অভিষেকে রবি বিশনোই ভুলে যেতে চাইবেন শুধু নিকোলাস পুরনের ক্যাচটা। ধরলেন লং অফ বাউন্ডারিতে। একপা-দুপা পিছিয়ে যেতেই সর্বনাশ! বল হাতে থাকলেও পায়ে লেগে গেল ইডেনের বর্ধিত সীমানার দড়ি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন ১ উইকেটে ৪৪, সপ্তম ওভারের প্রথম বল। পুরন সেই সময় আউট মানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেড়শো পেরনো মুশকিল। তবে তা না হওয়া সত্ত্বেও, ভারতের ছয় উইকেটে সহজ জয় প্রত্যাশিতই।
রোহিত শর্মা আর ইডেনের প্রেম কাহিনী মহম্মদ আজহারউদ্দিন আর ভিভিএস লক্ষ্ণণকে মনে করিয়ে দেওয়ার মতোই। টেস্ট অভিষেকে ১৭৭, একদিনে ২৬৪ তো রূপকথাই। ইডেন, এমনকি, আইপিএল-এও ফেরায় না রোহিতকে! তাই টিটোয়েন্টি সিরিজও ৬ উইকেটে সহজে জিতে শুরু করল রোহিতের ভারত।
শিশিরের কারণে টসে জেতা জরুরি ছিল। জিতলেন রোহিত। আর মাঠে নামার আগে ২০২০ অনূর্ধ্ব১৯ বিশ্বকাপে রানার্স ভারতের অন্যতম সেরা পারফরমার রবি বিশনোই-এর হাতে টিটোয়েন্টি অভিষেকের টুপি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিলেন, টুপিটা তুলে দিলেন আর এক লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহল। হয়ত একা রোহিতেরই সিদ্ধান্ত নয়, রাহুল দ্রাবিড়ের ভূমিকাও নিশ্চয়ই ছিল।
একুশের লেগ স্পিনারের চার ওভারে ১৭ রানে দু-উইকেট, দুটিই আবার এক ওভারে। তার চেয়েও বড় হয়ত ২৪-এর মধ্যে ১৭টি বল ডট। ৬ ওয়াইড বলের সমস্যা ধরে রাখল স্কোরবোর্ড। বয়স এবং অভিজ্ঞতায় যা কমবে, নিশ্চিত।
ভারত তত আমল দেয়নি প্রমাণ দল নির্বাচনেই। একদিনের সিরিজে প্রসিধ কৃষ্ণ সেরা হলেও টিটোয়েন্টিতে সুযোগ পাননি। রোহিতরা নেমেছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার, দীপক চহার ও হর্ষল প্যাটেলের জোরে বোলিং-এর ভরসায়। অস্ট্রেলিয়ায় বছর-শেষের টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ মাথায় রেখে, সবাইকে দেখে নেওয়ার ইচ্ছেডানায় ভর করে। পরীক্ষাগুলো এমন দলের বিরুদ্ধে না করলে আর কবেই বা করবেন? শুরুতে কাইল মেয়ার্সের ৩১ একটু চেপে ফেলেছিল। কিন্তু চহাল তাঁকে ফেরানোর পর পুরনের একাকী লড়াই (৪৩ বলে ৬১, পাঁচটা ছয়, চার বাউন্ডারি) খানিকটা সহযোগিতা পেয়েছিল শেষে অধিনায়ক এবং সুস্থ পোলার্ডের ব্যাটে, ১৯ বলে ২৪ অপরাজিত থেকে ফেরেন যিনি। সঙ্গে তিন ভারতীয় ক্রিকেটারকে আহত করেও! তাঁর জোরালো শট থেকে হাত ঠিক সময়ে সরাতে না পারার কারণে।
ভারতীয় ইনিংস একটু চাপে পড়েছিল কি? যথাক্রমে ৯৩ ও ৯৫ রানে ইশান ও বিরাট আউট হওয়ার পর, ১১৪য় চতুর্থ উইকেট বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানের, অত্যন্ত কদর্য ভঙ্গিতে। সম্প্রচারকারী সংস্থার ক্যামেরা সঙ্গে সঙ্গেই ধরল রাহুল দ্রাবিড়কে, একমনে খাতায় নোট নিচ্ছিলেন। কী লিখলেন, কী বলবেন পরে, জানতে মন চাইতেই পারে। কিন্তু উপায় নেই জৈবসুরক্ষার বলয় থাকায়। সূর্যকুমার যাদব (৩৪) ও বেঙ্কটেশ আয়ার (২৪) অপরাজিত থেকে ২৬ বলে ৪৮ রানের জুটিতে ৬ উইকেটে জিতিয়ে ফেরালেন ভারতকে। তিন ম্যাচের সিরিজ আপাতত এক ম্যাচের পর ১-০ এগিয়ে ভারত।
১৯ বলে ৪০, চারটি চার ও তিনটি ছয়ে সাজানো ইনিংস খেলে ভারত-অধিনায়ক যখন ফিরছেন, দর্শকশূন্য গ্যালারি থেকেও শব্দ শ্রুতিগোচর! আসলে, সিএবি সদস্যদের থাকার অনুমতি ছিল ক্লাব হাউসের আপার টিয়ারে। কিন্তু বিরাট কোহলি আপাতত রানের রানওয়ে-র বাইরে থাকতেই পছন্দ করছেন। ১৩ বলে ১৭ শুনতে ভাল, ২০ ওভারের ক্রিকেটে তো বটেই। তবে, নামটা কোহলি বলেই কুড়িতেও বিরাট রান দেখার আশা থাকে। বিপক্ষের বোলিং আহামরি না হলে সেই কুঁড়িতে আশার জল পড়ে। কিন্তু সাদা বলে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের ব্যাটে এখন রানের দেখা নাই রে! অধিনায়ক অবশ্য বলেই দিয়েছিলেন, বিরাটের ব্যাটে রান না-থাকার জন্য দোষী একমাত্র মিডিয়াই। তাই, এ ব্যাপারে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টাই ঠিক। এতগুলো শব্দ নেহাত বাজে খরচের ঝুলিতে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ — ১৫৭/৭, ২০ ওভারে (পুরন ৬১, মেয়ার্স ৩১, বিশনোই ১৭/২)
ভারত — ১৬২/৪ (রোহিত ৪০, সূর্য ৩৪*, চেজ ২/১৪)