জন্মদিনের ক্যালেন্ডার- দ্বিতীয় পর্ব

৩১ মে। প্রাক্‌-সৌরভ অধ্যায়ের ভারতীয় ক্রিকেটে প্রভূত সুনাম কুড়োনো দুই বঙ্গসন্তানের জন্মদিন। বিশেষ কিছু নাক্ষত্রিক সংসর্গের বিষয় নাকি? বলটাকে জ্যোতিষীদের কোর্টে ঠেলে দিয়ে আমরা শুধু মনে রাখব ১৯২৬-এ অধুনা বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্ম ১৪ টেস্ট খেলা উইকেটরক্ষক প্রবীর সেনের। এবং পাঁচের দশকভর নতুন বলের বিষ সামলে ৪৩ টেস্ট খেলতে পারা (সেকালের নিরিখে সংখ্যাটা যথেষ্টই) পঙ্কজ রায় ১৯২৮-এ ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন কলকাতায়।

    চোখ রাখা যাক সাদা পোশাকের খেলায় আজ অবধি দেশের প্রতিনিধিত্ব করা অবশিষ্ট একাদশ বাঙালির ঠিকুজিতে।

অক্টোবর ৩, ১৯১১। সাঁইতিরিশ অতিক্রান্ত বয়সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯৪৮-৪৯ বোম্বে (ব্র্যাবোর্ন) টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৩১১) খেলা পেসার শুঁটে ব্যানার্জির জন্ম কলকাতায়।

নভেম্বর ১, ১৯১৯। জন্ম হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯৪৮-৪৯ কলকাতা টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৩০৮) খেলা পেসার মন্টু ব্যানার্জির। উল্লিখিত থাক দু’টি তথ্য। ১৯৭৪-এর এই তারিখেই হায়দরাবাদে জন্ম ১৩৪ টেস্ট খেলা ভিভিএস লক্ষণের। এবং মন্টু ব্যানার্জির সঙ্গেই ইন্ডিয়া ক্যাপ অর্জন করা ২২ টেস্ট খেলা অফস্পিনার গুলাম আমেদও ছিলেন নিজামের শহরেরই মানুষ। জন্ম জুলাই ৪, ১৯২২-এ। দাক্ষিণাত্যের শহরটির সঙ্গে কিছু দৈব নির্ধারিত যোগাযোগ ছিল নাকি বেলেঘাটার বাঙালি পেসারের?

মে ২৩, ১৯২৩। জামশেদপুরে জন্ম ২ টেস্ট খেলা পেসার নীরদরঞ্জন চৌধুরীর। এই দিনে জন্ম এক যাত্রায় তিন ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটারের। তৃতীয় নামটি ১১ টেস্ট খেলা ন্যাটা তামিল ওপেনার উরকেরি রামনের। ১৯৬৫ সনে তৎকালীন মাদ্রাজে পৃথিবীর আলো দেখা যাঁর। দ্বিতীয় নামটি দু’টি ভিন্নতর নেতিবাচক অর্থে খানিক বিশিষ্ট। পরে আসছি সেই প্রসঙ্গে।

অগাস্ট ৩, ১৯৩৯। লখনউতে জন্ম ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯৫৮-৫৯ মাদ্রাজ (কর্পোরেশন) টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৪৬৫) খেলা ওপেনার অপূর্বকুমার সেনগুপ্তর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আজীবন সার্ভিসেসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এই প্রবাসী বঙ্গসন্তান। প্রসঙ্গত, ১৯৫৬ ও ১৯৬০-এর এই তারিখে যথাক্রমে বোম্বে ও কানপুরে জন্ম আটের দশকে ৮ টেস্ট খেলা পেসার বলবিন্দর সিং সাঁধু ও ৫ টেস্ট খেলা অফস্পিনার গোপাল শর্মার।

জুন ৫, ১৯৪৫। জন্ম ছয়ের দশকের শেষলগ্নে ৪ টেস্ট খেলা কুমোরটুলির রায়বাড়ির দ্বিতীয় প্রতিনিধি তথা পঙ্কজ রায়ের ভ্রাতুষ্পুত্র ন্যাটা মিডল-অর্ডার ব্যাটার অম্বর রায়ের।

জানুয়ারি ৩১, ১৯৪৬। কলকাতায় জন্ম ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯-৭০ পর্বে ৪ টেস্ট খেলা পেসার সুব্রত গুহর।

