কালীঘাটের দল ও সাফল্য নিয়ে সরাসরি কথা বললেন হীরক সেনগুপ্ত।

তিন মরশুম আগে অভিমন্যু ঈশ্বরণ, অভিষেক রমন এবং আরো বেশ কিছু রনজি ট্রফি ক্রিকেটার ও অনুর্ধ-২৩ বাংলা দলের ক্রিকেটার ছিলেন কালীঘাট দলে। একসময় সেই ক্রিকেটাররা বাংলার জার্সিতে খেলতে চলে গেলে সুপার ডিভিশনে ম্যাচ হারতে থাকে কালীঘাট এবং সঙ্গে ছিল আরো কিছু বৃষ্টিবিঘ্নিত কারণ যেখানে জেতা ম্যাচ ও হাতছাড়া হয় তাদের এবং তারা নেমে যায় গ্রুপ-বি তে।
সেইখান থেকে আজ লাল বলের লিগে ৯টি ম্যাচে ৫টি ম্যাচ একদিনে জয় করাই হোক বা ওয়ান-ডে লিগে ফাইনাল খেলা এবং টিটোয়েন্টিতে সেমিফাইনাল খেলা – সবক্ষেত্রেই কালীঘাট হয়েছে দুর্দান্ত সফল। এইক্ষেত্রে আরো একটি কথা খুব উল্লেখযোগ্য যে এই বছর একজনও বর্তমান রঞ্জি ট্রফি ক্রিকেটার নেই দলে, এমনকি নেই কোনো বয়সভিত্তিক বাংলা দলের ক্রিকেটারও।
কি হতে পারে আসল ফ্যাক্টর যেগুলো দলকে এতটা সফল করেছে? মেন্টর ও খেলোয়াড় হীরক সেনগুপ্ত যাদবপুর ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে বললেন “উইলোর উইল”-কে।


হীরক সেনগুপ্ত বললেন “বি-গ্রুপে কোনো রনজি ট্রফি খেলোয়াড় খেলতে আসবেনা এবং আমাদের দলে কোনো বাংলা দলের ক্রিকেটার নেই। তাই আমাদের প্ল্যান ছিল জুলাই মাস থেকে প্র্যাক্টিস শুরু করার।” হীরকবাবু বলছিলেন তিনি প্রথমে চাননি এই দায়িত্ব নিতে, কিন্তু পরে বাবলু (কোলে) স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হন এবং তিনি প্রথমেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন দলকে সুপার-লিগের ফাইনালে তোলার আর সেই কাজে সফল হন তিনি। আজ হীরক সেনগুপ্তর কথায় কালীঘাট ক্লাবে খেলতে এসেছেন অরিত্র চ্যাটার্জী, বিদ্যুৎ অধিকারী, শ্রেয়াংশ ঘোষ, বদুপল্লী অমিত, ঋতম পোড়েল প্রমুখ ক্রিকেটাররা এবং সমগ্র মরশুম ভালো খেলে তাঁরা ভালো জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন কালীঘাটকে।
ক্লাবের সবচেয়ে বড়ো স্তম্ভ বলতে হীরকবাবু বলতে চেয়েছেন বাবলু কোলের কথা। বাবলু কোলে যখন তাঁকে দল তৈরী করতে বলেন তখন দল বানানোর সময়ে যেমন সাহায্য করেছেন সব কাজেই। দলকে তাড়াতাড়ি প্র্যাক্টিসে নামানোই হোক বা দলের জন্য কোনো কিছু দরকারই হোক – সবক্ষেত্রেই পাশে পাওয়া গিয়েছে বাবলু স্যারকে। এছাড়াও আরো একটি বড়ো ব্যাপার হলো খেলোয়াড়দের ওপর কমিটমেন্ট। সেটা আর্থিক দিকেই হোক বা অন্য দিকে, সব সময় পাশে পাওয়া যায় ক্লাবকে। এটাই দলের বাঁধন আরো শক্ত করে। হীরকবাবু বলছিলেন “এই ক্লাব তোমাকে বিশাল কিছু কমিট করবেনা। কিন্তু যেটুকু করবে সেটুকু পূরণ করবে।”
কোচ হিসেবে অনেক বড়ো কাজ করেছেন সঞ্জীব সান্যাল। সতীন্দ্র সিং চলে যাওয়ার পরে যখন কোচ কে হবেন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে কালীঘাট তখন হীরকবাবুর সঙ্গে ফোন মারফত কথা হয় সঞ্জীব সান্যালের এবং এক কথায় কোচ হতে রাজি হয়েছিলেন সঞ্জীব সান্যাল। সঞ্জীববাবু কাজও করেছেন দুর্দান্ত, যেই কাজে কমতি ছিলোনা। সঞ্জীব সান্যাল আসার পরে যে স্তরে প্র্যাক্টিস হয়েছে কালীঘাট ক্লাবে তাকে হীরক সেনগুপ্ত বললেন “স্টেট টিম এর মতো”।
লাল বলের ম্যাচ একদিনে জেতাতে হলে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ হয় বোলারদের ভূমিকা। হীরকবাবু বললেন “ম্যাচ একদিনে জিততে হলে বোলারদেরই জেতাতে হবে এবং আমাদের তাই হয়েছে। প্রীতম চক্রবর্তী, অমিত কুইল্যা, বদুপল্লী অমিত সবাই দুর্দান্ত করেছে। এবং স্পিনাররা কম সুযোগ পেলেও অরিত্র চ্যাটার্জী, মিথিলেশ দাস সবাই খেলেছে ভালো।”
মোহিত রায়, স্বর্ণাভ ঘোষালের মতো জুনিয়র খেলোয়াড়রাও এসেছেন কালীঘাট ক্লাবের হয়ে খেলতে। সেই নিয়ে তিনি বললেন “জুনিয়র খেলোয়াড়রা সবসময় ভালো খেলতে চাইবে এবং ব্যাটিং, ফিল্ডিং, বোলিংয়ে জান লাগিয়ে দেবে। আমি কালীঘাটে খেলেছি জুনিয়র হয়ে, তাই জানি যে এই ক্লাব জুনিয়রদের খুব ব্যাক করে। আজ একজন অচেনা প্লেয়ার এসে কালীঘাট দলের হয়ে সেমি-ফাইনাল খেলছে এটা কিন্তু অনেক বড়ো ব্যাপার। আমরা রিস্ক নিয়েছি ওদেরকে দেখে। আমাদের মনে হয়েছিল যে ওরা পারবে, ওরা পারছেও।”


