প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৪টি সেঞ্চুরি সহ ৬৫৭৯ রান আছে তার, সর্বোচ্চ ২১১ অপরাজিত। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেই বোলিংয়ে ২০৫টি উইকেট আছে তার ঝুলিতে, সেরা ২২ রানে ৮ উইকেট। এক ইনিংসে ৮ উইকেট অথবা ডবল সেঞ্চুরি কিংবা দুটোই অর্জন করা অলরাউন্ডার ভারতে খুব কমই আছেন বা ছিলেন। তিনি ছিলেন এক জবরদস্ত ব্যাটসম্যান, সঙ্গে কার্যকরী মিডিয়াম ফাস্ট বোলার, যিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুন ব্যাট ও বল করতেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে, এমনকি ইনিংস শুরুও করেছেন তিনি। লিস্ট এ ক্রিকেটে ১৩৯৮ রান ও ১২২ উইকেট ছিল তার ঝুলিতে।
১৯৭৫-৭৬ সালে শুরু হয়েছিল তার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা। তার আগে বেঙ্গালুরুজাত এই ক্রিকেটার নিয়মিত খেলতেন কর্ণাটক স্কুল, দক্ষিণাঞ্চল স্কুল, কর্ণাটক অনুর্দ্ধ ২২ এবং দক্ষিণাঞ্চল অনুর্দ্ধ ২২ দলের হয়ে। তখন তিনি ছিলেন ব্যাট ও বল, দুয়েতেই ওপেনার। তিনি প্রথম নজরে আসেন ১৯৭৬-৭৭ সালে মইনুদ্দৌল্লা ট্রফিতে সিন্ডিকেট ব্যাংকের হয়ে প্রসন্ন, জয়সীমা, দুরানীর বোলিংসমৃদ্ধ ইউ ফোমের বিরুদ্ধে ১০৪ রান করে। রণজি ট্রফিতে আজীবন কর্ণাটকের হয়ে খেলা তিনি ১৯৯১-৯২ সালে গোয়ার হয়ে রণজি ট্রফিতে খেলে অবসর নেন। ১৯৭৭-৭৮য়ে কেরালার বিরুদ্ধে চিকমাগালুরে রণজি ট্রফিতে তিনি আর সঞ্জয় দেশাই কর্ণাটকের হয়ে প্রথম উইকেটে করেছিলেন অপরাজিত ৪৫১ (৪৫১/০তে ইনিংস ডিক্লেয়ার করা হয়েছিল), যাতে তার অবদান ছিল অপরাজিত ২১১ আর সঞ্জয় দেশাই করেছিলেন অপরাজিত ২১৮, এটা প্রথম উইকেটে রেকর্ড ছিল ১৯৯৪-৯৫ অবধি।
৮ বছরে (নভেম্বর ১৯৭৯ – মার্চ ১৯৮৭) ২৭টি টেস্ট ম্যাচে ৮৩০ রান (সর্বোচ্চ ৮৩ অপরাজিত) ও ৪৭ উইকেট অথবা ৭ বছরে (ডিসেম্বর ১৯৮০ – অক্টোবর ১৯৮৭) ৭৭টি ওডিআই ম্যাচে ৬২৯ রান (সর্বোচ্চ ৫৭) আর ৭৭ উইকেট তাকে চেনায় না। টেস্টে ১১টি ক্যাচ বা ওডিআই-তে ১২টি ক্যাচ যেমন বোঝায় না এই দুর্ধর্ষ ফিল্ডারকে। বেঙ্গালুরুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুনীল গাভাসকারের শেষ টেস্টই ছিল তারও শেষ টেস্ট, যা আজ আর অনেকেরই মনে নেই।
কিন্তু তাকে মনে রেখে দিয়েছে ভারতের আপামর ক্রিকেটপ্রেমী, ১৯৮৩র বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম প্রধান নায়ক হিসেবে।৯-২৫ জুন, এই ১৭টি দিনকে ১৯৮৩র বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের প্রখর গ্রীষ্মকালকে আচমকাই তিনি নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারের বসন্তদিনে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। নিয়েছিলেন সেই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ১৮টি উইকেট, ৮টি ম্যাচের প্রতিটিতেই উইকেট তুলেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল ৬ ম্যাচে ব্যাট করে ৭৩ রান। এবং ২টি ক্যাচসহ চমৎকার ফিল্ডিং। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফিরতি গ্রুপ ম্যাচে চেমসফোর্ডে ৪/২৯ (উড, ইয়ালপ, হুকস আর হোগানের উইকেট) ছিল তার সেরা বোলিং। ১৮৩তে শেষ হয়ে যাওয়া ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ফাইনালের বিরতি সময়ে যখন প্যাভিলিয়নে মিটিংয়ে, তখন দু’জনের কথা তাকে প্রভাবিত করেছিল লড়ে যেতে। কপিলদেবের “যা রান আছে, চলো তাই নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ি” এবং সুনীল গাভাসকারের “কম রানেই ভালো লড়াই দেওয়া যায়, বেশি রান হলে ওরা আমাদের গুঁড়িয়ে দিত”।
যতদিন ভারতে ১৯৮৩র বিশ্বকাপ জয়ের রূপকথা বেঁচে থাকবে, ততদিন মনে থেকে যাবেন ভারতের এই “ইউটিলিটি ক্রিকেটার”, যিনি যখনই ডাক আসত কিছু করার, তখনই সাড়া দিতেন।
১৯৫৫ সালের আজকের তারিখেই জন্মেছিলেন ভারতের ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জেতার অন্যতম কারিগর, ভারতের সেই প্রথম অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার-অলরাউন্ডার।
আজ তার জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন, রজার মাইকেল হামফ্রি বিনি।