ফেব্রুয়ারি ১০, ১৯৫৭। জন্ম ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৮১-৮২ ঘরোয়া সিরিজে ২ টেস্ট খেলা কুমোরটুলির রায়বাড়ির তৃতীয় প্রতিনিধি তথা পঙ্কজ রায়ের পুত্র ওপেনার প্রণব রায়ের। ১৯০০-র যে তারিখে গুজরাটের পিধারে জন্মেছিলেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৩৩-৩৪ বোম্বে (জিমখানা) টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৩০, ভারতবর্ষের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্ট) খেলা পেসার লাধা রামজি।

ফেব্রুয়ারি ১৩, ১৯৬৯। পাটনায় জন্ম ১৯৯১-৯২ সিডনি টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,১৮১) খেলা পেসার সুব্রত ব্যানার্জির।

জুলাই ৮, ১৯৭২। জন্ম দেশীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অধিনায়ক ১১৩ টেস্ট খেলা ন্যাটা মিডল-অর্ডার ব্যাটার সৌরভ গাঙ্গুলীর।

জুন ৭, ১৯৭৭। কলকাতায় জন্ম মোঙ্গিয়া ও ধোনির মধ্যবর্তী অধ্যায়ে ৮ টেস্ট খেলা উইকেটরক্ষক দীপ দাশগুপ্তর।

অক্টোবর ২৪, ১৯৮৪। শক্তিগড়ে জন্ম ৪০ টেস্ট খেলা উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার। কাঁটায় কাঁটায় অর্ধশতাব্দী অতীতে ১৯৩৪-এর যে তারিখে তৎকালীন বোম্বেতে জন্ম ১৯৫৯ লিডস টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৪৭৬) খেলা ওপেনার অরবিন্দ আপ্তের।

সাদা পোশাকের খেলায় অদ্যাবধি ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্ব করা তিনশো তিন পুরুষের ভিড়ে এমন চার হতভাগ্যের হদিস মেলে ব্যাট হাতে যাঁদের গিয়ে দাঁড়ানো হয়নি বাইশ গজে। প্রত্যেকেই একবার করেই গায়ে চাপাতে পেরেছিলেন জাতীয় দলের জামা। এবং দলীয় প্রয়োজনে প্রতিবারই আগেভাগেই দান ছাড়া হয় ইনিংসের। ঘটনাগুলি ঘটে যথাক্রমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৫২-৫৩ বোম্বে (ব্র্যাবোর্ন) টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৩৫৭), নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৫৫-৫৬ হায়দরাবাদ (ফতে ময়দান) টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৪১৬) ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৯৮২-৮৩ মাদ্রাজ (চিপক) টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৯৩৪)। তিন অকুস্থলে চার হতভাগ্যের দলে যথাক্রমে ছিলেন অলরাউন্ডার হেমন্ত দানি ও উইকেটরক্ষক বিজয় রাজিন্দরনাথ (বোম্বে), পেসার ভেঙ্কটরামন স্বামী (হায়দরাবাদ) এবং লেগস্পিনার রাকেশ শুক্ল (মাদ্রাজ)।

উক্ত তিনশো তিনের ভিড়েই আবার এমন দুই দুর্ভাগা পুরুষের খোঁজও মেলে টেস্ট ক্রিকেটের আসর থেকে যাঁদের অর্জন বলতে স্রেফ টেস্ট ক্যাপটুকুই। নামের পাশে নেই কোনও রান, উইকেট বা ক্যাচের (বা স্টাম্পিং) খতিয়ান। কোনওভাবেই খোলেনি খাতা। এঁরা হলেন পূর্বোক্ত ভেঙ্কটরামন স্বামী ও ১৯৮২-৮৩ পাকিস্তান সফরে লাহোর (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৯৪৭) ও করাচি (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৯৪৮) টেস্ট খেলা তামিল পেসার থিরুমালাই শেখর।

সম্ভবত বোঝা গেল কেন দু’টি ভিন্নতর নেতিবাচক অর্থে বিশিষ্ট স্বামীর নামটি। জীবনের একমাত্র টেস্টে দাত্তু ফাদকারের সঙ্গে বোলিং-এর সূচনা করা এই সার্ভিসেস পেসারের জন্ম মে ২৩, ১৯২৪ তারিখে তৎকালীন কালিকটে (অধুনা কোঝিখোড়)।

প্রসঙ্গত দেখে নেওয়া যাক দেশকে ব্যাটিং পরিষেবা দিতে না পারা বাকি তিনের জন্মদিনগুলি।

(ক্রমশ)