বড্ডই তাড়া ছিল তাঁর। বোহেমিয়ন স্বভাব তাঁর আচরণে, তাঁর ক্রিকেটে। এটাতেই তিনি কখনও আদৃত, কখনও নিন্দিত। তবু তিনি নিজেকে কৃত্রিম আবরণে আড়াল করার চেষ্টা করেননি কখনও। এমনকি মৃত্যুর মুহূর্তেও নয়। কেউ কেউ চলে যান, কেউ চলে গিয়েও থেকে যান। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ‘নটি-বয়’ অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস তেমনই এক ক্রিকেটার। পুলিস রিপোর্টে জানা যায় গতকাল রাত ১১ টা নাগাদ হার্ভে রেঞ্জ রোডে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। অ্যালিস রিভার ব্রিজে বাঁক নেওয়ার সময় গাড়িটি উলটে যায় এবং কয়েকটি পাকও খেয়ে যায়। আর সেই দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয় গাড়ির একমাত্র আরোহী মাত্র ৪৬ বছর বয়সী প্রাক্তন এই ‘অজি’ ক্রিকেট তারকার। পরিবারের পক্ষ থেকেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে।শ্যেন ওয়ার্ন, রডনি মার্শের পরে আরও একজন ক্রিকেট তারকার মৃত্যু সংবাদে শোকের ছায়া ক্রিকেট মহলে। বিতর্কিত মনোমালিন্যে একদা যুক্ত হয়ে-পড়া হরভজন সিংসহ শোয়েব আখতার, অ্যালান বর্ডার প্রমুখ ক্রিকেটাররা তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
লম্বা-চওড়া ঝাঁকড়া চুলের অধিকারী অল্র-রাউন্ডার ক্রিকেটারটি খুব স্বল্প অবকাশে ২৬ টি টেস্ট খেলে ৪০.৬১ গড়ে ২ টি সেঞ্চুরিসহ ১,৪৬২ রান করেছেন। তবে ওয়ান-ডে ক্রিকেটে ছিলেন যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য ও তুলনায় কৃতী। দুটি বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্য ছিলেন। ২০০৩ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটা সময় অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৮৬ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে বিপাকে পড়েছিল। ওখান থেকে অস্ট্রেলিয়া ৩১০/৮ রানের বিরাট লক্ষ্যে পৌঁছে যায় সাইমন্ডসের অনবদ্য অপরাজিত ১৪৩-এর দৌলতে। ১৯৮ টি ওয়ান-ডে ম্যাচে ৬ টি শতরানসহ ৫,০৮৮ রান করেন ৯০ প্লাস স্ট্রাইক-রেটে। তবে আলাদা করে উল্লেখ করতেই হবে ফিল্ডিং-নৈপুণ্যের কথা। রিকি পন্টিং তাঁর ফিল্ডিং সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছেন, “ওর মতো বড় চেহারার লোকের রিচ, অনুমান ক্ষমতা এবং গ্রাউন্ড কভারেজ ছিল হার্শেল গিবস বা জন্টি রোডসের চেয়েও উন্নত মানের। তাছাড়া ওর জোরালো হার্ড থ্রো ছিল অনেক বেটার।” রান আউট করার ক্ষেত্রেও প্রচুর অবদান আছে সাইমন্ডসের। অ্যালান বর্ডার বলেছেন “লোককে আনন্দ দেওয়ার মতো জোরালো শট নেওয়ার প্রবণতা ছিল।” উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে গ্লস্টার্সের পক্ষে গ্ল্যামোরগনের বিপক্ষে ম্যাচের দু ইনিংস মিলিয়ে ২০টি ছক্কা মারার রেকর্ড ছিল তাঁর। দীর্ঘদিন পরে তা স্পর্শ করেন বেন স্টোকস।
তবে স্বভাবগতভাবে সাইমন্ডস বহুবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। ২০০৮ সালে তিনি দাবি করেন হরভজন সিং নাকি তাঁকে ‘মাঙ্কি’ বলে গালি দিয়েছেন। এর ফলে ম্যাচ রেফারি মাইক প্রোক্টর ম্যাচের শেষে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করেন। তিন ম্যাচ ‘ব্যান’ করা হয় ভাজ্জিকে। তেমন কিছু প্রমাণিত না হওয়ায় পরে হরভজনের ওপর থেকে ব্যান উঠে যায়। যদিও লেভেল ২.৮ স্তরের অপরাধ হিসাবে ভাজ্জির ম্যাচ-ফি-র ৫০ শতাংশ জরিমানা হয়। অবশ্য আইপিএল টুর্নামেন্টে হরভজনদের সঙ্গে খেলেছেন ‘রয়’ ডাকনামের ক্রিকেটারটি। অনেকেরই হয়তো মনে আছে ডেকান চার্জার্সের হয়ে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে মাত্র ৫৩ বলে অপরাজিত ১১৭ রানের জমাটি ইনিংসটি কথা।
পথের দুর্ঘটনা অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে কেড়ে নিলেও ভাঙাচোরা সময়খন্ডে থেকে-যাওয়া কিছু কিছু উজ্জ্বল মুহুর্ত ক্রিকেট দর্শকের চোখে বেঁচে থাকবে অনেকদিন। “উইলোর উইল”-এর পক্ষ থেকে আমরাও জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা।