স্টিভ ওয়া-র আত্মজীবনী বইটার নাম “Out Of My Comfort Zone” – সেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে কেমন করে তাঁর ক্রিকেটীয় জীবনের একাধিক পর্বে তিনি বা তাঁর দল মাঠে যা করতে বা যেভাবে খেলতে বিশেষ অভ্যস্ত ছিলেন না, তেমনভাবে খেলে সাফল্যের মাত্রা, ব্যক্তিগতভাবে বা দলগতভাবে, বাড়িয়ে তুলে খেলোয়াড় বা দল হিসেবে আরো উন্নতি করেছেন। কোনও জাদু দিয়ে নয়, পরিকল্পিত অনুশীলন এবং পরিবর্তিত চিন্তাধারা ও মানসিকতা কাজে লাগিয়ে। এই ‘comfort zone’-এর বাইরে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ঝুঁকিটার মধ্যে দিয়ে না গেলে ক্রমাগত উন্নতি করা যায়না। বিখ্যাত animation ছবি “Kung Fu Panda”-র অন্যতম এক চরিত্র Master Shifu-র কথায়: “If you only do what you can, you will never be more than (what) you are now.”
খটকা লাগছে এই অবধি পড়ে? এটা কী management-সংক্রান্ত কোনও made-easy জাতীয় কিছু জ্ঞান-সংক্ষিপ্তসার! আজ্ঞে না, আজ এই সূত্র ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের এক নাতিদীর্ঘ অথচ গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কময় অধ্যায়ের অল্প কিছু কথা বলি। বহুলপ্রচারিত ও অতিপরিচিত দৃষ্টিভঙ্গীর থেকে একটু সরে গিয়ে খানিকটা অন্যভাবে সেই সময়কালটাকে ফিরে দেখবার খানিক চেষ্টা করি। আলোচ্য ব্যক্তিটিকে নিয়ে কথা উঠলেই, ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে, বিশেষ করে ভারতীয়দের মধ্যে, এক প্রবল মেরুকরণ ঘটে যায়, ‘ভিলেনীকরণ’-এর এক প্রবণতায় তাঁরা আক্রান্ত হন। ব্যক্তিটির নাম গ্রেগরি স্টিফেন চ্যাপেল, সংক্ষেপে গ্রেগ চ্যাপেল।
এই মেরুকরণ প্রবণতা থেকে মুক্ত নন শচীন তেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, ভিভিএস লক্ষ্মণ, হরভজন সিং, জাহির খান, যুবরাজ সিং, বীরেন্দর সেহবাগ এঁদের মতন ধনুর্ধর তারকা-খেলোয়াড়রাও। এঁদের মতে তিনি ছিলেন, এককথায় ‘a poor man-manager’ – এঁদের কয়েকজনের আত্মজীবনী [“Playing It My Way”, “A Century Is Not Enough”, “281 and Beyond”] বা বিভিন্ন সাক্ষাৎকার পড়লেই (বা শুনলেই) এটা স্পষ্ট হয়ে যায়। শচীনের কথায়: “Greg was like a ringmaster who imposed his ideas on the players without showing any signs of being concerned about whether they felt comfortable or not.” এটা অনস্বীকার্য যে ভারতীয় খেলোয়াড়দের মতন একটা বৈচিত্র্যময় (diverse) ও প্রতিভাবান (talented) দলের মধ্যে থেকে ক্রিকেটীয় সেরাটা কিভাবে বের করে আনা যায়, সে ব্যাপারে গ্রেগ চ্যাপেল-এর সম্যক ধারণা ছিলনা। কাকে ‘বাবা-বাছা’ ক’রে বোঝাতে হবে আর কাকে ‘ঠেলে-গুঁতিয়ে’ চালাতে হবে, এই নিয়েও তাঁর সহজাত প্রবৃত্তি (instinct) ছিল সীমিত। অতএব স্বাভাবিকভাবেই তিনি প্রচুর সমালোচিত হয়েছেন।
