বিগত কিছুদিন আগে পেয়েছেন আইপিএলের অফার লেটার। আর ঠিক তারপরেই চন্দননগরের প্রচার বিমুখ বাঙালি হয়ে গিয়েছেন হেডলাইন। ম্যাচ পরিচালনার ক্ষেত্রে যেইখানে উচ্চস্তরে বাঙালি খুব একটা দেখা যায়না, সেইখানে এই বছর আইপিএলে ২৯জন আম্পায়ারের মধ্যে একজন হতে চলেছেন অভিজিৎ ভট্টাচাৰ্য।
চলতি বছর আইপিএলে ৪জন বিদেশী,৫জন আন্তর্জাতিক প্যানেলে থাকা ভারতীয় আম্পায়ার এবং ২০জন বিসিসিআই প্যানেলের আম্পায়ারকে নির্বাচিত করে ম্যাচ পরিচালনার ভার দেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে একজন চন্দননগরের অভিজিৎ। কেমন লাগছে? অভিজিৎ বললেন, “নিশ্চয়ই ভালো লাগছে। আমি বেশ কিছুদিন ধরে পারফরমেন্স করছি এবং আজ আমি ডাক পেলাম। হয়তো আমার পারফরমেন্স ওরা দেখেছে।”
ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছেন ইউনিভার্সিটি স্তর এবং কলকাতার ক্লাব ক্রিকেটেও কালীঘাটের মতো বড়ো ক্লাবে খেলেছেন অভিজিৎ। একসময় ছিলেন সাগরময় সেনশর্মা, প্রণব রায়ের সতীর্থ, খেলেছেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা, রণদেব বসুর সঙ্গেও। তারপরে ইংল্যান্ডে ক্লাব ক্রিকেট খেলতেন নিয়মিত। ২০১০ সালে ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে কোচিং এর লেভেল বি লাইসেন্সপ্রাপ্ত হন তিনি। তারপরে আসা আম্পায়ারিং করতে। আম্পায়ারিং এর মতো এই ‘থ্যাংকলেস জব’ কে কিভাবে দেখেন তিনি? কি তাঁর লক্ষ্য? অভিজিৎ ভেবেছেন একটু অন্যভাবে। তিনি বলেন, “আমি যখন খেলতাম, তখন অনেক ভুল সিদ্ধান্ত পেয়েছি। সেই সিদ্ধান্তগুলোকে বাজে সিদ্ধান্ত বলা হয়। আমার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল যতটা ভালো করা যায় এবং যত কম ভুল করা যায়। আমি চেয়েছিলাম কিছু ভালো সিদ্ধান্ত দিতে যা খেলোয়াড়রা কম সময়ের জন্য হলেও পছন্দ করবে।”
তাঁকে নিয়ে উচ্ছাস এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। রিপোর্টার থেকে সিএবি- সবাই উচ্ছসিত তাঁকে নিয়ে। কিন্তু কোনো উত্তাপ নেই তাঁর। তিনি বলছেন, “আমার আরো সহকর্মী বিসিসিআই প্যানেলে আছে, এছাড়া যারা কলকাতা মাঠে অনেকে আছেন। আমি আজকে ভালো আম্পায়ারিং করছি, তাঁর জন্য অনেকের অবদান আছে। ফ্রান্সিস গোমস আমাদের প্রাথমিক পাঠ দেন, আমাকে খুব সাহায্য করেছে।”
আইপিএল বা বিসিসিআইয়ের প্যানেল হয়েছে অনেক পরিবর্তিত এবং বিভিন্ন নতুন নিয়ম সংযোজন, বিয়োজন হয়েছে। অভিজিৎ জানালেন যে আগে চতুর্থ আম্পায়ারের কাজ ছিল কম। কিন্তু এখন চতুর্থ আম্পায়ারকেও থাকতে হবে প্যানেলে। এখন ২৯ জনের প্যানেলে যে কোনো দায়িত্ব পালন করতে হবে। চতুর্থ আম্পায়ার এখন মাঠের আম্পায়ারদের সঙ্গেও থাকবেন যোগসূত্র হিসেবে এবং দুই দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গেও থাকবেন ওই একই রোলে। আগে মাঠের কোনো আম্পায়ার জরুরি কারণে মাঠ থেকে চলে এলে মাঠে গিয়ে আম্পায়ারিং করতে হবে চতুর্থ আম্পায়ারকে। সঙ্গে তিনি টেকনিকাল টিম, তৃতীয় আম্পায়ার সবার সাথেই যোগাযোগ রাখবেন তিনি।
অভিজিৎ ভট্টাচাৰ্য আজ আনন্দিত। তিনি আনন্দিত বাংলার নাম সামনে আনতে পারার জন্য। তিনি বলেন “আমি খুশি যে বাংলা থেকে একজন আম্পায়ার পেয়েছে। এটা একজন হোক কি পাঁচজন- আমি সমান আনন্দ পেতাম। এটা আমার কাছে আনন্দের যে আমার জন্য বাংলার নাম সামনে এসেছে।”
আগামী ৩১শে মার্চ থেকে শুরু বিশ্বব্যাপী ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড়ো উৎসব। তারপরেই দেখা যাবে আম্পায়ারের পোশাকে। হয়তো বা মাঠে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতে, বা তৃতীয় আম্পায়ার হিসেবে তাঁর সিদ্ধান্ত দেখা যাবে রেফারেল টিভিতে। বা চতুর্থ আম্পায়ার হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে।
নিজের আম্পায়ারিং কেরিয়ারের সফলতার পেছনে ধন্যবাদ দেওয়ার লিস্ট বেশ লম্বা অভিজিৎ ভট্টাচার্যর। একে একে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুশান্ত পাঠক, সুব্রত ব্যানার্জি, আলোক ভট্টাচার্য, রাজু মুখার্জি, অচিন্ত্য নন্দী, সত্রাজিত লাহিড়ী, সব্যসাচী সরকার এবং আনিরুদ্ধ ব্যানার্জিকে। সিএবিতে তার আম্পায়রিং সতীর্থ হিসেবে ছিলেন বিসিসিআই আম্পায়ার প্রেমদীপ চ্যাটার্জি, ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী, কৃষ্ণেন্দু পাল, সিএবি আম্পায়ার সঞ্জীব পাণ্ডে, প্রদীপ ঘোষ, সিদ্ধার্থ জাতি, শান্তনু দে। এছাড়াও আলাদা করে অভিজিৎ বলেন প্রসেনজিত ব্যানার্জি বা ময়দানের বালুদার কথা। প্রয়াত আন্তর্জাতিক স্কোরার কৌশিক সাহা এবং অদিপ্ত মুখার্জির কথাও বললেন তিনি। এছাড়াও তাঁকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন প্রাক্তন সিএবি কর্তা বিশ্বরুপ দে এবং প্রাক্তন সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া। কেন্দ্রীয় জিএসটি এবং কাস্টমস অফিস বর্তমানে তার কার্যালয়। সেইখানের দুই বিশিষ্ট অফিসার অরিন্দম রায় ও মাঝহার আলী এবং সম্পূর্ণ অফিসকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও সিএবি ও বিসিসিআইয়ের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ তিনি।
অভিজিৎ ভট্টাচার্য থাকছেন। আইপিএল ২০২৩ সংস্করণে বাংলার নাম উজ্জ্বল করতে।