কার্তিকের ব্যাটে স্বপ্ন দেখার সাহস

‌২০১৯–এ দেশের হয়ে শেষ খেলেছিলেন। সময় পেরিয়েছে আরও তিন বছর। তাঁর এখন বয়স কত?‌ ৩৭ ছুঁইছুঁই। কিন্তু মানুষটার কোনও ক্লান্তি নেই। ক্লান্তি নেই স্বপ্ন দেখাতেও। কিছু স্বপ্ন দেখতে, কিছু স্বপ্নের পেছনে ছুটতে অসীম সাহস লাগে। দীনেশ কার্তিকের রক্তে সেই সাহসই প্রবাহিত হয়। চলতি আইপিএলে নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছেন ‘‌ডিকে’‌। শনিবার রাতে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে তাঁর ব্যাটে রানের রোশনাই। তাঁর ব্যাটে সেই স্বপ্ন দেখার সাহস। তাঁর ব্যাটে বিপক্ষ শিবিরে ত্রাসের সঞ্চার। তাঁর ৩৪ বলে অপরাজিত ৬৬ রানের ইনিংসে র‌য়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বাঙ্গালোরের জয়ের ভিত তৈরি। 

এবার মেগা নিলামের আগে কলকাতা নাইট রাইডার্স ছেড়ে দিয়েছিল দীনেশ কার্তিককে। ফাফ ডুপ্লেসি, বিরাট কোহলিদের সংসারে গিয়ে তিনি আরও ঝলমলে। ছ’‌টা ম্যাচে কিপার–ব্যাটারের পারফরমেন্সের দিকে তাকালেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। পাঁচ ম্যাচেই অপরাজিত!‌ ১৪ বলে অপরাজিত ৩২, ৭ বলে অপরাজিত ১৪, ২৩ বলে অপরাজিত ৪৪, ২ বলে অপরাজিত ৭, ১৪ বলে ৩৪, ৩৪ বলে অপরাজিত ৬৬। মোট রান ১৯৭। গড় ১৯৭। স্ট্রাইক রেট ২০৯.‌৫৭!‌ চার মেরেছেন ১৮টা। ছয়ের সংখ্যা ১৪। 

মহেন্দ্র সিং ধোনির আগে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক কার্তিকের। আইপিএলে খেললেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন মাহি। আর শনি–রাতে জয়ের পর ম্যাচের সেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে কার্তিকের গলায় সেই স্বপ্নের অনুরণন, সেই সাহসের দৃপ্ত উচ্চারণ। কী বলেছেন ‘‌ডিকে’‌?‌ ‌‘‌আমার সামনে বিরাট লক্ষ্য। কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমার লক্ষ্য দেশের জন্য বিশেষ কিছু করা। আজকের ইনিংস সেই সফরেরই একটা অংশ। ভারতীয় দলের অংশ হওয়ার জন্য যা যা করার দরকার, আমি তাই করছি।’‌ স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ ভিশন। কোনও সন্দেহ নেই চলতি আইপিএলে কার্তিকের এই ফর্ম অব্যাহত থাকলে চেতন শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় নির্বাচন সমিতি তাঁকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবেই। 

এমন সতীর্থকে নিয়ে আবেগাপ্লুত ডুপ্লেসি। আরসিবি–র নয়া ক্যাপ্টেন দীর্ঘদিন ধরে খেলেছেন চেন্নাই সুপার কিংসে। সামনে থেকে দেখেছেন মাহিকে। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই প্রোটিয়া ক্রিকেটার বলেছেন, ‘‌ধোনির মতোই কার্তিক সফল ফিনিশারের ভূমিকায়।’‌ শনিবার রাতের কথাই ভাবুন। আরসিবি–র ইনিংসে ১২তম ওভারে পঞ্চম উইকেটের পতন। ফিরে গেলেন ম্যাক্সওয়েল। স্কোর বোর্ডে তখন দেখাচ্ছে ৯২/‌৫। ক্রিজে এলেন কার্তিক। শাহবাজকে নিয়ে ঝড় তুলে দিলেন অনায়াস দক্ষতায়। পাল্টা চাপ ফিরিয়ে দিলেন বিপক্ষ শিবিরে। ঠান্ডা মাথায়। কার্তিকের পাঁচটা চার, পাঁচটা ছয়ে তখনই বেঙ্গালুরু পেয়ে গিয়েছিল জয়ের গন্ধ। বিরাট কোহলি বা ‘‌ভিকে’‌ নয়, স্টেডিয়াম তখন মাতোয়ারা ‘‌ডিকে ডিকে’‌ ধ্বনিতে। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম অনুপ্রেরণার নাম এখন দীনেশ কার্তিক।