অথচ দলের অগ্রগণ্য খেলোয়াড়দের মধ্যে আরো কয়েকজন কিন্তু এই প্রসঙ্গে প্রধানত নীরব থেকেছেন, যেমন অনিল কুম্বলে, রাহল দ্রাবিড়, এমএস ধোনি ও সুরেশ রায়না। স্যুইং বোলার হিসেবে তাঁর প্রতিশ্রুতিময় ক্রিকেট-জীবনে সাফল্যের অভাবের জন্য চ্যাপেলকেই মূলত দায়ী করবার প্রচলিত ধারণাকে ইরফান পাঠান একাধিক বার নস্যাৎ করেছেন। যুবরাজ, ধোনি. পাঠান, রায়না এমন কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড়কে চ্যাপেল প্রচুর উৎসাহ ও সমর্থন জোগাতেন। শোনা যায় ধোনির মধ্যে নেতৃত্বের সম্ভাবনা যাঁরা প্রথম নজর করেন, তাঁদের মধ্যে চ্যাপেল অন্যতম।
চ্যাপেলের বছর দুয়েকের প্রশিক্ষণ কালের কিছু ঘটনা ও তথ্য নিয়ে নাড়াচড়া করে দেখা যাক। চ্যাপেল-গাঙ্গুলি দ্বৈরথ নিয়ে অ—নে—ক আলোচনা ও লেখা হয়ে গেছে বিগত দেড় দশকে। ২০০৭ বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের অনেকেই বিস্তর কান্নাকাটি-গালাগালি-রাগারাগি-হাহুতাশ করেছি (কেউ কেউ এখনও মাঝেমধ্যে করে থাকি!) – তাই ঐ চর্বিতচর্বণে আর যাচ্ছিনা। তবে এই ক্রিকেটীয় তথ্যগুলো নিশ্চিতভাবেই ক্রিকেটের খাতায় থেকে যাবে, সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়দের ও ভারতীয় ক্রিকেটের রেকর্ড হিসেবে।
সৌরভ গাঙ্গুলি: ব্যাটিং ফর্ম
২০০৫-এর সেপ্টেম্বরে জিম্বাবোয়ে সফরের সময় চ্যাপেল চেয়েছিলেন গাঙ্গুলি তাঁর অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। ২০০১-এর শুরু থেকে ঐ সময় পর্যন্ত, বাংলাদেশ ও জিম্বাবোয়ে বাদে অন্যসব দেশের বিরুদ্ধে ৬১টা টেস্ট ইনিংসে ৩৪.০১ ছিল গাঙ্গুলি-র ব্যাটিং গড়। ঐ সময়কালে, বাংলাদেশ, জিম্বাবোয়ে ও ICC Associate দেশগুলো (যেমন কেনিয়া, নামিবিয়া, নেদারল্যান্ড, সংযুক্ত আমীরশাহী, ইত্যাদি) বাদে অন্যসব দেশের বিরুদ্ধে ওডিআই-তে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৩০.৭১, স্ট্রাইক-রেট ৭২.৩২ ছিল। ২০০৩-এর শুরু থেকে ধরলে বিশ্বের প্রথম আটটা ওডিআই দলের বিরুদ্ধে ৪৫ ম্যাচে ১,০৭৭ তাঁর মোট রান, ২৫.০৪ গড়, ৬৭.৩৯ স্ট্রাইক-রেট। এতদিন ধরে এই ধরণের ফর্মে-থাকা ব্যাটারকে দলনায়ক রেখে একাদশের একটা স্থায়ী জায়গা আটকে দেওয়া কতখানি ক্রিকেটীয় যুক্তিসঙ্গত হ’ত? গাঙ্গুলি-কে কিছুদিনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে যেতে হ’ল। অপসারণের পদ্ধতিটা যে ঘোর অপ্রীতিকরই ছিল, এটা অনস্বীকার্য। কিন্তু তথ্যগুলোও তো সত্যি।
২০০৬-এর ডিসেম্বরে জোহানেসবার্গ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫১* দিয়ে গৌরবময় প্রত্যাবর্তন থেকে শুরু ক’রে তাঁর টেস্ট-জীবনের শেষ পর্বে ৪৮টা টেস্ট ইনিংসে গাঙ্গুলি ১,৯৯১ রান করেন, ৪৬.৩০ ছিল ব্যাটিং গড়। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিনটে ইনিংসে করা ১২৮ রান ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ছ’টা ইনিংসে করা ৯৬ রান রয়েছে – বাদবাকি ইনিংসগুলোয় বিপক্ষ দল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা, সেখানে গড় ৫২-ছুঁইছুঁই। ২০০৭ সালে ৩০টা ওডিআই ইনিংসে ১,২৪০ মোট রান, ৪৪.২৮ গড়, ৭৩.০২ স্ট্রাইক-রেট। তফাৎটা চোখে পড়ার মতন, তাই তো!
