এভাবেও ফিরে আসা যায়?

‘টাইম লুপ’ জিনিসটা আজকাল মোটামুটি সবাই অল্পবিস্তর জানেন। ‘টাইম লুপ’ হচ্ছে একটা সময়ের মধ্যে আটকে যাওয়া, যেখানে আপনার সাথে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে।

অম্বাতি রায়ডুর এই বারবার সিদ্ধান্তবদল যেন আপামর ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে তাই।

গত বিশ্বকাপে গ্রুপ স্টেজে ভারতের পারফরম্যান্স, সেমিতে বিদায় ছাড়াও যে জিনিসটা চাইলেও ভোলা যাবে না তা হলো রায়ডুকে ডিঙিয়ে বিজয় শঙ্করের অনুপ্রবেশ। এবং তারপর বাকিটা সর্বজনসুবিদিত। এমএসকে প্রসাদের উল্লিখিত ‘থ্রি ডাইমেনশন’ নামক শব্দবন্ধ নিয়ে তোলপাড়, পাল্টা খোঁচা মেরে রায়ডুর টুইট ইত্যাদি ইত্যাদি। 

এক্ষেত্রে ক্রিকেট প্রেমীদের কাছ থেকে একশোভাগ সমর্থন পেয়েছিলেন রায়ডু। তবে রাগ ও সাময়িক আবেগের বশবর্তী হয়ে তিনি একটি বড় মাপের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, যার পোষাকি নাম ‘অবসর’। সমস্ত ধরনের ক্রিকেট থেকেই অবসর ঘোষণা করেছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই সিদ্ধান্ত রায়ডু নিয়েছিলেন জুলাই মাসে। 

অপ্রত্যাশিতভাবে একমাস পরেই অর্থাৎ, আগস্ট মাসে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন এবং জানান বিভিন্ন দেশ থেকে তিনি টি-টেন এবং টি-টোয়েন্টি লিগের নানান অফার পাচ্ছেন, তাই তিনি শুভাকাঙ্খীদের ডাকে সাড়া দিয়ে আবার ফিরছেন।

এই একই ঘটনাবলীর পুনরাবৃত্তি দেখা গেল শনিবার দুপুরে। 

অম্বাতি রায়ডু হঠাৎই টুইটারে জানান এটাই তাঁর শেষ আইপিএল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার তিনি সেই ট্যুইট ডিলিট করে দেন। পরে চেন্নাই সুপার কিংস কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এই অবসরের জল্পনা খারিজ করে দেওয়া হয়। 

একদম নিখাদ ‘Deja vu’ ফিলিংস।

পার্থক্য এই যে সিদ্ধান্ত বদলের মধ্যেকার সময়টা আগেরবার মাসেকখানেক ছিল, এবার ঘন্টাখানেক। সময়ের ব্যবধান যে হারে কমছে, তাতে এবার মুড সুইং বলাই যায়।

ইদানীং সেলিব্রিটিদের জীবনের সাথে সোশ্যাল মিডিয়া ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে গেছে। তাঁরা এই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বহু ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত জনসমক্ষে আনেন। ক্রিকেটারদের এহেন দৃষ্টান্তের ক্ষেত্রে বলতে হয়, দু’বছর আগে স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় ইনস্ট্যাগ্রামে অবসর ঘোষণা করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। এছাড়া আজকাল বহু ক্রিকেটার অধিনায়ক পদ থেকে ইস্তফা, অবসরগ্রহণের মতো বড় বড় সিদ্ধান্ত জানানোর ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহার করে থাকেন।

রায়ডুও একই পথ অনুসরণ করেছিলেন। ভালো কথা। কিন্তু বারবার নিজের সিদ্ধান্ত বদলের যৌক্তিকতা কী? বিশ্বকাপের সময় নির্বাচক এবং খানিকটা অধিনায়কের ওপর অভিমানজনিত কারণে তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেরকম এবার তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণ  হয়তো ছিল চলতি আইপিএলে খারাপ পারফরম্যান্স। কিন্তু মূহুর্তেই ভোল বদলের কারন কী? অভ্যন্তরীণ কোনো মদত নয় তো? যার অঙ্গুলিহেলনে মুহূর্তেই ভাইরাল হওয়া টুইট প্রত্যাহার করতে তিনি দু’বার ভাবেননি।

একজন সেলিব্রিটি ভালোভাবেই জানেন তাঁর সামান্য একটা কার্যকলাপ মানুষের মধ্যে কি মাত্রার প্রভাব ফেলতে পারে, তা সত্ত্বেও বারবার এই উলটপুরাণ কেন? এত বড় মাপের একটা সিদ্ধান্ত যা অবশ্যই নিজমস্তিস্কপ্রসূত বলেই ধরে নেওয়া হবে, সেটা নেওয়ার ক্ষেত্রে এমন দোনামোনা থাকবে কেন?

কথায় বলে ভারতীয়রা সিনেমা আর্টিস্ট এবং ক্রিকেটারদের ভগবান জ্ঞানে পূজো করেন। তাই দুজন সাধারণ মানুষও যদি আপনাকে আইডলের স্থানে বসিয়ে থাকেন, তাঁদের কাছে এক্ষেত্রে নীতির পরীক্ষায় পাশ করতে পারবেন তো?

‘অবসর ভেঙে ফিরে আসা’ কোনো নতুন জিনিস নয়। কিন্তু এই বাক্যবন্ধকে হাতিয়ার করে বারবার আসা-যাওয়ার খেলা খেললে ব্যাপারটা হাস্যকর হয় বইকি!

নিজের পরিণত বোধের প্রতি সুবিচার করুন অম্বাতি। নিজের আবেগের প্রতি নিয়ন্ত্রণ না রাখলে অদূর ভবিষ্যতে সিরিয়াস ইস্যুতে নেওয়া আপনার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং মতামতগুলো হাসির খোরাক হয়ে উঠবে।