অভিষেক টেস্টের ক্ষুধার্ত স্পিনারঃ প্রথমদিন মধ্যাহ্নভোজের আগেই পাঁচ শিকার

গতকালই মুলতানে শুরু হয়েছে ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তানের দ্বিতীয় টেস্ট। আর প্রথম দিনেই চব্বিশ-পেরোনো নবাগত এক পাক লেগ-স্পিনার তাঁর অভিষেক টেস্টে একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। ‘জুম্মাবার’-এর দীর্ঘায়িত প্রাক-মধ্যাহ্নভোজ পর্বেই তিনি পাঁচ-পাঁচটা উইকেট নিয়ে ফেলেছেন!

তিন-টেস্টের সিরিজে ১-০ এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় টেস্ট টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথমদিন মধাাহ্নভোজের বিরতির সময় মারমুখী ইংল্যান্ড করেছিল ১৮০ রান – অপরাজিত ছিলেন ইংরেজ অধিনায়ক বেন স্টোকস (১৪*) ও স্পিনার-অলরাউন্ডার উইল জ্যাকস (০*) – সাজঘরে ফিরে গেছিলেন ওপেনারদ্বয় জাক ক্রলি (১৯) ও বেন ডাকেট (৬৩), ব্যাটার-উইকেটরক্ষক অলি পোপ (৬০), অভিজ্ঞ-যোদ্ধা জো রুট (৮) এবং তরুণ-তুর্কি হ্যারি ব্রুক (৯) – আর সেই সঙ্গে হারিয়েছিল পাঁচটা উইকেট। এই পাঁচখানা উইকেটই (৫-৭০) পকেটস্থ করেছিলেন টেস্ট-অভিষেককারী আব্রার আহমেদ, যাঁকে তাঁর বন্ধুরা ডাকেন ‘হ্যারি পটার’ নামে। কেন? এই নিচের ছবিটা দেখলেই বুঝে যাবেন!

মধাাহ্নভোজের বিরতির বেশ কিছুক্ষণ পর ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয় ৫২তম ওভারে, ২৮১ রানে। ইনিংসের (ম্যাচেরও বটে) নবম ওভারে বল করতে এসে জীবনের প্রথম টেস্ট-ওভারেই ক্রলি-কে বোল্ড-আউট ক’রে ফিরিয়ে-দেওয়া আব্রার ইনিংস শেষ করেন ২২-১-১১৪-৭ দিয়ে – ‘পটার’-সুলভ জাদু বলাই যেতে পারে।

টেস্ট-অভিষেকে পাঁচ-বা-তার-বেশি উইকেট নেওয়া ত্রয়োদশ পাক বোলার হলেন আব্রার। আগের ১২ জনের মধ্যে আছেন ওয়াহাব রিয়াজ, যিনি ২০১০ সালের ওভাল টেস্টে ইংলাান্ডেরই বিরুদ্ধে অভিষেক-টেস্টের প্রথম দিনেই (১৮ই অগাস্ট) পাঁচ উইকেট (১৮-৬-৬৩-৫) নিয়েছিলেন, ইংল্যান্ড ইনিংস শেষ করেছিল ৬২.৩ ওভারে ২৩৩ রান তুলে। তবে ওয়াহাব ছিলেন পেসার এবং ওভালের সেই ম্যাচে মধাাহ্নভোজের বিরতির সময় ইংল্যান্ডের রান ছিল ২৪ ওভারে ৭০/৫, যার ম্ধ্যে তিনি নিয়েছিলেন তিনটে উইকেট  – অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, জোনাথন ট্রট ও কেভিন পিটারসেন। সেই ম্যাচ পাকিস্তান জেতে চার উইকেটে। 

আন্তর্জাতিক-ক্রিকেটে প্রথম খেলতে-নামা স্পিনার হিসেবে ইনিংসের ৩১ ওভারের মধ্যেই আব্রার-র পাঁচ উইকেট দখল করা ওয়াহাব-এর তুলনায় খানিকটা বাড়তি কৃতিত্বের পরিচয় তো বটেই। আর এই কৃতিত্বের সূত্র ধরে একবার আমরা ফিরে তাকাই পেছন-পানে।মনে পড়ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পঞ্চাশের দশকের লর্ড কিচেনারের সেই বিখ্যাত ক্যালিপ্সোর কলি, “Those two little pals of mine, Ramadhin and Valentine”-এর ‘রাম-ভ্যাল’ স্পিন-জুটির চশমাধারী বাঁ-হাতি অর্থোডক্স-স্পিনার অ্যালফ ভ্যালেন্টাইন-এর কথা। তিনি ১৯৫০ সালের ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টে ইংলাান্ডেরই বিরুদ্ধে অভিষেক-টেস্টের প্রথম দিনে (৮ই জুন) মধাাহ্নভোজের বিরতির আগেই ইংল্যান্ডের পাঁচটা উইকেট দখল করেন – বিল এডরিচ, রেগ সিম্পসন, লেন হাটন, হিউ ডগার্ট, নর্ম্যান ইয়ার্ডলি ও টম ডলেরি। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস শেষ করে (১২৮.৩ ওভারে) ৩১২ রানে, ভ্যালেন্টাইন ইনিংস শেষ করেন ৫০-১৪-১০৪-৮ দিয়ে। সঙ্গে বলে রাখি যে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে (১৪১. ওভারে) ২৮৮ রানে, আর ভ্যালেন্টাইন ইনিংস শেষ করেন ৫৬-২২-১০০-৩ দিয়ে। তবে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঐ ম্যাচে ২০২ রানে হেরে যায়। অবশ্য পরের তিনটে টেস্টেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ জেতে আর চার ম্যাচের ঐ সিরিজে ‘ভ্যাল’ ওভারপ্রতি ১.৫৯ রান দিয়ে ৩৩টা উইকেট দখল করেন, গড় ২০.৪২ – অসাধারণ সাফল্য বলতেই হয়।

তবে দেখা যাক আব্রার-এর এই কৃতিত্বের ফসল তাঁর দল কেমনভাবে তুলতে পারে! তাঁর দেশবাসী ওয়াহাব-এর প্রায় সাড়ে-১২ বছর আগেকার সাফল্যের সেই ম্যাচের মতন এই ম্যাচটা জিতে, নাকি যে স্পিনারের কৃতিত্বে তিনি প্রায় সাড়ে-৭২ বছর বাদে ‘ভাগ বসালেন’ সেই ভ্যাল-এর দলের সেবারকার ম্যাচের মতন এই ম্যাচটা হেরে? শেষ পর্যন্ত দলের সাফল্যেই তো ব্যক্তিগত সাফল্যের আসল সার্থকতা, কারণ cricket is a team game.

[তথ্যসূত্র: Website(s):    ESPNCricInfo, HowSTAT! Wisden

      Book(s):    “The West Indies: Fifty Years of Test Cricket” by Tony Cozier (1978 Edition)]