রুকুর ব্যাটে সিংহাসনে বাংলা


সকাল সাড়ে দশটা প্রায়। হিমাচল প্রদেশ বোলাররা তখন রীতিমতো ব্যাঘ্রগর্জন করছেন বাংলার প্রথম পাঁচ ব্যাটারকে ফিরিয়ে। একে একে ফিরে গিয়েছেন কৌশিক ঘোষ, অভিষেক দাস, সুদীপ কুমার ঘরামি, সায়ন শেখর মন্ডল এবং অভিজ্ঞ মনোজ তিওয়ারি। বাংলার স্কোরবোর্ডে তখন ৪৪-৫। ক্রিজে সবে সেট হতে শুরু করেছেন অনুষ্টুপ এবং সদ্য এসেছেন শাহবাজ আহমেদ। ইডেনের সকালের সবুজ উইকেটে আউট হওয়ার সেই চিরাচরিত ভয় যেন সত্যি হয়ে নেমে এসেছে বাংলার ওপর।


ঠিক এমন ‘ক্রাইসিস’ মুহূর্তে যে বাংলার ক্রাইসিস ম্যানই অবতীর্ণ হবেন পরিত্রাতা হিসেবে এটা ছিল ভীষণ প্রত্যাশিত কিন্তু একটা ছোট্ট সন্দেহ যেন ছিল কারণ খেলার নাম ক্রিকেট। সেই সন্দেহটুকু কাটাতে লাগলো মাত্র কয়েকটা ওভার। ব্যক্তিগত ১৭ রান থেকে ২১ রানে পৌঁছতে যে কভার ড্রাইভ মারলেন অনুষ্টুপ, তাতেই যেন লেখা ছিল বাংলার সকল দ্বিধার উত্তর। এরপর ইনিংস এগিয়ে নিয়ে গেলেন অনুষ্টুপ এবং শাহবাজ এবং তা যথেষ্ট স্ট্রোক খেলে। গোটাকয়েক ব্যাকফুট পাঞ্চ এল শাহবাজের থেকে, অনুষ্টুপ মারলেন উইকেটের সবদিকে সবরকম শট এবং সাবলীলভাবেই।
অনুষ্টুপের ইনিংসকে ভাগ করা যায় দুই ভাগে। প্রথম ভাগের রুকু অনেক বেশী যেন পরিত্রাতা এবং সতর্ক। তার এক প্রাক্তন সতীর্থ এই সময় তার ব্যাটিং দেখে রীতিমতো বর্ণনা করছিলেন যে কিভাবে শরীরের বল ছাড়া কোনো বলকে খেলার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তিনি। এইভাবেই ১৫০ বল খেলে প্রথম শ্রেণীর কেরিয়ারে নিজের একাদশ শতক পূর্ণ করেন অনুষ্টুপ। এরপর যদি ইনিংসের দ্বিতীয়ভাগের কথা বলা হয়, তবে অবশ্যই বলতে হবে তার ইম্প্রোভাইজেশন নিয়ে। যে অনুষ্টুপ বাইরের বল খেলছিলেনই না, তিনিই আকাশদীপ আউট হওয়ার পরে কাট-পুলের বন্যা বইয়ে দিলেন। এমনকি অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল স্টেপ আউট করে এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে চার মারলেন অবলীলায়।
একসময় যে দল ছিল ৪৪-৫ স্কোরে, ঠিক প্রথম দিনের শেষে শাহবাজ আহমেদের ৪৪, আকাশদীপের ৩২ এবং শেষদিকে ঈশান পোড়েলের গুরুত্বপূর্ণ অপরাজিত ৬ রান নিয়ে ৩১০-৯।


আজ বাংলার ‘ক্রাইসিস ম্যান’ থেকে গিয়েছেন অপরাজিত। তার পরিসংখ্যা বলছে তিনি পূর্ণ করেছেন কেরিয়ারের দ্বিতীয় সার্ধশতক, সেই সঙ্গে আজকের এই অপরাজিত ১৫৯ তার প্রথম শ্রেণীর কেরিয়ারে এক ইনিংসে করা সর্বোচ্চ রান।
দিনের শেষে ব্যাট উঁচিয়ে নিয়ে ওই ডানহাতি ব্যাটার ফিরছেন, সমান তালে হাততালি দিচ্ছেন টিম ম্যানেজমেন্ট, সতীর্থ থেকে দর্শক, ময়দানের ক্রিকেটাররা বিস্ময়সূচক ভঙ্গিতে বলছেন “কী ব্যাটিং!”- এই সমন্বয় তো বিগত চার বছরের এক চিরন্তন সত্যি। আজ আরও ভীষণভাবে বাস্তব।