জাহির খান: বোলিং ফর্ম ও ফিটনেস
২০০৩-এর ডিসেম্বরে ব্রিসবেন টেস্টের (প্রথম ইনিংসে তিনি পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন) পর থেকে ২০০৬-এর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির করাচি টেস্ট পর্যন্ত জাহির ৪২.৪১ গড়ে ৩৯টা উইকেট নেন ১৫ টেস্টে। ঐ করাচি টেস্টে, সত্যি বলতে, গোটা পাকিস্তান সফরেই, তাঁকে পৃথুল দেখিয়েছিল, বেশ কম রান-আপ নিয়ে বল করছিলেন, এবং ১৩০-র ওপর গতির কাঁটা তুলতে অসুবিধেয় পড়ছিলেন। অর্থাৎ ফিটনেস নিয়ে ঘাটতি ছিল। “Wickets were hard to come by, fitness issues plagued him, and he looked nothing like the bowler who burst on to the scene in the early 2000s as a tearaway quick.”
প্রকৃতপক্ষে, জাহির-এর ফিটনেসের সমস্যা নিয়ে চ্যাপেল মাঝেমধ্যেই বিরক্ত হতেন। ভারতের পরবর্তী দুই টেস্ট-সিরিজে – ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে – দল থেকে বাদ পড়ে গিয়ে জাহির উরস্টারশায়ার কাউন্টি-তে সই করে ২০০৬-এর গ্রীষ্মে কাউন্টি ক্রিকেট খেলে ভাল সাফল্য পান। ঐ সময়ে তাঁর ফিটনেসও উন্নত হয় এবং বোলিং ফর্মও অনেকটা ফিরে পান। কেমন করে?
শোনা যাক উরস্টারশায়ার-এর তৎকালীন ক্রিকেট-ডিরেক্টর (ইংল্যান্ডের নব্বই-দশকের প্রাক্তন ক্রিকেটার) স্টিভ রোডস-এর জবানিতে: “The archetype dictates that a fast bowler must approach the popping crease steaming in through a lengthy run-up, it being a part of the intimidatory mind-space they must inhabit. Zaheer though, was ready to adopt a more pragmatic and effective approach. Working on his run-up with the now late Graham Dilley who was Worcestershire’s bowling coach in the summer of 2006, it was significantly shortened. Among other things, he was now ensuring that he reserved his energy for the final jump and slingshot like action when he delivered the ball rather than for a long run-up.” এই সময়ের পর থেকেই নিপুণ (crafty) শব্দটা জাহির-এর বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যবহার করা শুরু হয়। এসেক্স কাউন্টির বিপক্ষে উনি হয়ত এক ইনিংসে দশটা উইকেটই নিতেন যদি উইকেট-রক্ষক স্টিভেন ডেভিস ড্যারেন গফ-এর ক্যাচটা ধরতে পারতেন, শেষ করেন ১৩৮ রানে ৯ উইকেট নিয়ে।
জাহির পরবর্তীকালে এই কাউন্টি মরশুম প্রসঙ্গে বলেন: “Away from the pressures of playing for India, which is a stress like no other, I began to enjoy myself again.” সেই মরশুমে ১৬টা ম্যাচে তিনি ৭৮টা উইকেট নেন, গড় ছিল ২৯-এর কছাকাছি। ২০০৬-০৭-এর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিনি তাজা হয়ে ভারতীয় দলে ফেরেন। ২০০৭ সালে ন’টা টেস্টে ২৫.৭৩ গড়ে ৪১টা উইকেট নেন। তফাৎটা লক্ষ্যণীয়, কি বলেন! তাঁর “Fierce Focus” বইতে চ্যাপেল উল্লেখ করেছেন যে গাঙ্গুলি ও জাহির দু’জনেই সেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ভারতের সেরা খেলোয়াড়দের অন্যতম ছিলেন: “Whether they had improved in order to spite me or prove me right, I didn’t care. It cheered me greatly to see them in much better shape than they had been when I started in the job.“
