ঠিক এক বছর আগের প্রতিচ্ছবি। একটা বিশ্বকাপ শেষ, ভারতীয় দল তার ব্যর্থতাকে ঝেড়ে ফেলে শুরু করছে একবছর পরের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। শুনতে অবাক লাগলেও আইসিসির কোষাগারের দিকে খেয়াল রেখে বিশ্বকাপ এখন দুর্গাপুজোর মতোই বার্ষিক উৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছে, শুধু ফরম্যাট আলাদা। কাল বিশ্বকাপের বিসর্জনের পরেই আজ থেকেই ক্রিকেটপ্রেমীরা আইসিসির পঞ্জিকা হাতে বসে গেছেন আগামী বিশ্বকাপের নির্ঘন্ট দেখতে। সেই সঙ্গে দলও প্রস্তুতি সিরিজের প্রাথমিক ধাপ খেলতে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড। শুরু হচ্ছে জোর প্রস্তুতি এবং সেই সঙ্গে পরিকল্পনা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছেই এত প্রস্তুতির ফল কি আবার…?
সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকেই বিশেষজ্ঞরা একটা বিষয়ে সহমত যে সীমিত ওভারের ক্রিকেট মানেই অলরাউন্ডারদের রমরমা। পাঠকগণ তীব্র সমালোচনা করতেই পারেন অতিরিক্ত বাঙালি প্রীতি প্রদর্শন ভেবে, কিন্তু একটা উদাহরণ দেখানোর লোভ সামলাতে পারছি না। বছর দেড় দুই আগে পর্যন্ত যখন টেস্টে ঋদ্ধি নাকি ঋষভ নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে তখন ম্যানেজমেন্ট, বিশেষজ্ঞ এবং নেটিজেনদের একটা বড় অংশের বক্তব্য ছিল যে ঋষভ যেহেতু তুলনায় ভালো ব্যাটার তাই ঋষভ দলে এলে দলের বেশি লাভ হবে। ঋদ্ধি বনাম ঋষভ বিতর্ককে কবর থেকে তুলে না এনেই একটা কথা অনায়াসে বলা যায় যে অবশ্যই এই সিদ্ধান্তের পেছনে একটা যুক্তি ছিল যেটাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায়। টেস্টের মতো একটা স্পেশালিস্ট সর্বস্ব ফরম্যাটে যে ম্যানেজমেন্ট অলরাউন্ড ক্ষমতাসম্পন্ন খেলোয়াড় খেলানোর বিষয়ে জোর দিচ্ছে, সেই একই ম্যানেজমেন্ট ক্রিকেটের যে ফরম্যাটগুলোতে অলরাউন্ডার অনেক বেশি করে প্রয়োজন সেখানে সেই বিষয়ে কেন নজর দিচ্ছে না! সেটা কি শুধুই কিছু বড় নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কায়?
এই মুহূর্তে ভারতের সীমিত ওভারের দল যে নিউক্লিয়াসটার উপর দাঁড়িয়ে আছে, সেটা মোটামুটি এইরকম- রোহিত, বিরাট, হার্দিক, জাদেজা ও বুমরা, এবং পরের বছর বিশ্বকাপ দল এদের ঘিরেই অবর্তীত হবে। লক্ষ্য করে দেখুন এদের মধ্যে দুজন অত্যন্ত চোটপ্রবণ, এই নিশ্চয়তা এখন থেকে কেউ দিতে পারবেন না যে এঁরা পরের বিশ্বকাপে মাঠে নামবেনই। আর এই পাঁচজনের মধ্যে মাত্র দুজন ব্যাটিং বোলিং দুটোই করতে পারেন। এবার খুব তাড়াতাড়ি একটু অতীতে ভারতের সফল দলগুলোর (সীমিত ওভারে) কথা মনে করুন! কিছু করার নেই, ভালো লাগুক বা না লাগুক, পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতেই হলো।
রাহুল এবং ঋষভকে একসঙ্গে প্ৰথম এগারোয় রাখার সত্যি কি কোন কারণ আছে? যদি রাহুলকে এতটাই অপরিহার্য মনে হয় তাহলে ওকে দিয়ে কিপ করানো হোক আর তা না হলে বাদ দিয়ে ওই জায়গায় ঋষভ খেলুক। ফলে তৈরি হওয়া ফাঁকা জায়গায় এমন একজনকে খেলানো হোক যিনি ব্যাটের সঙ্গে বলটাও করতে পারবেন।
কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন উঠবে যে তিনি কে হবেন? দীপক চাহার, ওয়াশিংটন সুন্দর, শাহবাজদের মতো খেলোয়াড়দের শুধুমাত্র পনেরো জনের দলে রেখে বিদেশ ভ্রমণ না করিয়ে ম্যাচ খেলানো হোক। কিন্তু এদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া এবং পরখ করার ব্যাপারে যে ম্যানেজমেন্টের তীব্র অনীহা। যে কারণে তাঁর খেলা গত পাঁচটা ম্যাচে একবারের জন্যও হুডার হাতে বল তুলে দেননি তাঁর অধিনায়ক। অথচ ইতিহাস সাক্ষী যে কোচের আসনে এমন একজন বসে আছেন যাকে ক্রিকেট দুনিয়া আদ্যোপান্ত ব্যাটার হিসেবে চিনলেও কোন এখন অধিনায়ক তার হাতেই প্রয়োজনে বল তুলে দিয়েছিল ম্যাচ ঘোরানোর জন্য এবং তিনি ঘুরিয়েছিলেন।
কোথাও একটা গিয়ে বারবার মনে হয় বর্তমান ম্যানেজমেন্টের এই প্ৰচলিত ছক ভাঙর বিষয়ে প্রচন্ড অনীহা, যেটা হয়তো প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে দলের কাছে। সূচি অনুযায়ী বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ সমেত প্রায় ২৫টা ম্যাচ আছে। আর সেখানে এই ফরম্যাটটাই টিম ম্যানেজমেন্ট আনার চেষ্টা করুক যে প্ৰথম এগারোয় যেন হার্দিক জাদেজা সহ চারজন খেলোয়াড় থাকেন যাঁরা ব্যাট ও বল দুটোই করতে পারে আর রাহুল ঋষভের মধ্যে একজন প্ৰথম এগারোয় সুযোগ পাক। সীমিত ওভারের আধুনিক ক্রিকেট সেটাই সেরা দল যেখানে একটা দল অন্তত ১৫ থেকে ১৬ জনের দল হিসেবে মাঠে আসতে পারে।
প্রায় দশ বছর বড় ট্রফি আসেনি, এই পদ্ধতিতে গিয়ে যদি আরও এক বছর ট্রফি না আসে, না আসুক। কিন্তু এই টেমপ্লেট মেনে চললে, ট্রফি খুব শীঘ্রই আসবে, আসতে বাধ্য।