বাংলার দলগঠন নিয়ে খোলাখুলি কথা বললেন নির্বাচক শুভময় দাস।

গতকাল সিএবির তরফে নির্বাচন করা হয়েছে বাংলা দল এবং সর্বমোট নির্বাচিত করা হয়েছে বাইশজনকে। দলে তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার মিশেল ভালোরকম হওয়ায় নকআউট স্তরে পাল্লা বেশ ভারী বাংলার। কেমন হলো সেই দল, কিভাবে দেখছেন প্রধান নির্বাচক শুভময় দাস। “উইলোর উইল”-কে এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ দিলেন শুভময় দাস।
প্রশ্ন:- কালকে বাইশজনের নাম নির্বাচিত হলো। কতটা শক্তিশালী মনে হচ্ছে বাংলাকে?
শুভময়:- আমার মনে হয় এটাই বেস্ট পসিবল টিম। আমি এই ক্রিকেটারদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি অনেকদিন। খেলোয়াড় হিসেবে, অধিনায়ক হিসেবে এবং এখন নির্বাচক হিসেবে এই খেলোয়াড়দের নব্বই শতাংশ খেলোয়াড়কেই চিনি ভালোভাবে। এটাই আমার মনে হয় বেশ শক্তিশালী টিম, যদিও কিছু অ্যাভেইলেবিলিটির প্রশ্ন আছে।
প্রশ্ন:- বেঙ্গল এর পেস অ্যাটাক আকাশ-ঈশান-মুকেশকে নিয়ে এখন ভারতের অন্যতম সেরা। এর সঙ্গে মহম্মদ শামির আসা কতটা জোর বাড়াবে?
শুভময়:- অবশ্যই। শামি একজন ওয়ার্ল্ড-ক্লাস বোলার এবং এরকম একজন বোলার যদি ডোমেস্টিক টুর্নামেন্টের নক-আউট স্টেজে খেলে তবে আমাদের স্ট্রেংথ অনেকটাই বাড়বে।


প্রশ্ন:- মহম্মদ শামিকে ‘সাবজেক্ট টু অ্যাভেইলিবিলিটি’ রাখা হয়েছে তাঁকে পাওয়ার সম্ভাবনা কতটা?
শুভময়:- দেখো সামনে ওয়ার্ল্ড কাপ। এখন টিম ম্যানেজমেন্ট কি সিদ্ধান্ত নেয় ওর ওয়ার্ক-লোড ম্যানেজ করে সেটাই দেখার এবং এখন ইন্ডিয়ান পেস অ্যাটাকে ওয়ার্ক-লোড নিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে। তাঁরা যদি গ্রিন সিগন্যাল দেন শামি অবশ্যই খেলবে এবং আমরা চাই ও খেলুক। যদি শামি না খেলে তবে অন্য যারা ফাস্ট বোলার আছে তারা খেলবে। শামি না খেললেও আমাদের পেস অ্যাটাক ভালো এবং খেললে তো খুবই ভালো। আমাদের যে তিনজন জোরে বোলার আছে তারা ভারতের অন্যতম সেরা। দেখা যাক, কি হয়।
প্রশ্ন:- কৌশিক ঘোষের ফিরে আসাটা খুবই ইতিবাচক। তিনি ম্যাচ পাবেন এটার সম্ভাবনা কতটা?
শুভময়:- ও খুব ভালো ছন্দে আছে, রান করছে এবং বেঙ্গলের হয়ে খুব ভালো খেলেওছে আগে। আমরা প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলবো ওখানে এবং আগের রনজিতে ও স্টার্ট পেয়েও কোনো কারণে কনভার্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছিলো। কিন্তু ও অনেক অভিজ্ঞ এবং যদি নক-আউট স্তরে ও খেলে এবং ভালো খেলে তবে বাংলার ভালো এবং আমরা তাই জন্যই ওকে টিমে নিয়েছি। ফার্স্ট ইলেভেন তো বলা যাবে না এখন, কারণ যারা সিলেক্টেড তারা প্রত্যেকেই খেলতে পারে এগারোয়।
এখন আমরা ক্লাব ক্রিকেটে ভালো পারফরমেন্স করা খেলোয়াড়দের রিওয়ার্ড করছি। এই জিনিসের জন্য ক্লাব ক্রিকেটের প্রতিটা ম্যাচ ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং সেটা হওয়াটা দরকার। এর ফলে খেলার মান উন্নত হচ্ছে অনেক।
প্রশ্ন:- মনোজ তিওয়ারি, অনুষ্টুপ মজুমদারের মতো অভিজ্ঞ সিনিয়র যেমন আছেন তেমনই অভিষেক পোড়েলের মতো জুনিয়র খেলোয়াড়ও আছেন। বাংলা তবে কিসে জোর দিতে চাইছে? তারুণ্য না অভিজ্ঞতা?
