গতকালই মুলতানে শুরু হয়েছে ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তানের দ্বিতীয় টেস্ট। আর প্রথম দিনেই চব্বিশ-পেরোনো নবাগত এক পাক লেগ-স্পিনার তাঁর অভিষেক টেস্টে একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। ‘জুম্মাবার’-এর দীর্ঘায়িত প্রাক-মধ্যাহ্নভোজ পর্বেই তিনি পাঁচ-পাঁচটা উইকেট নিয়ে ফেলেছেন!
তিন-টেস্টের সিরিজে ১-০ এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় টেস্ট টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথমদিন মধাাহ্নভোজের বিরতির সময় মারমুখী ইংল্যান্ড করেছিল ১৮০ রান – অপরাজিত ছিলেন ইংরেজ অধিনায়ক বেন স্টোকস (১৪*) ও স্পিনার-অলরাউন্ডার উইল জ্যাকস (০*) – সাজঘরে ফিরে গেছিলেন ওপেনারদ্বয় জাক ক্রলি (১৯) ও বেন ডাকেট (৬৩), ব্যাটার-উইকেটরক্ষক অলি পোপ (৬০), অভিজ্ঞ-যোদ্ধা জো রুট (৮) এবং তরুণ-তুর্কি হ্যারি ব্রুক (৯) – আর সেই সঙ্গে হারিয়েছিল পাঁচটা উইকেট। এই পাঁচখানা উইকেটই (৫-৭০) পকেটস্থ করেছিলেন টেস্ট-অভিষেককারী আব্রার আহমেদ, যাঁকে তাঁর বন্ধুরা ডাকেন ‘হ্যারি পটার’ নামে। কেন? এই নিচের ছবিটা দেখলেই বুঝে যাবেন!
![](https://willowrwill.files.wordpress.com/2022/12/48_photo-1.jpg?w=800)
মধাাহ্নভোজের বিরতির বেশ কিছুক্ষণ পর ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয় ৫২তম ওভারে, ২৮১ রানে। ইনিংসের (ম্যাচেরও বটে) নবম ওভারে বল করতে এসে জীবনের প্রথম টেস্ট-ওভারেই ক্রলি-কে বোল্ড-আউট ক’রে ফিরিয়ে-দেওয়া আব্রার ইনিংস শেষ করেন ২২-১-১১৪-৭ দিয়ে – ‘পটার’-সুলভ জাদু বলাই যেতে পারে।
টেস্ট-অভিষেকে পাঁচ-বা-তার-বেশি উইকেট নেওয়া ত্রয়োদশ পাক বোলার হলেন আব্রার। আগের ১২ জনের মধ্যে আছেন ওয়াহাব রিয়াজ, যিনি ২০১০ সালের ওভাল টেস্টে ইংলাান্ডেরই বিরুদ্ধে অভিষেক-টেস্টের প্রথম দিনেই (১৮ই অগাস্ট) পাঁচ উইকেট (১৮-৬-৬৩-৫) নিয়েছিলেন, ইংল্যান্ড ইনিংস শেষ করেছিল ৬২.৩ ওভারে ২৩৩ রান তুলে। তবে ওয়াহাব ছিলেন পেসার এবং ওভালের সেই ম্যাচে মধাাহ্নভোজের বিরতির সময় ইংল্যান্ডের রান ছিল ২৪ ওভারে ৭০/৫, যার ম্ধ্যে তিনি নিয়েছিলেন তিনটে উইকেট – অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, জোনাথন ট্রট ও কেভিন পিটারসেন। সেই ম্যাচ পাকিস্তান জেতে চার উইকেটে।
![](https://willowrwill.files.wordpress.com/2022/12/48_photo-2.jpg?w=225)
আন্তর্জাতিক-ক্রিকেটে প্রথম খেলতে-নামা স্পিনার হিসেবে ইনিংসের ৩১ ওভারের মধ্যেই আব্রার-র পাঁচ উইকেট দখল করা ওয়াহাব-এর তুলনায় খানিকটা বাড়তি কৃতিত্বের পরিচয় তো বটেই। আর এই কৃতিত্বের সূত্র ধরে একবার আমরা ফিরে তাকাই পেছন-পানে।মনে পড়ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পঞ্চাশের দশকের লর্ড কিচেনারের সেই বিখ্যাত ক্যালিপ্সোর কলি, “Those two little pals of mine, Ramadhin and Valentine”-এর ‘রাম-ভ্যাল’ স্পিন-জুটির চশমাধারী বাঁ-হাতি অর্থোডক্স-স্পিনার অ্যালফ ভ্যালেন্টাইন-এর কথা। তিনি ১৯৫০ সালের ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টে ইংলাান্ডেরই বিরুদ্ধে অভিষেক-টেস্টের প্রথম দিনে (৮ই জুন) মধাাহ্নভোজের বিরতির আগেই ইংল্যান্ডের পাঁচটা উইকেট দখল করেন – বিল এডরিচ, রেগ সিম্পসন, লেন হাটন, হিউ ডগার্ট, নর্ম্যান ইয়ার্ডলি ও টম ডলেরি। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস শেষ করে (১২৮.৩ ওভারে) ৩১২ রানে, ভ্যালেন্টাইন ইনিংস শেষ করেন ৫০-১৪-১০৪-৮ দিয়ে। সঙ্গে বলে রাখি যে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে (১৪১. ওভারে) ২৮৮ রানে, আর ভ্যালেন্টাইন ইনিংস শেষ করেন ৫৬-২২-১০০-৩ দিয়ে। তবে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঐ ম্যাচে ২০২ রানে হেরে যায়। অবশ্য পরের তিনটে টেস্টেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ জেতে আর চার ম্যাচের ঐ সিরিজে ‘ভ্যাল’ ওভারপ্রতি ১.৫৯ রান দিয়ে ৩৩টা উইকেট দখল করেন, গড় ২০.৪২ – অসাধারণ সাফল্য বলতেই হয়।
![](https://willowrwill.files.wordpress.com/2022/12/48_photo-3.jpg?w=491)
তবে দেখা যাক আব্রার-এর এই কৃতিত্বের ফসল তাঁর দল কেমনভাবে তুলতে পারে! তাঁর দেশবাসী ওয়াহাব-এর প্রায় সাড়ে-১২ বছর আগেকার সাফল্যের সেই ম্যাচের মতন এই ম্যাচটা জিতে, নাকি যে স্পিনারের কৃতিত্বে তিনি প্রায় সাড়ে-৭২ বছর বাদে ‘ভাগ বসালেন’ সেই ভ্যাল-এর দলের সেবারকার ম্যাচের মতন এই ম্যাচটা হেরে? শেষ পর্যন্ত দলের সাফল্যেই তো ব্যক্তিগত সাফল্যের আসল সার্থকতা, কারণ cricket is a team game.
[তথ্যসূত্র: Website(s): ESPNCricInfo, HowSTAT! Wisden
Book(s): “The West Indies: Fifty Years of Test Cricket” by Tony Cozier (1978 Edition)]