ নয়। যদিও ১৯৭৪ থেকে ২০২২-এর শুরু মানে প্রায় ৪৭ বছরের ইতিহাস। অনেক বিদগ্ধ বিশেষজ্ঞ বেছে নিয়েছেন। একেবারেই বিশেষ-অজ্ঞ হিসাবে চেষ্টা করতে দোষ কী? চেষ্টায় লেগে পড়ে তো দেখা যাচ্ছে, প্রথম এগার বেছে নেওয়াটা আদৌ চাপই নয়!

শুরুতে সৌরভ গাঙ্গুলি আর শচীন তেন্ডুলকার। ভারতের একদিনের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল জুটি। দুজনেই দুর্ধর্ষ ও সফল ব্যাটসম্যান। ডান এবং বাঁহাতি জুটি, ক্রিকেটেতিহাসে প্রাজ্ঞরা যেমন হলে বলে থাকেন আদর্শ। গোলাবারুদ সামলানোর পাশাপাশি নিজেরাও মেরে বলের চামড়া খুলে দিতে পারেন। নাঃ, সৌরভ-শচীনকে নেওয়া নিয়েও যুক্তি সাজাতে বসলে বড় মুশকিল!

ছবি: গুগল

তিনে বিরাট কোহলি সম্পর্কেও একই কথা। বাঁহাতি পেসারদের বিরুদ্ধে আইসিসি প্রতিযোগিতায় তেমন সাফল্য পাননি, ঠিক। কিন্তু সবসময় যে তেমনই হতে হবে, কে বলেছে? আর ইংরেজ নেভিল কার্ডাসকে নিয়ে যতই বুকে ব্যথা থাকুক না কেন, স্কোরবোর্ড কখনও মিথ্যে বলে না, নিঃসন্দেহ। তাঁকে সরিয়ে একদিনের দলে তিনে জায়গা নিতে পারেন, ভারতে কাউকে পাওয়া যায়নি।

চারে বিতর্কিত পছন্দ মহম্মদ আজহারউদ্দিন। গত শতাব্দীর আট ও নয়ের দশকে যখন স্ট্রাইক রেট নিয়ে এত মাতামাতি ছিল না, আজহার বেশিরভাগ সময়ই রান তুলতেন বল-প্রতি বা কাছাকাছি। আজহার এক সময় একদিনের ক্রিকেটে ৬২ বলে দ্রুততম শতরানের মালিক ছিলেন। মনে রাখবেন, ভিভিয়ান রিচার্ডসের দ্রুততম একদিনের শতরান কিন্তু ৭২ বলে। উইকেটের মাঝে দৌড়ে সমসাময়িক ক্রিকেটারদের মধ্যে কপিলদেব ছাড়া আর কেউই পাল্লা দিতে পারতেন না। সেই সময় যখন ভারতীয় দলের ফিল্ডিং নিয়ে প্রবল হাসাহাসি চলত, উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিলেন তিনিই। সুতরাং, চারে হায়দরাবাদির কবজির মোচড়।

পাঁচ এবং ছয়ে অলরাউন্ডার যাঁদের পোশাকি নাম। যুবরাজ সিং এবং কপিলদেব নিখাঞ্জ। দুটি বিশ্বকাপ ভারত জিতেছে, এই দুই ক্রিকেটারের প্রবল প্রতাপে। বল হাতে যুবরাজ খানিকটা পিছিয়ে থাকতে পারেন, ব্যাট হাতে তাঁর চেয়ে বিধ্বংসী আর কে! আর হ্যাঁ, মাফ করবেন, কপিলদেব নিয়ে একটা শব্দও বাজে খরচ করতে পারব না।

ছবি: গুগল

উইকেটকিপার হিসাবে টেস্ট ম্যাচ হলে নিশ্চিতভাবেই না-ভেবে সৈয়দ কিরমানির নাম লিখতাম, একদিনের ম্যাচ বলে বাধ্য হয়েই উইকেটকিপিং দক্ষতার সঙ্গে সমঝোতা করে, মহেন্দ্র সিং ধোনি। সাদা বলে ব্যাটসম্যান হিসাবে অতুলনীয় কিছু ইনিংস, বিশ্বকাপ ফাইনাল ছাড়াও, মনে পড়তে বাধ্য। সঙ্গে ইনিংস শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার দক্ষতা। আউট হতেন কতবার? অপরাজিত থেকে জিতিয়ে-ফেরা আর ধোনি তো সমার্থকই ছিলেন!

ছবি: গুগল

দুজন স্পিনার অনিল কুম্বলে ও হরভজন সিং। দুই পেসার জাভাগাল শ্রীনাথ এবং যশপ্রীত বুমরা। সাতে ধোনি বা পরিস্থিতি বুঝে কপিল, পরের চারজনের কাছ থেকে ব্যাটে রান আশা করা অনুচিত, করবও না। বুমরা আর কপিল শুরু করবেন, তিনে শ্রীনাথ বা অধিনায়ক ও উইকেটের চরিত্র অনুযায়ী। মাঝের ওভারগুলোয় দুই স্পিনার। পাঁচ বিশেষজ্ঞ বোলারের পাশে প্রয়োজনে সিম বোলিং সৌরভের। বাঁহাতি যুবির সঙ্গে লেগ স্পিনার শচীনও। খেলোয়াড় জীবনের শুরুতে আজহারও কিন্তু বল করতেন।

এগার হয়ে গেল। কিন্তু ষোল-য় বাকিরা? দুই ব্যাটসম্যান বীরেন্দ্র শেহবাগ ও রোহিত শর্মা। অলরাউন্ডারের কথা ভাবলে রবীন্দ্র জাদেজা আর দুই অতিরিক্ত পেসার জাহির খান এবং মহম্মদ সামি।

দুজন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক দলে। আর একজন বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরেছিলেন। অধিনায়ক তিনিই যাঁর উত্তরণ ঘটে নেতা হিসাবে আর দলকে নতুন পথে চলতে শেখানোর ক্ষমতা ধরেন। ভারতীয় ক্রিকেটকে মুক্ত করেছিলেন গড়াপেটা ও প্রাদেশিকতার জঞ্জাল থেকে। জয়ের রাস্তায় থাকতে চেয়ে তাঁর চিরকালীন আক্ষেপ ছিল, ‘যদি একটা কপিলদেব পেতাম…’

দেওয়া হল, সৌরভ। কপিলই আপনার সহঅধিনায়ক। বাকিটা এবার আপনার হাতে!