শচীন তেন্ডুলকার: ওডিআই ব্যাটিং-ক্রম নিয়ে অসন্তোষ
তেন্ডুলকারের-এর ক্ষোভের বড় একটা কারণের উল্লেখ আগেই করেছি। চ্যাপেল-এর পরামর্শ অনুযায়ী দলের স্বার্থে ওডিআই-তে চার-নম্বরে ব্যাট করতে নামা এই ব্যাপারটা তিনি ভালভাবে মেনে নিতে পারেননি। ২০০৫-এর জুলাই থেকে ২০০৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাঁর ৩৯টা ওডিআই ইনিংসের মধ্যে কেবলমাত্র ২০০৭ সালে তিনি ছ’টা ইনিংসে চার-নম্বরে নামেন, তার মধ্যে দু’টো বিশ্বকাপে, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে।
ভিভিএস লক্ষ্মণ: টেস্ট-দলে জায়গা নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা
চ্যাপেল-দ্রাবিড় জমানায়, ভারত অনেকবারই টেস্টে পাঁচ বোলার খেলিয়েছে, হারবার ঝুঁকি নিয়েও, যাতে ২০টা উইকেট নিয়ে ম্যাচ জেতার চেষ্টা করা যায়। এর ফলে ষষ্ঠ ব্যাটার বাদ পড়েছেন (গাঙ্গুলি আগেই বাদ গেছেন), তার সঙ্গে ওডিআই-এর প্রায়-নিয়মিত খেলোয়াড় যুবরাজ ও কাইফ এঁদের টেস্ট-দলের দরজায় জোরদার কড়া-নাড়া – এই সবকিছু মিলে লক্ষ্মণের ওপরেও চাপ তৈরি করে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০০৫-০৬ মরশুমে দেশের মাঠে তিনি দু’টো টেস্ট থেকে বাদ পড়েন। তাঁকে ব্যাটিং-ক্রমে আগু-পিছুও করানো হয়। এই নিয়ে লক্ষ্মণ তাঁর “281 and Beyond” বইতে লিখেছেন। কোচ-ও সেই নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে বিশেষ কোনও কিছু করেননি।
এই প্রসঙ্গে চ্যাপেল তাঁর “Fierce Focus” বইতে স্বীকারও করেছেন: “Same kinds (of mistakes) I had made as captain in my playing days. I didn’t communicate my plans well enough to the senior players. I should have let guys like Tendulkar, Laxman and Sehwag know that although I was an agent of change, they were still part of our Test cricket future.“
পাঠান-কে ওডিআই-তে ওপরের দিকে ব্যাট-করানো
চ্যাপেল ও দ্রাবিড় জুটি বাঁধার আগে, পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল থাকলেও পাঁচ বোলারে খেলতে ভারতের প্রবল অনীহা ছিল। এই জুটির আমলে কিন্তু পাঁচ বোলরে খেলাটাই প্রথা হয়ে দাঁড়ায়। এর কারণ, সম্ভবত, দলে উঠতি অল-রাউন্ডার পাঠান-এর উপস্থিতি। উল্লেখযোগ্য এই যে, গাঙ্গুলির অধিনায়কত্বে খেলা ৩২টা ওডিআই ম্যাচে পাঠান কখনও সাত নম্বরের ওপরে ব্যাট করতে নামেননি, এবং মাত্র একবারই সাত নম্বরে নামেন, যদিও ব্যাটার হিসেবে পাঠানের যথেষ্টই দক্ষতা ছিল, এটা অব্যবহিত পরেই দেখা গেছে।
