২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ ক্রিকেটার দম্পতির মাথায় আসে একটি বড় ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্প তৈরী করার এবং সেই মতোই একটি মাঠ দেখেন তারা। মাঠটি বাঁশদ্রোণী মেট্রো, অর্থাৎ মাস্টারদা সূর্য সেন মেট্রো, স্টেশন থেকে দশ মিনিটের হাঁটার দূরত্বে অবস্থিত সম্মিলনী মাঠ নামেই চেনেন স্থানীয় লোকেরা।
মাঠটি প্রাথমিকভাবে ছিল অন্য সাধারণ মাঠের মতোই। এরপর মাঠ নিয়ে কাজ করা শুরু করেন তাঁরা। মাঠটিতে তাঁরা তৈরী করেন ক্রিকেট পিচ। সেই সঙ্গে তাঁরা তৈরী করেন একটি ফার্নিশ-করা অফিস-ঘর যেখানে ইলেকট্রিসিটি, আলো-পাখা সবকিছুর রয়েছে সুব্যবস্থা। এছাড়াও অফিসের ঠিক নিচে রয়েছে পানীয় জলের রিসার্ভয়ার।
খেলার মাঠ এবং প্র্যাক্টিস পিচ সম্পূর্ণ আলাদা। অ্যাকাডেমীর ডিরেক্টর মিঠু পালের কথায় যাতে ম্যাচ চলার সময়ে কারোর প্র্যাক্টিসে বাধা না আসে তাই এই ব্যবস্থা করা। এছাড়াও মাঠে রয়েছে অ্যাস্ট্রোটার্ফ ও অন্যান্য আধুনিক ব্যবস্থা। বর্তমানে অ্যাকাডেমী পরিপূর্ণ ১০০জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে। এই ক্যাম্পের আরো একটি বিশেষত্ব হলো শুধুমাত্র জাতীয় ছুটি ছাড়া বন্ধ থাকেনা এই ক্যাম্প। এমনকি দুর্গাপুজোর সময়েও প্রতিদিন খোলা ছিল এই অ্যাকাডেমী। এই প্রসঙ্গে রাহুল দেব বলেন “হয়তো ২০-২৫ জন স্টুডেন্ট এসেছে, তবে ক্যাম্প খোলাই ছিল। যারা সিরিয়াসলি খেলতে চায় তারা আসে।”
মিঠু পাল বলেন তাঁদের ক্যাম্পে প্র্যাক্টিস হয় দুটি সেশন ধরে। প্রথমটি সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এবং তারপরে দুপুর ২টো থেকে যতক্ষণ আলো না কমে আসছে ততক্ষণ। মিঠু আরো জানান তাঁদের পরিকল্পনা রয়েছে মাঠে আলোর ব্যবস্থা করে যাতে সান্ধ্যকালীন প্র্যাক্টিসও বজায় রাখা যায়। মিঠু আরো বলেন “আমরা একটি ইন্ডোর ক্যাম্প খোলার পরিকল্পনাতেও আছি যাতে বর্ষাকালে প্র্যাক্টিসে বাধা না আসে। বর্ষায় যাতে বাধা না আসে তাই প্র্যাক্টিস উইকেট আমরা লাল সুড়কির করেছি। খুব বেশী বৃষ্টি না পড়লে খুব সমস্যা হয়না।”
অ্যাকাডেমীর কোচ হিসেবে রয়েছেন বাংলা দলের হয়ে রনজি ট্রফি খেলা বাঁহাতি স্পিনার অমিত ব্যানার্জী, তিনি এই ক্যাম্পের স্পিন বোলিং পরামর্শদাতা। এছাড়াও কোচ হিসেবে আছেন অভিজ্ঞ কোচ সমীর কুমার কর যিনি ময়দানে পরিচিত ভাইস্যার নামে। এছাড়াও রয়েছেন জয়ন্ত দেবনাথ, বিজয় খাওরিয়া। অতিথি কোচ হিসেবে আছেন সুমন ব্যানার্জী, সঞ্জয় ভট্টাচাৰ্য এবং রাজীব মুখার্জী, রঞ্জিত নস্কর। কোচ হিসেবে আসেন বাংলার পেসার সায়ন ঘোষ। সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে ক্যাম্পে আসেন পুলিশ এসি দলের খেলোয়াড় অভিজ্ঞ শমীক কর্মকার। রয়েছেন রাহুল মুখার্জী, বিশাল রায়চৌধুরী এবং সৃজিত ঘোষাল, বিক্রমাদিত্য মজুমদার।
আর. ডি. এম. পি ইনস্টিটিউটের লক্ষ্য কি? মিঠু পাল বললেন “আমরা চাই এই ক্যাম্প থেকে বাংলা এবং পরে ভারতীয় দলে খেলা খেলোয়াড় উঠে আসুক এবং তারা ভবিষ্যতে ভালো খেলুক।” মিঠু আরো বলেন যে এই অ্যাকাডেমীর মূল ফোকাস হলো ডিসিপ্লিন। ক্যাম্পের কোচ রাহুল দেব খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই সাতসকালে উঠে শুরু করেন ট্রেনিং এবং সারাদিন ফিটনেস চর্চার পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং।
ক্যাম্পের সিনিয়র খেলোয়াড় ও ব্যাটিং পরামর্শদাতা শমীক কর্মকারের কথায় “জুনিয়র খেলোয়াড়দের জন্য খুব ভালো উদ্যোগ নিয়েছে রাহুলদা (রাহুল দেব)। এখানে ভালো প্র্যাক্টিস, ওয়ান-টু-ওয়ান প্র্যাক্টিস এবং প্রতিটা ছেলে এখানে একটা ভালো প্র্যাক্টিসের মধ্যে দিয়ে যায় তারা। বাচ্চারা এটা এখানে অনেক ছোটো বয়স থেকেই পাচ্ছে বলে এটা খুব ভালো।”
বিসিসিআই স্বীকৃত কোচিং পরীক্ষায় লেভেল ওয়ান পাশ করেছেন দুজনে। এখন তাঁরা চাইছেন তাঁদের ক্যাম্প হোক অনেক বড়ো। আশা রাখাই যায় ভবিষ্যতে দুরন্ত সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাবেন রাহুল-মিঠু।