গ্রুপ লিগে কিছু ম্যাচে হতে হয়েছিল পরাজিত। একটুর জন্য হাত থেকে বেরিয়ে যায় কাঙ্খিত প্রথম ইনিংস লিড। সেই সমস্ত হতাশার কথা সম্পূর্ণভাবে ঝেড়ে ফেলে দুর্দান্ত ভাবে মরশুমে কামব্যাক করেছে ভবানীপুর। একটা সময়ে মোহনবাগানের তোলা ৫৪৫ রান যেমন তাঁরা তাড়া করে জিতেছেন ঠিক তেমনই ফাইনালে প্রায় দুইদিন ব্যাট করে কালীঘাট দলকে সম্পূর্ণভাবে করেছেন পর্যুদস্ত।
আজ সেই ভবানীপুর ক্লাব দলের কোচ আব্দুল মোনায়েম যখন ইডেন গার্ডেন্সে লাঞ্চ করার আমন্ত্রণ জানালেন ঠিক তার পরেই ইডেন গার্ডেন্সে হোম টিমের ড্রেসিংরুমের বাইরের চেয়ারে বসে শুরু হলো ইন্টারভিউ।
প্রশ্ন:- তৃতীয়বার সুপার-লিগ চ্যাম্পিয়ন। কতটা স্পেশাল আপনার কাছে?
আব্দুল মোনায়েম:- স্পেশাল তো অবশ্যই। প্রথম লিগ জয় স্পেশাল ছিল কারণ ওখানে আমরা বুঝি যে আমরা পারি। তারপরে সেটা ধরে রাখতে হয়েছে। একটা জায়গায় ওঠা যায় কিন্তু উঠে সেই জায়গায় থাকা কঠিন এবং সেটা আমরা করতে পেরেছি এবং এর জন্য কৃতিত্ব আমাদের খেলোয়াড়দের। আমরা প্রথম ম্যাচ থেকেই এমনভাবে খেলি যেন চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। হয়তো আমরা কয়েকটা ম্যাচ হেরেছি কিন্তু যেহেতু ক্রিকেট একটা অনিশ্চয়তার খেলা তাই হেরেছি। প্লেয়ারদের ওপর আমাদের বিশ্বাস ছিল এবং আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপে প্লেয়াররা বলছিল যে লিগে আমরা কাম-ব্যাক করবো। লাস্ট চার বছরে তিনবার লিগ জেতা এটা একটা ভালো সাইডের লক্ষণ।
আমি যেটা বলি যে বেঙ্গল খেলা লক্ষ্য হওয়া উচিৎ এবং এক্ষেত্রে আমাদের ১ থেকে ১৮ সবাই বেঙ্গল খেলতে চায়। তুমি দেখো রামন কতো ভালো খেলছে বাংলা খেলে ফিরে। আমাদের কৌশিক ঘোষ ভালো খেলে ফিরলো বাংলা দলে। আমাদের অভিষেক দাস শেষ বারো বছর ধরে ভালো খেলছে। সব মিলিয়ে আমরা খুব ব্যালান্সড সাইড। এটাকে আরো কয়েক বছর ভালো করানোর চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন:- অগ্নিভ পান দুর্দান্ত ১৯৫ রানের ইনিংস খেলল। ইনিংসটি নিয়ে কি বলবেন?
আব্দুল মোনায়েম:- অগ্নিভ পান আমার কাছে ইন্ডিয়া মেটেরিয়াল। ও অনেক বড়ো প্রতিভা এবং ও যে ধরণের ব্যাটিং করে, যে রকম ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটার তাতে আমাকে ও নিখিল হলদিপুরকে মনে করায়। অগ্নিভের অনেক বড়ো জায়গায় ক্রিকেট খেলা উচিৎ এবং আমি আশা করবো ও যেন সেটা পারে। এই ধরণের প্লেয়ার টিমের ব্যালান্স বাড়িয়ে দেয়। এক কথায় দারুণ ক্রিকেটার।
প্রশ্ন:- অভিষেক দাস শেষ বারো বছর দুরন্ত। এই মরশুম খুব অফ। কিভাবে দেখছেন?
আব্দুল মোনায়েম:- এটা মানুষের লাইফে আছে। সব দিন সবার ভালো যায়না এবং এটাই ফার্স্ট টাইম ও এতো খারাপ। তাও ওর ৫০০ রান আছে সব মিলিয়ে এবং এটাই ওর কোয়ালিটির কথা বলে। আজ ভবানীপুর যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তার মুখ্য চরিত্রে অভিষেক দাস। আমাদের হয়ে ৩০০ আছে, টি-টোয়েন্টি ডাবল সেঞ্চুরি আছে। ও খুব হার্ডওয়ার্কিং, ডিসিপ্লিনড প্লেয়ার। একজন স্পোর্টসম্যানের যা থাকার সব ওর মধ্যে আছে।
প্রশ্ন:- আগেরবার মুকেশ কুমারকে ধরে রাখতে পারেননি। এবার রবিকান্ত সিং, অর্ক সরকারের ওপর কতটা ভরসা ছিল আপনার?
আব্দুল মোনায়েম:- অর্ক খুবই প্রতিভাবান। রবিকান্তের একটা খারাপ সময় গেল। অর্কর যে প্রতিভা তাতে ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। ও হ্যাটট্রিক করেছে। কিন্তু চোটের জন্য ফাইনাল খেলতে পারেনি। দুজনেই থাকছে পরের বছর।
এছাড়া আমি দুর্গেশ দুবে আর অলোক প্রতাপ সিংয়ের নাম করবো। দারুন বোলিং করেছে। ইডেনের উইকেট একটু পেসারদের সাহায্য করে এবং ওরা সেখানে দারুন। আমাদের হয়ে অনেক উইকেট ওরা নিয়েছে।
সব মিলিয়ে টিম এফোর্ট।
প্রশ্ন:- দুর্গেশ দুবেকে ভবিষ্যতে বাংলার জার্সিতে দেখছেন?
আব্দুল মোনায়েম:- একদমই। দুর্গেশ একটা অন্য ধরণের বোলার। ওকে যদি একটু বল করিয়ে নেওয়া যায় আর একটু কোচের কাজ আছে। ও কিন্তু একজন ম্যাচ-উইনার।
প্রশ্ন:- অধিনায়ক হিসেবে সন্দীপন দাসকে কেমন দেখলেন?
আব্দুল মোনায়েম:- দুবার লিগ জিতলাম। সন্দীপন দাস দারুন অধিনায়ক। ভালো লিডার। অফ-দ্য- ফিল্ড ও সবাইকে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় চলতে পারে। দ্য জেন্টলম্যান ক্রিকেটার ও ময়দানের। আমার কাছে ভবানীপুরের সৌরভ গাঙ্গুলী হলো সন্দীপন দাস।