জন্মদিনের ক্যালেন্ডার -চতুর্থ পর্ব

টেস্ট ক্রিকেটের ময়দানে পাক-ভারত বা অজি-অ্যাংলোর মতো দু’টি ভিন্ন জাতির প্রতিনিধিত্বের নেপথ্যে সামাজিক কারণটা তাও বোঝা যায়। কিন্তু ক্রিকেট দুনিয়ার একমাত্র পুরুষ হিসেবে প্রথমে ইংলিশ ও পরে ইন্ডিয়া টেস্ট ক্যাপ অর্জন করার নজিরটি একমাত্র পাতৌদির নবাব ইফতিকার আলি খানের দখলেই রয়েছে। অবশ্যই এখানে ক্রিয়াশীল হয়েছিল উচ্চশিক্ষার্থে ইফতিকারের অক্সফোর্ড গমনের বাস্তবতাটুকু। ১৯৩২-৩৩ অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট অভিষেক ঘটানো মানুষটিই আবার বিলেতের মাটিতে ১৯৪৬-এ অধিনায়কত্ব করেন স্বদেশের। দুই দেশের হয়েই ৩-টি করে টেস্ট খেলা ইফতিকারের জন্ম মার্চ ১৬, ১৯১০-এ পাতৌদির প্রাসাদে।

তালিকার পঞ্চম ও ষষ্ঠ নাম দু’টি কপালে তুলে দেবে চোখ। না, অন্য দেশের হয়ে টেস্ট অবশ্যই খেলেননি তাঁরা। তবে ভারতের হয়ে যথাক্রমে ১৬৩ টেস্টে ১৩,২৬৫ ও ১০৩ টেস্টে ৮,৫০৩ রানের অধীশ্বর কর্ণাটকি টপ-অর্ডার ব্যাটার রাহুল দ্রাবিড় (উপরন্তু দস্তানাহীন সাধারণ ফিল্ডার হিসেবে উক্ত ১৬৩ টেস্টে ২০৯-টি ক্যাচ তালুবন্দির নজিরও রয়েছে এই ভদ্রলোকের) ও দিল্লির ওপেনার বীরেন্দ্র শেহবাগ (টেস্ট ক্রিকেটের আসরে দেশের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিয়নের পরিচয়েও আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা যায় এই ভদ্রলোককে) ২০০৫-০৬ মরশুমে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিডনি টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,৭৬৮) প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন আইসিসি বিশ্ব একাদশের। যথাক্রমে জানুয়ারি ১১, ১৯৭৩-এ ইন্দোরে ও অক্টোবর ২০, ১৯৭৮-এ দিল্লিতে জন্ম এঁদের।

প্রসঙ্গত, শেহবাগের আগে অক্টোবরের এই বিশেষ তারিখে যথাক্রমে ১৯৫৪ সনে বোম্বেতে ও ১৯৬৩ সনে পাটিয়ালায় জন্ম ১৯৮২ ইংল্যান্ড সফরে ২ টেস্ট খেলা পেসার সুরেন্দ্র নায়ক ও ১৯৮৩-৮৪ থেকে ১৯৯৮-৯৯ পর্বে ৫১ টেস্ট খেলা ওপেনার নভজ্যোৎ সিং সিধুর।

