খেলোয়াড়ি জীবন থেকে কোচিং জীবন- অকপটে পার্থসারথি ভট্টাচাৰ্য


ময়দানে তিনি পরিচিত বাবুল নামে। দীর্ঘ দুই দশক ব্যাপী প্রথম ডিভিশন কেরিয়ারে করেছেন প্রায় ৫০টির বেশি সেঞ্চুরি। এছাড়াও সঞ্জীব সান্যাল, উৎপল চ্যাটার্জী, লক্ষীরতন শুক্লার পাশাপাশি তিনি আরো একজন ক্রিকেটার যিনি কলকাতার তিনটি বড়ো ক্লাবের হয়েই লিগ জিতেছেন। এছাড়াও দ্বিতীয় ডিভিশন লিগ জিতেছেন ভিক্টোরিয়ার হয়ে হাওড়া ইউনিয়নকে হারিয়ে। শিলিগুড়ি থেকে শনিবার সকালে আসতেন কলকাতায় এবং রবিবার রাতে আবার ফিরে যেতেন বাড়িতে। মাঝের সময়টা তিনি থাকতেন প্রণব নন্দীর অধীনে বাংলা অনুর্ধ-১৩ ক্যাম্পে। প্রণব নন্দীকে নিজের শিক্ষাগুরু মানেন পার্থসারথি। বাংলার হয়ে সেই অনুর্ধ-১৯ থেকে সিনিয়র দল- সব স্তরেই ম্যাচ খেলেছেন পার্থসারথি ভট্টাচার্য। এরপরে গতবার তাঁর দায়িত্ব ছিল নির্বাচকের, কিন্তু এবার সেই দায়িত্ব একটু বদলে হয়েছে সহকারী কোচের। প্রণব রায়ের সঙ্গে এবার বাংলা অনুর্ধ-২৫ দলের দায়িত্ব সামলাবেন পার্থসারথি।


কেমন লাগছে এবার কোচ হয়ে? পার্থসারথি প্রথমেই ধন্যবাদ জানালেন সিএবি ও সিএবি প্রেসিডেন্টকে এবং বললেন তিনি ফুচাদাকে(প্রণব রায়) সহযোগিতা করার সম্পূর্ণ চেষ্টা করবেন। সঙ্গে তিনি বললেন “অবশ্যই ওয়ানডে এবং কর্নেল সি. কে নাইডু ট্রফি জেতার চেষ্টা করবো এবং সঙ্গে চেষ্টা করবো যাতে ভালো ক্রিকেটীয় কালচার তৈরী করা যায়।” ক্রিকেটীয় কালচার উন্নতি কিভাবে করা সম্ভব? পার্থসারথি বললেন “আমরা খুব ডিসিপ্লিন্ড ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করবো ভালো ওয়ার্কএথিক নিয়ে। এর সঙ্গে দলের কমতি নিয়ে আমরা বেশী করে কাজ করবো।”
নিজের খেলোয়াড়ি জীবনে মাত্র ১৯ বছর বয়সে যুক্ত হয়েছিলেন স্পোর্টিং ইউনিয়ন দলে। সতীর্থ ছিলেন উৎপল চ্যাটার্জী, রণদেব বসু, মূর্তজা লোধগার, অজয় ভার্মার মতো খেলোয়াড়রা। সেখানে মাত্র একবছর খেলে তারপরে ইস্টবেঙ্গল, কালীঘাট, ভবানীপুর দলে খেলেছেন। ড্রেসিংরুমের আবহাওয়া কোন ক্লাবে খুব ভালো? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন “দেখা যাবে যার সাথে ইস্টবেঙ্গল খেলেছি, তাঁর সাথেই ভবানীপুর খেলেছি। আবার যার সাথে কালীঘাট খেলছি তাঁর সাথেই পরের বছর ইস্টবেঙ্গল খেলছি। আমি ক্রিকেটার হিসেবে কোনো কাঠিন্যের মুখোমুখি হইনি। পাবলিক ক্লাব খেলে ম্যাচ হারলে দুটো কথা হয় কিন্তু যে ম্যাচুরিটি খেলোয়াড়ের আসে তা দারুন।”
টুর্নামেন্ট হিসেবে তাঁর সবচেয়ে পছন্দের হলো লিগ। কেন? বললেন “লিগ এমন একটা খেলা যেখানে ৩৭টা দল অংশ নেয়। সেখানে সবধরণের খেলোয়াড়, সব টিম খেলতে হয়। প্রতিপক্ষ হিসেবে অশোক দিন্দা, শিবশঙ্কর পালও থাকতে পারে আবার কোনো সাধারণ বোলারও থাকতে পারে- সবাইকে হারিয়ে জিতে নিতে হবে।”
