সাড়ে চার বছর বয়সে শুরু করেছিলেন ক্রিকেট। তারপর আট বছর বয়স থেকে খেলেছেন দাবা। ইন্টারভিউ করতে গিয়ে যখন দুপুর সওয়া একটা নাগাদ ফোন করি তখন ওপার থেকে উত্তর আসে পনেরো মিনিট দাঁড়ানোর জন্য। তারপরে যখন পঙ্কজ গুপ্ত ইন্ডোর কোচিং সেন্টারের বাইরে দাড়িয়ে আছি তখন গাড়ি নিয়ে নিজেই এলেন ঋত্বিক এবং বললেন “উঠে আয়।” এরপরে গাড়িতেই চললো প্রায় পনেরো মিনিটের ইন্টারভিউ।
প্রশ্ন:- এবার আরো একটা নতুন সিজন। এই বছরে কিরকম আশাবাদী তুমি?
ঋত্বিক:- সোজা কথা বলতে গেলে নিজের কাছে আশাবাদী সবাই হয়। বিশেষত যখন সাদা বলের খেলা দিয়ে শুরু হচ্ছে মানে সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফি এবং বিজয় হাজারে ট্রফি সেগুলোতে ভালো খেলার। ব্যাটার হিসেবে রান করার এবং বোলার হিসেবে উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করবো। আমরা সাদা বলে গত বছর খুব ভালো খেলেছি কিন্তু ট্রফি পাইনি। আমি অলরাউন্ডার হিসেবে দলকে ট্রফি তুলে দেওয়ার চেষ্টা করবো। তারপরে রনজি ট্রফি আছে, সেখানে আমি অনেক ম্যাচেই খেলছিনা তবুও চেষ্টা করবো সুযোগ পেলে ভালো বল করার এবং আমি চেষ্টা করবো যাতে ধারাবাহিকভাবে রনজি ট্রফির ম্যাচ আমি খেলতে পারি।
প্রশ্ন:- আগে তোমাকে মিডল ওভারে স্পিনার হিসেবে টিটোয়েন্টিতে আনা হতো এবং এখন পাওয়ারপ্লেতে আনা হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জটা কিভাবে দেখছ?
ঋত্বিক:- আজকাল স্টিরেওটাইপ ক্রিকেট হয়না,খুব তাড়াতাড়ি বদল আসে। পেসার, স্পিনার আবার পেসার এইভাবে, যাতে ব্যাটার একইধরণের বোলার খেলে যাতে ব্যাটারের অভ্যাস না হয়ে যায়। সবসময় তাই প্রস্তুতি রাখতে হবে যাতে সবসময় বল করতে পারি। আমি এটাই ভাবি যে পাওয়ারপ্লেতে যদি বল করি তাহলে কী ফিল্ড থাকবে, কী বল করলে ব্যাটারের আউট হওয়ার সুযোগ বাড়বে এবং সে শট খেলতে পারবেনা। আমি এগুলোই প্র্যাক্টিস করি সঙ্গে মিডল ওভারসে বল করার প্র্যাক্টিসও রাখি।
প্রশ্ন:- এইবছর বাইজুস্ টুর্নামেন্ট থেকেই তোমার খেলায় এই বদল এসেছে। এই পরিবর্তন কিভাবে মানিয়ে নিয়েছো? কতদিন লেগেছে?
ঋত্বিক:- আমি যখনই প্র্যাক্টিস করি সবসময় চেষ্টা করি প্র্যাক্টিসটা ম্যাচের মতো করে করার। পাওয়ারপ্লেতে ব্যাটারকে বল করছি এই হিসাবে বল করার বা মিডল ওভারেও আমি সেইরকম বল করার চেষ্টাই রাখি। তাই আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়নি কারণ আমি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।
প্রশ্ন:- গত বছর টিটোয়েন্টিতে হায়দ্রাবাদ ম্যাচে ইডেনে ২৮ বলে ৩৯ করো। সেইদিন তুমি ছামা মিলিন্দকে বেশি আক্রমণ করছিলে। এটা কী দুর্বলতাকে কাজে লাগানো বলবে?
ঋত্বিক:- না না এরকম নয়। সেই সময়ে একটা রান আমরা তাড়া করছিলাম। সুতরাং প্রতি ওভারে একটা বাউন্ডারি শট দরকার ছিল, সেইমতো আমরা হিসেব করে ঝুঁকি নিচ্ছিলাম। ক্রিকেট এখন অল এবাউট ক্যালকুলেটিভ রিস্ক মানে ভালো সময়ে যে সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে সেই জিতবে। উল্টোদিকে শ্রীদা(শ্রীবৎস গোস্বামী) ভালো ব্যাট করছিল তাই ওটা আমার দায়িত্ব ছিল খেলাটা খোলার এবং আমি পেরেছিলাম।
প্রশ্ন:- তোমাকে টিটোয়েন্টিতে তিন নম্বরেও ব্যাট করতে দেখা গিয়েছে। শেষবছর কর্ণাটক ম্যাচে প্রথমে ধরে খেলে পরে স্ট্রাইক করো। কী ইনটেনশন ছিল?