    মরশুম ১৯৩২। দুনিয়ার ষষ্ঠ টেস্ট-কুলীন জাতি হিসেবে খাস লর্ডসের আঙিনায় আত্মপ্রকাশ ভারতবর্ষের (ক্যালেন্ডারের পাতায় তারিখটি ঘটনাচক্রে ছিল ঠিক সেই ২৫ জুনই)। চোখ বুলিয়ে নেব সেদিনের উদ্বোধনী টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২১৯) দেশের প্রতিনিধিত্ব করা একাদশের ঠিকুজিতে। টেস্ট ক্যাপের ক্রমাঙ্ক অনুযায়ী এঁরা ছিলেন যথাক্রমে ৭ টেস্ট খেলা পেসার অমর সিং (জন্ম ডিসেম্বর ৪, ১৯১০ রাজকোটে), ২ টেস্ট খেলা মিডল-অর্ডার ব্যাটার সোরাবজি কোলা (জন্ম সেপ্টেম্বর ২২, ১৯০২ বোম্বেতে), ৪ টেস্ট খেলা অলরাউন্ডার জাহাঙ্গীর খান (জন্ম ফেব্রুয়ারি ১, ১৯১০ বস্তি গুজানে), ১ টেস্ট খেলা মিডল-অর্ডার ব্যাটার লাল সিং (জন্ম ডিসেম্বর ১৬, ১৯০৯ কুয়ালালামপুরে), ৩ টেস্ট খেলা অলরাউন্ডার নউমুল জাউমুল (জন্ম এপ্রিল ১৭, ১৯০৪ অধুনা পাকিস্তানের করাচিতে), ২ টেস্ট খেলা উইকেটরক্ষক জনার্দন নাভলে (জন্ম ডিসেম্বর ৭, ১৯০২ ফুলগাঁওতে), ৭ টেস্ট খেলা মিডল-অর্ডার ব্যাটার কর্নেল সিকে নাইডু (জন্ম অক্টোবর ৩১, ১৮৯৫ নাগপুরে), ২ টেস্ট খেলা অলরাউন্ডার সৈয়দ নাজির আলি (জন্ম জুন ৮, ১৯০৬ জলন্ধরে), ৬ টেস্ট খেলা পেসার মহম্মদ নিসার (জন্ম অগাস্ট ১, ১৯১০ হোশিয়ারপুরে), ২ টেস্ট খেলা ন্যাটা অলরাউন্ডার ফিরোজ পালিয়া (জন্ম সেপ্টেম্বর ৫, ১৯১০ বোম্বেতে) ও ৭ টেস্ট খেলা মিডল-অর্ডার ব্যাটার মেজর সৈয়দ ওয়াজির আলি (জন্ম সেপ্টেম্বর ১৫, ১৯০৩ জলন্ধরে, সম্পর্কে নাজির আলির সহোদর ভ্রাতা)। 

প্রসঙ্গত লর্ডসের সেই প্রথম দফায় ব্যাট ও বল হাতে দেশের হয়ে ইনিংসের সূচনা করেন যথাক্রমে জনার্দন নাভলে-নউমুল জাউমুল ও মহম্মদ নিসার-অমর সিং জুটি। এবং বল হাতে নিজের (তথা দেশেরও) প্রথম টেস্ট ইনিংসেই পাঁচ উইকেট তুলে নজির গড়েন মহম্মদ নিসার (৫-৯৩)। স্বাধীনতা-উত্তর এক বিস্তীর্ণ প্রহর জুড়ে গতির খরায় ভোগা দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের বিচারে যা কম তাৎপর্যময় ঘটনা ছিল না। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়নকে পেতে কিন্তু ভারতবর্ষকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল পরবর্তী টেস্ট অবধি।

প্রসঙ্গত সরকারি ভাবে ১৯৩২-এর সফরের অধিনায়ক ও সহ অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন যথাক্রমে পোরবন্দরের মহারাজা নটবরসিংজি ভাবসিংজি ও লিম্বডির যুবরাজ কুমার ঘনশ্যামসিংজি দৌলতসিংজি ঝালা। যেহেতু দেশীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সেই পর্বটা তখন অতিবাহিত হচ্ছিল যেকালে ভাবা হত বিদেশ সফরে জাতীয় দলের নেতৃত্বের রাশটা কোনও রাজন্য প্রেক্ষাপটের মানুষের হাতে থাকলেই সব দিক থেকে ভাল হবে। তবে ট্যুর ম্যাচগুলিতে সাহেব পেসারদের শক্তিমত্তার কিছু কিছু পরিচয় পেয়ে টেস্টম্যাচের আগে আগে অধিনায়ক ও সহ অধিনায়ক উভয়ই বুদ্ধিমানের মতো সরে দাঁড়ান প্রথম একাদশ থেকে। উদ্বোধনী টেস্টে দেশের অধিনায়কত্বের দায়িত্বটি বর্তায় সিকে নাইডুর কাঁধে।

    দেখে নেব সেই ঐতিহাসিক টেস্টে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা ভাগ্যবান মানুষগুলির জন্মদিনে আর কারা কারা ভূমিষ্ঠ হলেন ভবিষ্যতে। প্রসঙ্গত সংখ্যাটা সাত। যেহেতু সোরাবজি কোলা, লাল সিং, নউমুল জাউমুল, জনার্দন নাভলে ও ওয়াজির আলির জন্মদিনে পৃথিবীর আলো দেখা হয়নি ভাবীকালের আর কোনও ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটারের। এপ্রিল ১৭, সেপ্টেম্বর ১৫ ও ২২ এবং ডিসেম্বর ৭ ও ১৬ তারিখগুলি সেই হিসেবে নিষ্ফলাই রয়ে গিয়েছে ১৯১০-উত্তরপর্ব থেকে।

    আর বাকি তারিখগুলিতে?

(ক্রমশ)