এতো কটূক্তি কি সত্যিই প্রাপ্য ছিল সুমন্ত গুপ্তর?

১৬ই ফেব্রুয়ারী,২০২৩।
ইডেন গার্ডেন্সে সৌরাষ্ট্রর বিরুদ্ধে রনজি ট্রফির ফাইনালে নেমেছে বাংলা। বিভিন্ন সময়ে ওপেনার বদলের পালা শেষ করে মরশুমের শেষ ম্যাচে দায়িত্ব পড়েছে রামপুরহাটের এক বাঙালির ওপর। ৩২ বছর বয়সে রনজি ট্রফি অভিষেক করতে নেমে ম্যাচটা একদমই ভালো হলোনা তাঁর। প্রথম দিনের প্রথম বলে জয়দেব উনাদকাতকে একদম ব্যাটের মাঝখানে খেলে সিঙ্গেল নিলেও পরের ওভারে চেতন সাকারিয়া পরাজিত করলেন তাঁকে। দ্বিতীয় ইনিংসেও নামের পাশে সেই ১রান এবং ঘাতকের নাম সেই চেতন সাকারিয়া।


এরপর শুরু হয় সমালোচনা। প্রথমে গ্যালারি, তারপর মাঠের বাইরে এবং সেই সমালোচনার বাঁধ এতটাই ভেঙে যায় যে এক ক্রিকেটারকে লাইভ ইন্টারভিউতে জনৈক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “কিভাবে রান না করে দলে এলেন সুমন্ত গুপ্ত?”
আসলে কি ব্যাপারটা সত্যিই তাই? কোনোরকম রান না করেই কি তাঁর জন্য খুলেছে বাংলা দলের দরজা? চলতি মরশুমের সুপার লিগের রান সংগ্রাহকদের লিস্ট খুললে দেখা যাবে সেই লিস্টে ১০ ইনিংসে ৪৭০ রান করে চতুর্থ স্থান দখল করেছেন সুমন্ত। তাঁর আগে রয়েছেন অভিষেক রমণ(৫৩৩), সন্দীপন দাস(৫০৩) এবং শুভঙ্কর বল(৪৯৩)। মরশুম শুরু করেছিলেন পাইকপাড়ার বিরুদ্ধে দেশবন্ধু পার্কে একটি ২১১ রানের ইনিংস খেলে এবং সিএবির সুপার লিগ খেলায় এই মরশুমে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির একটি তাঁর(একটি শুভঙ্কর বলের)। শুধু এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। গত মরশুমের সিএবি লিগে ৩৫১ রান করে পাঁচ নম্বর জায়গায় ছিলেন সুমন্ত, মরশুমে লাল বলে করেন মোট ৪৬৩ রান।


করোনার কারণে এক বছর ময়দানে বন্ধ ছিল লাল বলের ক্রিকেট। তাঁর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ সালে যখন বাংলা দলে তিনি ছিলেন না, সেই মরশুমে সিএবির লিগে ৪টি সেঞ্চুরি এবং সর্বোচ্চ ১৬৭ রান নিয়ে মোট ৭১৯ রান করেছিলেন বীরভূমের বিট্টু। যা ছিল জয়জিৎ বসু(৭৭৮) এবং অভিষেক দাসের(৭৩৩) পর তৃতীয় সর্বোচ্চ। তার ঠিক আগের বছর সবুজ-মেরুন জার্সিতে বেশ অসাধারণ খেলেছিলেন সুমন্ত। ওই বছর সিএবি লিগে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রান করেছিলেন তিনি এবং সেই সঙ্গে মোহনবাগান ক্লাবের সর্বোচ্চ রান স্কোরারও ছিলেন(৫৫৯ রান)।

নিছক এই স্ট্যাটই বলে দেয় বিগত কিছু বছর ধরে অসাধারণ ব্যাটিংই তাঁর জন্য খুলে দিয়েছে বাংলা দলের দরজা। একসময় মাত্র ১৬ বছর বয়সে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিংয়ের হয়ে রেলেগেশন ম্যাচে জর্জ টেলিগ্রাফ দলের হয়ে সেঞ্চুরি করে নজর কেড়েছিলেন সুমন্ত। একটা ছোট মেসবাড়িতে কিছু লরিচালকের সঙ্গে থাকতেন বাবার সঙ্গে। সেই জায়গা থেকে খেলেছেন বিজয় হাজারে ট্রফি, আজ হয়েছে ইন্ডিয়া পোস্টে চাকরি,নিউটাউনের বাড়ি, ব্যক্তিগত গাড়ি। একেবারে শিকড় থেকে উঠে এসে এতদূর যাওয়া সহজ ছিল না। সেটাই করে দেখিয়েছেন সুমন্ত।

রনজি ট্রফি ফাইনালে তাঁকে খেলতে হয় ওপেনিংয়ে। ক্রিকেট-জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই তাঁকে খেলতে হয়নি চার নম্বরের আগে। খুবই কম ইনিংসে খেলেছেন তিন নম্বরে। সেইখান থেকে ওপেনিংয়ে জয়দেব উনাদকাত-চেতন সাকারিয়ার সামনে। একেবারে অসম লড়াই হেরে গিয়ে যে কটূক্তির সামনে পড়লেন সুমন্ত, তা হয়তো একেবারে প্রাপ্য নয় তাঁর। ফাইনালে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামার সময় বিপক্ষের ক্রিকেটার শেল্ডন জ্যাকসন তাঁকে অভিবাদন জানিয়েছিলেন ৩২ বছর বয়সে ফার্স্ট ক্লাস অভিষেকের জন্য। ওটাই হয়ে থাক সবচেয়ে বড়ো রসদ।

বাকিটা তো যাঁরা জানার তাঁরা জানেনই।

One comment

Comments are closed.