কটক থেকে কলকাতা, পুরো যাত্রাটা মনে আছে? ‘৯৬ বিশ্বকাপে? প্রকৃত অর্থে সেই প্ৰথম বিশ্বকাপে শচীন শো! আজকের দিনে স্মৃতি রোমন্থন করতে বসলে দেখা যায় এক জিম্বাবোয়ে এবং পাকিস্তান ম্যাচ ছাড়া কোন ম্যাচে তিনি ব্যর্থ হননি। প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ ৫২৩ রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। এরপর? সেই বিশ্বকাপে ভারতের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ছিলেন নভজ্যোত সিং সিধু। তাঁর সংগ্রহ? ১৭৮। তফাতটা বোঝা যাচ্ছে? প্রায় একার কাঁধে টেনেছিলেন পুরো ব্যাটিং ইউনিটকে। আজহার, কাম্বলি একটা করে এবং সিধু দুটো ম্যাচ ছাড়া ব্যর্থ, কিন্তু দল উঠেছিল সেমিফাইনালে। এরপরও শচীন ২০০৩ এবং ২০১১ বিশ্বকাপে প্রচন্ড সফল কিন্তু কোনবারই এইভাবে একা টানতে হয়নি, উল্টোদিক থেকে দুবারই যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছিলেন।
এবারের বিশ্বকাপে ভারতের পরিনতি কী হবে সেটা সময়ই বলবে কিন্তু চলতি বিশ্বকাপে ভারতের হতশ্রী ব্যাটিং কিন্তু ‘৯৬কেই মনে করাচ্ছে, একমাত্র ব্যতিক্রম সূর্য কুমার যাদব যিনি কোহলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করে যাচ্ছেন, ৯৬-এর সঙ্গে এটুকুই যা পার্থক্য। বাকি চিত্রটা? কোহলি যেখানে একা ২২০ রান করেছেন সেখানে রোহিত, রাহুল, পান্ডিয়া এবং ফিনিশার কার্তিক মিলিয়ে সম্মিলিত সংগ্রহ ২১৩! পান্ডিয়া বল হাতে উতরে দিচ্ছেন কিন্তু পাকিস্তান ম্যাচের পর ব্যাট হাতে সাকুল্যে ৭ রান করেছেন, কার্তিকের ফিনিশার-এর ভূমিকা ফিনিশ হওয়ার পথে কিনা সেটা সময়ই বলবে আর রোহিত-রাহুল একটা করে অর্ধশতক করলেও ফর্মের ধারেকাছে নেই। ভাবলে শিউরে উঠতে হচ্ছে, কোহলি যদি ফর্মে না ফিরতেন?
তার উপর দল কার্যত দশজনে খেলছে। দুর্বল নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোটা দুয়েক ওভার ছাড়া অক্ষর প্যাটেলকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, নিছক ফিল্ডারের ভূমিকায় আছেন। এর দায় খানিকটা অধিনায়কের উপরও বর্তায়। অথচ তিনি জাদেজার মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের জায়গায় খেলছেন। সোজা কথায় গ্রূপে যে দুটো কঠিন ম্যাচ ছিল তার একটাতেও এই জায়গার পারফরম্যান্স (অক্ষর এবং হুডা) বলার মতো কিছু নয়। নক আউটের সম্ভাব্য দুটি ম্যাচে এটাও ভারতের জন্য বিশেষ চিন্তার জায়গা হতে চলেছে।
কথায় বলে বিশ্বকাপের মতো বড় প্রতিযোগিতা জিততে গেলে চ্যাম্পিয়ন্স লাক লাগে, যেটা এখনও অবধি ভারতের সঙ্গে আছে বলে মনে হচ্ছে। আর সেই কারণেই সম্ভবত এখনও অবধি বিরাট, সূর্য একই সঙ্গে কোন ম্যাচে ব্যর্থ হননি। বলা বাহুল্য এটা বিরাট ব্যর্থতা। প্রায় পুরো গ্ৰুপ পর্যায়টা বিরাট-সূর্য মিলে টানার পর সম্ভাব্য দুটো নকআউট ম্যাচও তাঁরাই বের করে দেবেন ভাবনাটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যেতে পারে। আর সেই অঘটনের দিনটা রোহিত, রাহুল, হার্দিকরা সামলে দিতো না পারলে কাপ জয়ের স্বপ্ন বোধহয় না দেখাই ভালো। ভুলে যাবেন না, ওই ‘৯৬ বিশ্বকাপেই সবচেয়ে বেশি রান এবং সবচেয়ে বেশি উইকেট যথাক্রমে শচীন ও কুম্বলের ঝুলিতে থাকলেও ড্যাং ড্যাং করে কাপ নিয় গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তাই কাপ স্পর্শ করতে হলে বাকি ব্যাটারের বাড়তি দায়িত্ব খুব প্রয়োজন।