বসন্ত বেলায় ভালোবাসার ক্রিকেট এখন বিশ্বরেকর্ডের গন্ধে ম-ম। চট্টগ্রামের ২২ গজে রূপকথার জয় ছিনিয়ে আনল আমাদের পড়শি বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের দেওয়া মাত্র ২১৬ রানের টার্গেট সামনে রেখে হঠাৎই বাংলাদেশ মাত্র ১২ ওভারে পিছলে অতল খাদে পড়ে যায় ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে। কোভিড-আক্রান্তের মতোই আতঙ্কের শ্বাসকষ্টের ধাক্কা সামলাতে অতঃপর দুই মহারথী আসিফ হোসেন (৯৩ নট আউট) এবং মেহেদি হাসান মিরাজ (৮১ নট আউট) আস্তিন গুটিয়ে শুধু রূপকথার জয় নয়, গড়লেন একদিনের ক্রিকেটে ৭ম উইকেটে ১৭৪ রানের নতুন বিশ্বরেকর্ডও। অবিশ্বাস্য!
এই প্রসঙ্গে জানাই, একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৩৭২ রানের পার্টনারশিপটা আপাতত রয়েছে ক্রিস গেইল (২১৫) এবং মার্লন স্যামুয়েলসের (১৩৩ নট আউট) দখলে। ঘটনাচক্রে, ক্যানবেরায় ২০১৫ সালে, সেও এই ফেব্রুয়ারি মাসেই, জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে সেটাও শুরু হয়েছিল প্রাথমিক ধাক্কা খেয়েই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের শুরুতে দ্বিতীয় বলেই ‘শূন্য’হাতে ফিরেছিলেন ডোয়েন স্মিথ। তারপরে শুরু গেইলের ১৬ ছক্কার দাদাগিরি। আশ্চর্য মিল হচ্ছে, টেস্ট ক্রিকেটেও সর্বোচ্চ ৬২৪ রানের বিশ্বরেকর্ডটা শুরু হয়েছিল গোড়াতেই ধাক্কা হজম করে। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে কলম্বোতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা ১৪ রানেই হারায় সনৎ জয়সূর্য আর উপুল থরঙ্গাকে। ক্রমশ ক্রিজে জমাট ইনিংস নির্মাণের দায়িত্বে নামেন কুমার সঙ্গকারা (২৮৭) আর অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে (৩৭৪) জুটি।
এদিকে মাত্র চারদিন আগেই কলকাতার যাদবপুর ক্যাম্পাসে রঞ্জি ট্রফির প্লেট গ্রুপে মিজোরামের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল বিহারের ২২ বছরের ছেলে সাকিবুল গনি। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে কপিলদেবের সেই অলৌকিক ১৭৫ রানের ইনিংসের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের কোনও ছবি নেই। সেদিন নাকি বিবিসি-র স্ট্রাইক ছিল (দ্বিতীয় আরেকটি মতও আছে)। ভাগ্যিস, যাদবপুরের মাঠে তোলা ভিডিও কিছুটা দেখার সুযোগ পাওয়া গেছে, না হলে অবিশ্বাস্য একটা বিশ্বরেকর্ড সম্পর্কে কোনও ধারণাই তৈরি হত না। ৭১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিহার যখন কিছুটা ব্যাকফুটে, তখন গনি আর বাবুলকুমার (২২৯ নট আউট) চতুর্থ উইকেটে যোগ করল ৫৩৮ রান। বিহার শেষপর্যন্ত ইনিংস ডিক্লেয়ার করে ৬৮৬/৫। কিন্তু এই বিস্ময়কে ছাপিয়ে গেল গনির ব্যাটিং।
মতিহারির এই ছেলেটি কৃষক পরিবারে সাত ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। একটা সময় ক্রিকেট ব্যাট কেনার মতো সামর্থ্য তাদের ছিল না । মায়ের গহনা বন্ধক দিয়ে কেনা ব্যাট নিয়ে জীবনের ‘প্রথম’ প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচ খেলতে নেমেই যাদবপুরের ২২ গজে এক অলৌকিক ৩৪১ রানের ইনিংস খেলে গোটা ক্রিকেট বিশ্বের নজর কাড়ল সাকিবুল। ৪০৫ বলে ২টি ছক্কা আর ৫৬ টা বাউন্ডারিতে সাজিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে আবির্ভাবেই ‘ট্রিপল’ সেঞ্চুরি হাঁকানোর অভিনব কীর্তি গড়ল। এর আগে রঞ্জি ট্রফিতে আবির্ভাবে সর্বোচ্চ রান ছিল মধ্যপ্রদেশের অজয় রোহেরার (২৬৭), ২০১৮ সালে হায়দরাবাদের বিপক্ষে।
ক্রিকেটের নতুন ইতিহাস লেখার জন্য সেলাম রইল সাকিবুলের জন্য।