ভবানীপুর ২০১৫-১৬ সালে লিগ জেতে এবং ঋত্বিক চ্যাটার্জীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন দলের জয়ে এবং সেখানে নকআউটের সব ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেন পার্থসারথি। কেমন অনুভূতি ছিল? বললেন “একেবারে তিনটে ম্যাচে পরপর হয়েছে এটাই একটু স্পেশাল তবে টিমের কাজে এসেছে রান এতেই আমি খুশি। সেইবছর ভবানীপুরে একটু চ্যালেঞ্জ বেশী ছিল কারণ আমি সেইবছর ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে গেছিলাম। ভবানীপুর-ইস্টবেঙ্গল ফাইনালে ছিল সুতরাং একটা মোটিভেশন ছিল যে যে ক্লাব ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি সেই ক্লাবের বিরুদ্ধে একটা প্রমাণ করার থাকে যে ম্যাচ জেতাতে পারি এবং সেখানে ১৪০ নটআউট ছিলাম।”
পার্থসারথি মনে করেন যে তিনি ক্রিকেটার হিসেবে যে কোনো রোলেই স্বচ্ছন্দ থাকতে পারেন এবং শুধুমাত্র নিজের পছন্দের জায়গা জানাতে পারেন কিন্তু পাবেনই এমন কোনো কথা নেই। বরাবরের লড়াকু ব্যাটার পার্থসারথিকে যখন প্রশ্ন করি যে পিঙ্ক বলে মহম্মদ শামিকে খেলতে কতটা প্ল্যান করেছিলেন তখন সরাসরি তিনি বলেন “তুমি যখন ব্যাট করতে যাচ্ছ তুমি কিন্তু মহম্মদ শামিকে দেখোনা। তুমি জানো যে একটা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সুতরাং বলটা খেলো। অবশ্যই ও বাকিদের থেকে পেস, বাউন্স বেশী ছিল এবং পার্থক্য আলাদা ছিল তবে আলাদা করে কোনো বাড়তি প্রস্তুতি ছিলোনা।”
এতগুলো সেঞ্চুরির মধ্যে কোনটা বেশী স্পেশাল? ইস্টবেঙ্গল-ভবানীপুর লিগ ফাইনালে ১৪০ এবং এছাড়াও লিগ ফাইনাল ডার্বিতে করা একটি সেঞ্চুরিকেও বেছে নিলেন তিনি। এছাড়াও কালীঘাট বনাম দক্ষিণ কলকাতা সংসদ দলের বিরুদ্ধে একটি সেঞ্চুরির কথা বললেন সেখানে প্রতিপক্ষ ৮৫ ওভারে ৪০০ রান তোলে এবং সেখানে প্রথমে অলোকেন্দু লাহিড়ীর সঙ্গে পার্টনারশিপে এবং পরে আটটি উইকেট পড়ার পরে সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জেতানোর ইনিংসকে এগিয়ে রাখলেন তিনি।
রনজি ট্রফিতে তিনি ওপেন করেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে এবং মধ্যপ্রদেশ দলের বিরুদ্ধে করেন হাফসেঞ্চুরিও। সেই বিষয় তিনি বললেন ” তুমি যাকে অনুপ্রেরণা ভেবে এগিয়েছো তাঁর সাথে ব্যাট করা স্পেশাল সবসময়। আমি যে বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন লড়াই করছি, মহারাজদা তো তা নয় বরং উনি খুব সহজে খেলছিলেন। মহারাজদা অবশ্যই অনেক কিছু বলছিলেন যে এটা এইভাবে কর বা প্র্যাক্টিসেও বলতো।”
রনজি ট্রফিতে খেলেছেন মাত্র পাঁচটি ম্যাচ। কেন ম্যাচের সংখ্যা এতো কম? পার্থসারথি একেবারেই নারাজ কাউকে দোষ দিতে, বরং তিনি সামনে তুলে ধরছেন নিজের খামতিই। বললেন “আমি যদি প্রথম দুটো ম্যাচে সেঞ্চুরি পেতাম তবে হয়তো আমাকে কেউ ড্রপ করতে পারতোনা।” সুতরাং সেই আশানুরূপ পারফরমেন্স না হওয়ায় তিনি আর পিছনে ফিরে তাকাতে নারাজ। তিনি বর্তমানে চেষ্টা করছেন সামনের দিকে তাকানোর। সামনের দিকে তাকানো মানে বর্তমানে লড়াই প্রশিক্ষক হিসেবে যেখানে চ্যালেঞ্জ রনজি ট্রফি স্কোয়াডে বাংলাকে আরো খেলোয়াড় দেওয়ার এবং ট্রফি জয় করার।