শুভময়:- দেখো আগেও আমি বলেছি যে এটাই বেস্ট পসিবল টিম। এখন এই টিমে যদি অভিজ্ঞতা আর তারুণ্য একসাথে আসে তবে দুজনকেই স্বাগত। টুর্নামেন্ট জেতার জন্য যা করার দরকার আমরা করছি এবং অবশ্যই ইউথের দিকে নজর দিচ্ছি, আমরা চাই ইয়ং খেলোয়াড় উঠে আসুক এবং স্টেট খেলুক, ইন্ডিয়া খেলুক। দলের ভারসাম্য রাখাও একটি বড় কাজ। আমাদের সুদীপ ঘরামির মতো প্লেয়ার আছে, অভিষেক পোড়েলের মতো প্লেয়ার আছে, সেখানে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ও দরকার।
প্রশ্ন:- মহম্মদ কাইফ, সায়নশেখর মন্ডলকে নিয়ে এবং স্পিন বোলিং অল-রাউন্ডার নিয়ে অল-রাউন্ডার স্কোয়াড তৈরী হয়েছে। কতটা আশাবাদী তুমি?
শুভময়:- অবশ্যই আমি আশাবাদী কারণ সায়নশেখর মন্ডল শেষ মরশুম দারুণ খেলেছে এবং ও একজন দারুণ প্লেয়ার। তিন-চার বছর বাদে ও কামব্যাক করেছে এবং ওকে অনেকে রাইট-অফ করে দিয়েছিলো কিন্তু আমরা প্রথম থেকে জানতাম, সায়নকে আমাদের লাগবে, এজন্য ওকে সুযোগ দিয়েছি আমরা। মহম্মদ কাইফও ভালো খেলছে, অনুর্ধ-২৫ ভালো খেলেছে। মোটামুটি যারা ফর্মে আছে এবং এফেক্টিভ তাদের নিয়েই দল তৈরী হয়েছে এবং এদের ওপর আমাদের ভরসা আছে।
প্রশ্ন:- শেষ তিনবার রনজি ফাইনাল খেলে বাংলা এবং দুইবার তুমি খেলোয়াড় ছিলে এবং একবার নির্বাচক। কোন জায়গাটা ঠিক করলে বাংলা জিততে পারে এবার?
শুভময়:- দেখ একটা জিনিস হলো ভাগ্য। প্রথমবার উত্তরপ্রদেশের সাথে সেইবার আমরা খুব ভালো খেলছিলাম এবং কিছু আম্পায়ারিং ডিসিশন ভুল যায় আমাদের জন্য এবং কিছু ভালো প্লেয়ার যারা ভালো ফিল্ডিং করেছিল তাদের হাত থেকেও ক্যাচ পড়েছিলো, তো লাক ফ্যাক্টর থাকেই। একটা এতো বড়ো টুর্নামেন্ট জিততে গেলে এগারোজনকেই সমানভাবে খেলতে হবে এবং তা না হ’লে চ্যাম্পিয়নশিপ খুব সহজে আসেনা। আমরা একবার টিটোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ জিতি, আমি ফাইনালে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হই। সেইবার ফাইনালে ১৪২ ডিফেন্ড করে একদম শেষ অবধি ম্যাচ যায় কারণ দলের প্রত্যেকে ভালো লড়াই করেছিল। লাস্ট বছরের তুলনায় এই বছর টিম আরো ভালো এবং বেশি অভিজ্ঞ আমার মতে। বোলিংয়েও ধার বেড়েছে, এছাড়া শাহবাজ অন্য মাত্রার প্লেয়ার এখন এবং প্রায় ইন্ডিয়া খেলার জায়গায় ও। অভিষেক পোড়েলের মতো সাহসী খেলোয়াড় আছে, ঋদ্ধিমান সাহা আছে। অভিমন্যু ঈশ্বরণ এখন ব্যাট হাতেও ভালো করছে, আগেরবার একদমই ফর্মে ছিলোনা। এবার ২০১৯-২০ থেকেও অনেক ভালো টিম হয়েছে।
প্রশ্ন:- কিছু ক্রিকেটার আছেন যাঁরা বাদ পড়েছেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে কি বার্তা দেবে?
শুভময়:- দেখো এটা খেলার অঙ্গ। আগে কৌশিক ঘোষ, সায়নশেখর মন্ডল বাদ পড়েছিল। তারপরে ভালো খেলে আবার ফিরে এসেছে। যে বাদ পড়েছে তাকে পারফরমেন্স করতে হবে এবং বিশ্বাস রাখতে হবে যে ভালো খেলে আমি চান্স পাবো। তার জন্য তাকে নিয়মিত পারফরমেন্স করতে হবে, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও ভালো খেলতে হবে এবং তাহলে সে নিশ্চয়ই চান্স পাবে। বাদ অনেক বড়ো বড়ো প্লেয়ারও পড়েছে এবং আমি সবাইকে বলবো আশাহত হওয়া উচিৎ নয়। তুমি যদি ভালো খেলো, অবশ্যই ফিরবে আবার।