চোটগ্রস্ত অভিজ্ঞ মনোজ এবং প্রতিভাধর শাহবাজে ম্যাচে ফিরল বাংলা

বাংলার ইনিংসের চতুর্থ ওভার। সারাংশ জৈনের অফ-স্টাম্পের বাইরের একটি বল ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে রজত পতিদারের হাতে বন্দি হয়েছেন ক্রাইসিস ম্যান অনুষ্টুপ মজুমদার। তার আগে ইনিংসের প্রথম ওভারে কুমার কার্তিকেয় টার্ন করিয়ে পরাজিত করেছেন অভিষেক রমন এবং সুদীপ ঘরামীকে (দুজনেই ৩ বল খেলে ০)।
অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরনকে ক্রিজে সহায়তা করতে আসা ব্যাটার বরাবর খুব সাহসী এবং বাংলার হয়ে তাঁর রয়েছে ৭,৭৬৬ রনজি ট্রফি রান। গত ম্যাচে অসাধারণ খেলা সেই ব্যাটার এলেন, গার্ড নিলেন, চোখ ঘুরিয়ে একবার ফিল্ড প্লেসমেন্ট দেখলেন এবং সারাংশ জৈনের অফ-স্টাম্প লাইনের বলটাকে প্যাডল করে পাঠিয়ে দিলেন ফাইন-লেগ অঞ্চল দিয়ে সীমানার ওপারে। ঠিক এইভাবেই ২০১৯-২০ সেমি-ফাইনালে কৃষ্ণাপ্পা গৌতমকেও বাউন্ডারি মেরে শুরু করছিলেন ইনিংস। সেদিন ধরে রাখতে পারেননি নিজেকে কিন্তু আজ সারাংশকে ক্রমাগত আক্রমণ করে স্পিনের জাল থেকে নিষ্কৃতি দিলেন বাংলাকে।
সারাংশ যখন সরলেন নামের পাশে প্রায় ৭ ইকোনমি নিয়ে তখন মনোজ তিওয়ারি ৭ বলে ১৩ রানে ব্যাট করছেন। আবহাওয়া যখন পেসারদের সঙ্গে এবং আক্রমণে পুনীত দাতে, তখন সেই তিনিই বদলে ফেললেন নিজের খেলার পদ্ধতি। খুব সাবধানে পরের ৩০টি বল খেলে করলেন পাঁচ রান। এরই মধ্যে খোঁচা দিয়ে ফিরেছেন অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণ (২২) এবং লেংথ বল হাওয়ায় ফ্লিক করে ফিরেছেন তরুণ অভিষেক পোড়েল (৯)। বাংলা ৫৪-৫ অবস্থায় যখন প্রায় হারের ভ্রূকুটি দেখছে তখন পাল্টা লড়াই শুরু করেন ক্রিজে আসা শাহবাজও। ঝোড়ো ইনিংস খেলার জন্য পরিচিত শাহবাজ আজ ছিলেন স্থিতধী। প্রথম ৪০ বলে মাত্র ৫টি রান সংগ্রহ করে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন বড় ইনিংস খেলার লক্ষ্যে। তিওয়ারি তখনও দাঁড়িয়ে আছেন এবং ব্যাট করছেন নিজের ডান হাঁটুতে চোট নিয়ে।


মনোজের আজকের ইনিংসে সবচেয়ে বড়ো বিষয় এটাই যে ভুল শট নির্বাচন তিনি করেছেন ১০% এর কাছাকাছি এবং মিডল করেছেন ৮৩% বল। খুব কমবার তাঁকে দেখে মনে হয়েছে যে তিনি ভুল করতে পারেন। তিনি স্প্রিন্ট টানতে পারছেননা কিন্তু তবুও নেই কমিটমেন্টে কমতি। তিনি লড়ছেন। ভরদুপুর থেকে সন্ধ্যে নামার আগে অবধি, ১৫তম ওভার থেকে ৬৬তম ওভার অবধি, তিনি শুধু লড়ছেন।


উল্টোদিকে শাহবাজ আহমেদ নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে কিছুটা আক্রমণ করছিলেন যা আপাতত শেষ হলো ১৪৯ বলে ৭২ রানে এবং মনোজ এখনও ব্যাটিং ১৮২ বলে ৮৪ রান করে।
বিগত ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়ার পরে হোয়াটস-অ্যাপ বার্তায় “উইলোর উইল”-কে মনোজ বলেছিলেন “স্কাই-ডাইভ টাইপ ফিলিং”। আগামীকাল যদি তাঁর এবং শাহবাজের ব্যাট বাংলাকে বাকি থাকা ১৪৪ রানের বৈতরণী পার করায় তবে সেই স্কাই-ডাইভ দেওয়ার উচ্ছাস শুধু মনোজ নয়, ছড়িয়ে পড়বে বাংলা দলের অন্দরে। তা ছড়িয়ে পড়বে বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীদের মনেও।
দিল্লি বহুত দূর হলেও মনোজ-শাহবাজের দেখানো স্বপ্নে মন রঞ্জিত করতে বাধা কোথায়?

ছবি : সিএবি