আয়রন গ্লাভস। ডাকনাম ছিল। জেফ টমসন এবং ডেনিস লিলির বলের আগুন মাসের পর মাস নিজের গ্লাভসে নিঃশব্দে তুলে নেওয়া রডনি মার্শ প্রয়াত হলেন ৭৪ বছর বয়সে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রবীণ সমালোচকরা হিমশিম খান অ্যালান নটের সঙ্গে তাঁর তুলনা করার সময়। সেই চিরপরিচিত ইংরেজদের সঙ্গে অস্ট্রেলীয়দের লড়াই। গ্রেগ চ্যাপেল যখন সৌরভ গাঙ্গুলিদের কোচ, তখনই তাঁর কাছে শুনেছিলাম, কত বড় টিম ম্যান ছিলেন এই সদ্য প্রয়াত বিশিষ্ট উইকেটরক্ষক। ১৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনে টেস্টে রান করেছিলেন ৩৬৩৩। ৩টি সেঞ্চুরি–সহ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এডিলেডে যে সেঞ্চুরিটি করেছিলেন, তা অস্ট্রেলীয় উইকেটরক্ষকদের মধ্যে প্রথম।
ব্যক্তিত্ববান, প্রখর বুদ্ধি এবং ভারী চেহারা নিয়েও এনার্জিতে ভরপুর থাকার কারণে পাখির মতো উড়ে যেতে পারতেন উইকেটের পেছনের দু’প্রান্তেই। ডেনিস লিলির বলে এত ক্যাচ ধরেছিলেন যে, তাঁকে কিংবদন্তি স্তরে তুলে নিয়ে গিয়েছিল প্রচারমাধ্যম। কট মার্শ বোল্ড লিলি— এমন ঘটেছিল টেস্ট ক্রিকেটেই ৯৫ বার। কী আশ্চর্য, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার সময়ও কট মার্শ বোল্ড লিলি ঘটেছিল ঠিক ৯৫ বার। কাকতালীয়!
ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার পর ধারাভাষ্য দিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচক হয়েছিলেন। কোচিং করিয়েছেন। এমনকী, ভারতের জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ডিরেক্টর পর্যন্ত হয়েছিলেন। তবে সেরা কাজ হিসেবে অবশ্যই তুলে ধরতে হবে দুবাইয়ে আইসিসি–র ক্রিকেট অ্যাকাডেমির গঠন এবং পাশাপাশি ২৪ উইকেটে নানা ধরনের বোলিংয়ের সামনে ব্যাটিং অনুশীলনের সুযোগ। অসাধারণ বললে কম বলা হয়।
ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার মুহূর্তটা নাটকীয়। ৮৪ সালে হঠাৎই ক্রিকেটকে বিদায় জানান তাঁর দুই বন্ধুকে নিয়ে। একই টেস্টে গ্রেগ চ্যাপেল এবং ডেনিস লিলি চিরতরে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন।
মা চেয়েছিলেন ছেলে হোক পিয়ানোবাদক। কিন্তু মার্শ হয়েছিলেন অসি ক্রিকেটের সম্পদ। ‘অস্ট্রেলিয়া, ইউ লিটল বিউটি!’ গানটি অসি শিবিরে প্রথম শুরু করেছিলেন মার্শই। ক্রিকেটের গরিমা বজায় থাকুক, চেয়েছেন সবসময়। আন্ডার আর্ম বোলিংয়ের জন্য কুখ্যাত গ্রেগ চ্যাপেলকে মার্শ বলেছিলেন, ‘গ্রেগ, প্লিজ ডোন্ট ডু দ্যাট।’
এহেন ক্রিকেটারের প্রয়াণে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট শুধু নয়, ক্রিকেট দুনিয়ায় বড়সড় ফাঁক তৈরি হল। বিয়ার পান করতে পছন্দ করতেন। মৃত্যুর আগেও বিমানবন্দরে নেমে বন্ধুকে ফোন করেছিলেন দ্রুত পানশালায় যাওয়ার জন্য। বিয়ার–পিপাসু হিসেবে বিস্তর নামডাক ছিল। ৭৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ফেরার সময় ডাগ ওয়াল্টার্স শেষ করেছিলেন ৪৪টি বিয়ারের ক্যান। মার্শ থেমেছিলেন ৪৫–এ। সেই রেকর্ড ভেঙে দেন ডেভিড বুন ৮৯ সালে, ৫২টি ক্যান বিমানের আসনে রেখে যে ছবি পরের দিন প্রকাশিত হয়েছিল, তা দেখে মার্শ আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘হেরে গেলাম? এমন জানলে আগের থেকেই ৫৩ ক্যান শেষ করে রাখতাম!’