ঋত্বিক:- টিটোয়েন্টিতে পাওয়ারপ্লেতে সবচেয়ে বড়ো কথা হলো মারতে হবে কারণ সাতটা ফিল্ডার সার্কলে থাকায় রান করা সহজ হয়। কিন্তু আমাদের যেহেতু দু-তিনটে উইকেট পড়ে যায় তাই আমাকে একটু চেঞ্জ করতে হয় কারণ উইকেট পড়ে গেলে আমরা ব্যাকফুটে থাকতাম। তাই চেষ্টা করেছিলাম প্রথমে সেট হয়ে পরে হিট করার।
প্রশ্ন:- গুজরাটের সঙ্গে রনজি ট্রফিতে ডাবল সেঞ্চুরি আছে। এরপরে তোমার একটা সেঞ্চুরি গোয়ার বিরুদ্ধে। তোমার কি মনে হয় যে রনজি ট্রফিতে সাকসেস রেশিও একটু কম?
ঋত্বিক:- হ্যা ঠিক কথা। আমি টানা খুব বেশী ম্যাচ খেলিনি হয়তো কোনো বছর একটা, এইভাবে খেলেছি। আর আমার ব্যাটিং অর্ডারও ছিল সাত, আট, নয় আবার তিন। হয়তো এই পরিবর্তনটা আমার জন্য মানিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি, আমি দোষ দেবোনা। হয়তো এটা আমি করে উঠতে পারিনি।
প্রশ্ন:- তুমি দলীপ ট্রফি খেলেছো। ইন্ডিয়া খেলা খেলোয়াড়দের সাথে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা কতটা তোমাকে উন্নত করেছে?
ঋত্বিক:- ক্রিকেট ইস আ গেম, নট লাইফ। ওরা খেলাটা সেইভাবেই খেলে। প্লেয়ার হিসেবে বলতে গেলে খাটাখাটনি, সফলতা, ওঠাপড়া লাইফে সবই থাকে। কিন্তু ব্যর্থতা থেকে অনেক শেখার আছে। সফলতার সময় যেমন নিজেদের মেইনটেইন করা উচিৎ এবং ব্যর্থতার সময়ও মেইনটেইন করা উচিৎ। ব্যর্থতায় খুব ভেঙ্গে পড়া উচিৎ নয়, তেমনই সফলতাতেও খুব মাতামাতি ঠিক নয়। সেই ব্যালান্স রেখে ওরা চলতে পারে বলেই পারফরমেন্স আপডাউন হলেও তাড়াতাড়ি ফিরে আসে ওরা।
প্রশ্ন:- এইবছর কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব টিমে ছিলে। কী কী নতুন প্র্যাক্টিস করেছ?
ঋত্বিক:- ব্যাটিংয়ের দিকেই বলি, কারণ বোলিং আমার স্বাভাবিক যা ছিল তাই ছিল। প্রচুর ফিল্ডিং ড্রিলস হতো। ব্যাটিংয়ে নেট ছাড়াও পাওয়ারহিটিং হতো, একজন এইজন্য এসেছিলেন এবং আমাকে অনেক পাওয়ারহিটিং ড্রিলস করিয়েছেন যে কারণে রেঞ্জ হিটিংয়ে আমার সুবিধা হয়েছে। রেঞ্জ হিটিংয়ের জন্য কী দরকার সেটা শিখেছি এবং আমি মনে করি সেটা আমার ক্রিকেটে অনেক সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন:- সিজনে ম্যাচ খেলতে পারলে না এটা নিয়ে কোনো খারাপ লাগা আছে?
ঋত্বিক:- ম্যাচ না খেলতে পারলে সবারই খারাপ লাগে, আমিও মানুষ, একজন খেলোয়াড়। আমি সিজনের শুরুতে এটা আশা করিনি যে আমি আইপিএল টিমের সাথে থাকবো। আমি ভালো করেছি, সুযোগ পেয়েছি। এটাই আমার কাছে বড়ো পাওনা যে আমি অনেক শিখেছি। আশা করি পরের বছর ম্যাচ খেলবো।
প্রশ্ন:- ভবানীপুরের হয়ে একটা সিজনে ১৮০০ রান,৮২ উইকেট এই রেকর্ড ছিল। সিজন কতটা স্পেশাল ছিল?
ঋত্বিক:- সেই বছর আমরা লিগ চ্যাম্পিয়ন হই। আমি, অরিত্র চ্যাটার্জী, পার্থসারথি ভট্টাচার্য সবাই ভালো খেলি। নিজের কথা বলতে গেলে আমি সেইবছর সব ম্যাচেই রান পাই এবং ওটা ঐসময় দারুন এচিভমেন্ট বলতে পারো। ওটা করতে পেরে আমি সত্যিই নিজেকে খুব গর্বিত মনে করি।
প্রশ্ন:- কলকাতায় তিনটে বড়ো ক্লাব খেলা হলো। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, ভবানীপুর। কোন ক্লাব তোমার কাছে সব থেকে ক্লোজ?
ঋত্বিক:- দেখো আমি মোহনবাগান সাপোর্টার। মোহনবাগানকেও আমি ট্রফি দিয়েছি। তবে যেই ক্লাবকে ক্যাপ্টেন হিসেবে আমি ট্রফি দিয়েছি সেই ক্লাব আমার ক্লোজ হবেই।
প্রশ্ন:- ভবানীপুর?
ঋত্বিক:- একদম। সেই বিষয় কোনো সন্দেহ নেই।