সেমি-ফাইনাল, ফাইনাল আছে সামনে। কিভাবে তৈরী হবে কালীঘাট ক্লাব? “আমাদের প্রসেস চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মাঝের এই যে ফাঁকা সময় থাকবে আমরা প্র্যাক্টিস চালিয়ে যাবো। কারণ এই গরমে ক্রিকেট খেলার সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার যেটা তোমাকে ফিট হতে হবে এবং মাঠে দাঁড়ানো অভ্যেস করতে হবে। আজ শুভম চ্যাটার্জী দ্বিশতক করেছে মাত্র ১৮টি চার মেরে। বাকিটা সিঙ্গল-ডাবল করেই করেছে কারণ ও ফিট। ফিট থাকলে তবেই তুমি পারবে, যেমন শ্রেয়াংশ ঘোষ পেরেছে, ঋতম পোড়েল পেরেছে। ঋতম আমাদের ওয়ান-ডে জিতিয়েছে অনেক, লিগেও যখন দরকার এসে খেলে দিয়েছে এবং যেভাবে খেলেছে সেটা দুর্দান্ত।”
একসময় কালীঘাটকে কেউ সাদা বলের টিম হিসেবে ভালো বলেনি কিন্তু কালীঘাট দল দেখিয়ে দিয়েছে যে তারাও পারে। হীরক সেনগুপ্ত বলছিলেন দলটির দুটি সাদা বলের টুর্নামেন্টের শেষ দিন অবধি খেলার কথা যেটা বেশ প্রশংসাযোগ্য। এখন বাকি লিগ সেমি-ফাইনাল এবং ফাইনাল। সেমি-ফাইনালে প্রতিপক্ষ আবার ইস্টবেঙ্গল। বাকি দুটি টুর্নামেন্টে নক-আউট ম্যাচে কালীঘাট পরাজিত হয়েছিল এই দলের কাছেই। এখন সেই জায়গা থেকে কতোটা ফিরে আসতে পারে সেটাই দ্রষ্টব্য।
সুপার-লিগ থেকে অবনমিত হয়ে ফিরে এসে লিগ-চ্যাম্পিয়ন হলে কিন্তু তার চেয়ে বড় ফিরে আসা আর কিছু হবেনা।

ছবি : হীরক সেনগুপ্ত