জন্মদিনের ক্যালেন্ডার – অষ্টাদশ পর্ব

বিলেতফেরত মনসুর আলি খান কি টের পেয়েছিলেন সত্যটা? কেন ভারতবর্ষে আকাল সর্বোচ্চ পর্যায়ের গতির। যা নেই বা তড়িঘড়ি পাওয়ার উপায়ও নেই তা নিয়ে অযথা আক্ষেপ না করে তাই কি মনোনিবেশ করেন স্পিনে? মিডিয়াম পেসারদের দায়িত্ব দেন শুরুর ক’ ওভারে লাল চেরির পালিশটা যথাসাধ্য চটিয়ে দেওয়ার। যাতে করে দ্রুত আক্রমণে আনা যায় পুরনো বলের হস্তশিল্পীদের। এর ফাঁকে মিডিয়াম পেসারদের দৌলতে বিপক্ষের এক-আধটা উইকেট তুলে নেওয়া গেলে সেটা হিসেবের বাইরে বাড়তি অর্জন।

তাঁর সময়কালে নতুন বল হাতে পাওয়া পেসারদের নাম?

১৯৬৪-৬৫ থেকে ১৯৬৭-৬৮ পর্বে ৯ টেস্ট খেলা বেঙ্কটরামন সুব্রমন্য (জন্ম জুলাই ১৬, ১৯৩৬-এ ব্যাঙ্গালোরে)। টেস্ট ক্রিকেটের আসর থেকে ৬৭.০০ গড়ে এঁর সংগ্রহ ৩-টি উইকেট।

১৯৬৭-৬৮ থেকে ১৯৭৪-৭৫ পর্বে ২৯ টেস্ট খেলা সৈয়দ আবিদ আলি (জন্ম সেপ্টেম্বর ৯, ১৯৪১-এ হায়দরাবাদে)। টেস্ট ক্রিকেটের আসর থেকে ৪২.১২ গড়ে এঁর সংগ্রহ ৪৭-টি উইকেট।

১৯৬৯-৭০ থেকে ১৯৭৬-৭৭ পর্বে ২৭ টেস্ট খেলা একনাথ সোলকার (জন্ম মার্চ ১৮, ১৯৪৮-এ বোম্বেতে)। টেস্ট ক্রিকেটের আসর থেকে ৫৯.৪৪ গড়ে এঁর সংগ্রহ ১৮-টি উইকেট। প্রসঙ্গত, মার্চ ১৮, ১৯২৪-এ পানভেলে জন্ম ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ১৯৪৮-৪৯ মাদ্রাজ (চিপক) টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৩১০) খেলা মারাঠি ওপেনার মধুসূদন রেগেরও।

এছাড়া পূর্বোক্ত রুসি সুর্তি বা এমনকি সুনীল গাভাসকারের নামও পাওয়া যায় এই পর্বে নতুন বল হাতে আক্রমণে আসা পেসারদের ভিড়ে। এবং শেষ নয় এখানেও। ১৯৬৭-র বার্মিংহাম টেস্টের (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৬২০) সূত্রে এই দলে নাম থেকে গিয়েছে খোদ বুধি কুন্দরনেরও!

গাভাসকার ও কুন্দরন বাদে বাকিদের দিকে তাকালেই মালুম হয় শুরুতে বলের পালিশটা তোলার সঙ্গে সঙ্গেই দলে এঁদের ভূমিকা ছিল দরকারে ইনিংসেরও হাল ধরার। অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ পেসারের বদলে সিমার-অলরাউন্ডারদের চাহিদাই বাজারে বেশি ছিল সেদিন। লালা অমরনাথ বা বিজয় হাজারেও একদা আক্রমণে এসেছেন নতুন বল হাতে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৭-৯৮ কলকাতা টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,৪০৯) এই দায়িত্বটা দেওয়া হয় সৌরভ গাঙ্গুলীকেও। তবে বলের পালিশ চটিয়ে স্পিনারদের দ্রুত আক্রমণে আনার লক্ষ্য ছিল না এঁদের কারওরই।

যাক, বিখ্যাত স্পিন চতুর্ভুজের একত্র হয়ে নবাবের হাত শক্ত করা কিন্তু একটু পরবর্তীকালের ঘটনা। মানকড়-আমেদ-গুপ্তে থেকে বেদি-চন্দ্রশেখর-প্রসন্ন-বেঙ্কটরাঘবনে পৌঁছতে সময় লেগেছিল খানিকটা। মধ্যবর্তী অধ্যায়ে নবাবকে নির্ভর করতে হয়েছিল অন্য কিছু মানুষের উপরও। তাঁদের সক্কলকেই আবার ঠিক বিশেষজ্ঞ স্পিনারও বলা চলে না।

