অনেকেই বলেন, তাঁর মাপের প্রতিভার সঠিক মূল্যায়ন তাঁর টেস্ট ব্যাটিং রেকর্ডে ধরা নেই। তবু তাঁর টেস্ট ব্যাটিং রেকর্ড যে কোন সাধারণ ব্যাটারের কাছে ঈর্ষণীয়। যা জানায় যে, গায়ানার জর্জটাউনে জীবনের ১ম টেস্টেই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অপরাজিত ১০০ করেছিলেন তিনি। পরের টেস্টেও শতরান ছিল তাঁর। ৯ বছরের টেস্ট কেরিয়ারে ৬৬টি টেস্ট খেলে ১০৯ ইনিংসে ৪৪.৪৩ গড়ে ১২টি শতরান আর ২১টি অর্ধশতরান আছে তাঁর ৪,৩৯৯ রানে (সর্বোচ্চ ১৮৭), ৪টি টেস্ট উইকেট (ইনিংস/ম্যাচ সেরা বোলিং ২/১৬) আর ৫১টি ক্যাচও আছে তাঁর সংগ্রহে। আর ৮ বছরে খেলা ৩১টি ওডিআইতে ২৮টি ইনিংসে ৩৪.৪১ গড়ে (স্ট্রাইক রেট ৬২.১৫) ৬টি অর্ধশতরান ছিল তাঁর ৮২৬ রানের মধ্যে (সর্বোচ্চ ৭৮), ৩টি ওডিআই উইকেট (ইনিংস/ম্যাচ সেরা বোলিং ২/১০) আর ৮টি ওডিআই ক্যাচও আছে তাঁর সংগ্রহে। তিনি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন ২৪ বছর ধরে। ৫০৫টি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ম্যাচ খেলে ৮৩৪ ইনিংসে ৪৩.৬৪ গড়ে ৮৭টি শতরান আর ১৬০টি অর্ধশতরান আছে তাঁর ৩২,৬৫০ রানে (সর্বোচ্চ অপরাজিত ২৪৩)।
ক্রিকেটের চেনা প্রবাদ এই যে এটা এমন একটা খেলা, যেখানে অঙ্ক বারবার হেরে যায় সৌন্দর্যের কাছে। এই বাঁ-হাতি ভদ্রলোকের ব্যাটিং সৌন্দর্যের আলোচনা আজও হয় সোচ্চারে, এই প্রবাদকে সত্যি প্রতিপন্ন করেই। অবর্ণনীয় সেই ব্যাটিং সৌন্দর্যের হাজার হাজার বিশ্বজোড়া পূজারী আজও মনে মনে চেখে নেন সেই পুজোর প্রসাদ, স্মৃতির ব্যালকনিতে বসে।
চুয়াত্তর-পঁচাত্তরের ভারত-ক্যারিবিয়ান সিরিজে ইডেন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিরোধের স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পুরো টিমটাই চন্দ্রাহত না হলে শেষ অবধি ফলাফল কী হতো বলা মুশকিল। চীপকেও পরের টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি রান আউট হতেই তাসের ঘরের মতো ক্যারিবিয়ান দুর্গ ভেঙে পড়েছিল। ওই সিরিজে তিনিই ছিলেন তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী।
লেট সৈয়দ মুস্তাক আলির লেট কাটের গল্প শুনেছি অনেক। ইডেনে এক ভেটারেন্সদের ম্যাচে তার কিছুটা দেখিয়েও ছিলেন তিনি, বড়দের মুখে শোনা। ১৯৭৮-৭৯ সিরিজে আজকের আলোচ্য ব্যাটারের লেট কাটের শিল্প সুষমা সরাসরি প্রত্যক্ষ করাও ছিল সারা জীবনের অভিজ্ঞতা। রিচার্ডস, ফ্রেডেরিকস, লয়েড, গ্রিনিজ, হেনসকে মাথায় রেখেও বলতেই পারি যে রোহন কানহাইয়ের পর আজকের আলোচ্য ক্রিকেট-শিল্পী ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। রিচার্ডস আর গাভাসকারের মত তিনিও কোনদিন হেলমেট পরে ব্যাট করেন নি, সেই লিলি-টমসন-হ্যাডলি-উইলিস-ইমরান যুগেও।
১৯৭৫-এর বিশ্বকাপে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ তাঁর লিলির দশ বলে করা চার ছয়ে উপচে ওঠা ইতিহাসে ঢুকে যাওয়া ৩৫ রান, ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছিল। ওই বিশ্বকাপের একাদশ ম্যাচের বর্ণনা CricketCountry-তে ধরা আছে এইভাবে:-
The climax of this innings has gone down as one of the most breathtaking assaults in the history of the game. Dennis Lillee steamed in from the Vauxhall End, as a last-ditch effort to put Australia back in the game. And Kallicharran launched into him. The faster Lillee bowled, the harder he was hit. The shorter he pitched the further the ball travelled. With his mop of dark hair luxuriantly showing on the bare head, Kallicharran hooked and pulled with a ferocity that belied his small frame. And when Lillee pitched on the off stump, he was creamed through the covers and cut through point. The fast bowler ultimately got his man with a top-edged pull spiralling high in the stratospheric realms before being gobbled up by Ashley Mallett at mid-wicket. But, the 10 previous balls the great fast bowler had sent down to the little left-hander had sealed the issue. They had gone for 4, 4, 4, 4, 4, 1, 4, 6, 0, 4. West Indies won by seven wickets with 14 overs to spare.
মাত্র ৩২ বছরে যবনিকা টেনে দেওয়া তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে নড়বড়ে নব্বইয়ের আটবার আউট হওয়ার রেকর্ড (সমস্ত টেস্ট-ক্রিকেটারদের মধ্যে পঞ্চম) এলইডি বাল্বের মতই জ্বলজ্বল করছে বারোটা সেঞ্চুরির পাশাপাশি। ক্রিকেট পরবর্তী জীবনে আধ্যাত্মিকতার চর্চা করা আলভিন আইজ্যাক কালিচরণ কাল ৭৩ পেরিয়ে গেলেন।
শুভ জন্মদিন। “এই তো জীবন, কালীদা।”