পাঠান তাঁর ওডিআই-জীবনে মোট ১৮ বার তিন নম্বরে ব্যাট করেন – তার মধ্যে দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বের কালে ১৪ বার। ঐ ১৪টা ইনিংসে তিনি রান করেন: ৮৩ (৭০), ৩৫ (২৩), ৩৭ (৫৮), ৬৫ (৬৫), ০ (২), ৩৬ (৬৩), ৪৬ (৫৬), ২৬ (৪৯), ১ (৪), ১৪ (৩২), ৬৪ (৬৮), ০ (১), ১৯ (৩৪), ০ (৬) – মোট ৪২৬, গড় ৩০.৪৩, ৮০.২৩ স্ট্রাইক-রেট। এর মধ্যে আটটা ম্যাচে দল জেতে যে আট ইনিংসে পাঠানের মোট রান ২৫৭, গড় ৩২.১২, স্ট্রাইক-রেট ৮২.৯০, এবং পাঁচটা ম্যাচে দল হারে যে পাঁচ ইনিংসে পাঠানের মোট রান ১৬৯, গড় ৩৩.৮০, স্ট্রাইক-রেট ৭৬.৮১ – কুয়ালা লামপুরে ডিএলএফ কাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচটা বৃষ্টির জন্য পরিত্যক্ত হয়, তিনি প্রথম বলেই কোনও রান না করেই মিচেল জনসন-এর বলে বোল্ড আউট হন।
নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল যে এই পরিকল্পনাটা কার ছিল, চ্যাপেল না দ্রাবিড় তবে দেখা যাচ্ছে এই কৌশলটাকে কাজে লাগাতে গাঙ্গুলির থেকে দ্রাবিড় সম্ভবত অনেক বেশি ইচ্ছুক ছিলেন। প্রসঙ্গত জানাই যে, পাঠানের কথামত এই মতলবটা নাকি ছিল তেন্ডুলকার-এর। তবে কৌশলটা যে দলের পক্ষে মোটামুটি কার্যকরী হয়েছিল. অন্তত ভারতের মাটিতে, এটা তথ্য দেখলে বোঝা যায়।
ওডিআই-তে রান-তাড়া-করে জেতা
চ্যাপেল যখন ভারতীয় দলের ভার নেন, তার অব্যবহিত আগেকার (২০০৩-এর মার্চ থেকে ২০০৫-এর এপ্রিল পর্যন্ত) ২০টা (সম্পূর্ণ-হওয়া) রান-তাড়া-করা ম্যাচে ভারত মাত্র পাঁচটা জিতেছিল, বিপক্ষে ছিল বাংলাদেশ দু’বার. জিম্বাবোয়ে দু’বার আর পাকিস্তান একবার। বাকি ১৫টা হেরেছিল – বিপক্ষে ছিল অস্ট্রেলিয়া ছ’বার, পাকিস্তান পাঁচবার, শ্রীলঙ্কা দু’বার, আর ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশ একবার করে।
এই দুরবস্থা থেকে বের হ’তে চ্যাপেল-জমানায় ভারত বহুবার টসে জিতে ফিল্ডিং নেয়, এবং ২০০৫-এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৬-এর মে এই সময়কালে রান-তাড়া-করা ১৭টা ম্যাচ পরপর জেতে – বিপক্ষে ছিল শ্রীলঙ্কা পাঁচবার, পাকিস্তান চারবার, ইংল্যান্ড তিনবার, দক্ষিণ আফ্রিকা দু’বার, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবোয়ে একবার করে। এই সাফল্য ভারত আগে কখনও পায়নি।
চ্যাপেল-জমানা: কয়েকটা ছাপ
পাঁচ বোলারে খেলা, ওডিআই-তে ব্যাটিং-ক্রমে ‘আপাতদৃষ্টিতে’ কিছু কিছু ছক ভাঙ্গা, প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের প্রয়োজনে বাদ দিতে প্রস্তুত থাকা, খেলোয়াড়দের ফিটনেসকে non-negotiable রাখা, ক্রিকেটারদের তাঁদের confort zone ছেড়ে বেরোতে চ্যালেঞ্জ করা – এই ব্যাপারগুলো (এবং তার প্রয়োগ করতে গিয়ে আনুষঙ্গিক টানাপোড়েন ও বিতর্ক) চ্যাপেল-জমানায় ছিল বেশ প্রচলিত। দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে যথাযথ ব্যক্তিগত যোগযোগ (interpersonal communication) বজায় রাখলে যে এই টানাপোড়েন অনেকখনি প্রশমিত করা যায়, দলের performance-এ বিশেষ কোনও আপস না করেও, এই বিবেচনাবোধ প্রয়োগ করায় বেশ কিছু খামতি ছিল চ্যাপেল-এর। ফলে গোটা দলের আস্থা-বিশ্বাস তিনি অর্জন করতে পারেননি, অঢেল ক্রিকেট-প্রজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও। তবে ভারতীয় ক্রিকেটে কিছু দীর্ঘমেয়াদী ‘কাজের কাজ’ যে তিনি আরম্ভ করে দিয়েছিলেন তার কয়েকটার উদাহরণ এই রচনায় রইল।
আজ গ্রেগ চ্যাপেলের জন্ম-বার্ষিকী, ওঁর জন্ম-তারিখটা ছিল ১৯৪৮ সালের ৭ই অগাস্ট।
[ছবি: ইন্টারনেট থেকে]