প্রসঙ্গত শুরুতেই আসে জনৈক মারাঠি অর্থোডক্সের (আসলে অলরাউন্ডার) নাম। ইতিহাসের কৃপণতম বোলারদের অন্যতম যে মানুষটির যে কোনও পরিবেশে রানে বাঁধ দেওয়ার দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত। ১৯৬৩-৬৪ মাদ্রাজ (কর্পোরেশন) টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৫৫১) ইংরেজদের প্রথম ইনিংসে এঁর খতিয়ান ছিল ৩২-২৭-৫-০! বলছি ১৯৫৫-৫৬ থেকে ১৯৬৭-৬৮ পর্বে ওভার পিছু ১.৬৭ রান খরচা করে ৪১ টেস্ট খেলা বাপু নাদকার্নির কথা। এপ্রিল ৪, ১৯৩৩-এ নাসিকে জন্ম এই অলরাউন্ডারের।

নাদকার্নির মতোই বল হাতে অর্থোডক্স প্রজাতির প্রতিনিধি আরও এক অলরাউন্ডারের নামও ইতিমধ্যেই এসেছে আমাদের আলোচনায়। বিদেশে ভূমিষ্ঠ হওয়া ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটারদের অন্যতম সেলিম দুরানি।

পূর্বোক্ত বালু গুপ্তের জীবনের তৃতীয় তথা শেষ টেস্টও নবাবের অধিনায়কত্বে খেলা। বলছি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৬৪-৬৫ কলকাতা টেস্টের (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৫৮১) কথা।

মাত্র ৯-টি টেস্ট উইকেটের অধীশ্বর হওয়া সত্ত্বেও ৫১-টি ইনিংসে অফস্পিন করানোর ডাক এসেছিল জনৈক হায়দরাবাদি মিডল-অর্ডারের কাছে। নিজাম কলেজের এই প্রাক্তনী সম্পর্কে বলতে গিয়ে যদিও স্রেফ বাইশ গজে আটকে থাকা মুশকিল। টাইয়ের নট বাঁধা থেকে সামনের পায়ে দৃষ্টিনন্দন ড্রাইভ— স্টাইলের শেষ কথা বলতেই তৎকালীন ক্রিকেট অনুরাগীদের চোখে ভেসে উঠত এঁর মুখটা। বলছি ১৯৫৯ থেকে ১৯৭০-৭১ পর্বে ৩৯ টেস্ট খেলা এমএল জয়সিমার কথা। মার্চ ৩, ১৯৩৯-এ সেকেন্দ্রাবাদে জন্ম এঁর।

১৯৬৭-র লিডস টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৬১৮) খেলা রমেশ সাক্সেনার লেগস্পিন ব্যবহারেও পিছপা হননি নবাব। ঘরোয়া ক্রিকেটে দিল্লি ও বিহারের প্রতিনিধিত্ব করা এই মিডল-অর্ডার ব্যাটারের জন্ম সেপ্টেম্বর ২০, ১৯৪৪-এ দিল্লিতে। বলে রাখি, সেপ্টেম্বর ২০, ১৯২১-এ করাচিতে জন্ম ১৯৫৪-৫৫ পাকিস্তান সফরে পঙ্কজ রায়ের সঙ্গে ৫-টি টেস্টেই ভারতীয় ইনিংসের সূচনা করা পানানমল পাঞ্জাবির। দেশভাগ-পূর্ব অধ্যায়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে সিন্ধুপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করা মানুষটি পরবর্তীকালে খেলেছেন গুজরাটের হয়ে।

অধিনায়ক হিসেবে নবাবকে না পেলেও এখানে প্রসঙ্গত বলে নিতে হবে সমসাময়িক আর-এক দক্ষ লেগস্পিনারের কথা। অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি বিল ও’রিলির বই পড়ে পুরনো বলের হস্তশিল্পে আকৃষ্ট হওয়া সেই মাদ্রাজি ১৯৬০-৬১ থেকে ১৯৬১-৬২ পর্বে খেলেছিলেন ২ টেস্ট। এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিষেকে দিল্লি টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৫০৫) দু’ দফা মিলিয়ে সাত-সাতটি উইকেট (৫-৬৪ ও ২-৬৮) দখল করে জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন দেশকে। ভগবৎ চন্দ্রশেখরের উত্থান যদিও পরবর্তীকালে জল ঢেলে দেয় এঁর দীর্ঘ কেরিয়ারের সম্ভাবনায়। বলছি জুন ২২, ১৯৩৫-এ মাদ্রাজে ভূমিষ্ঠ বামন কুমারের কথা।