বিরাট চঞ্চল, বিরাট উজ্জ্বল (নয়)!

আরও একটা শূন্য, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে। কিছুতেই যেন বিরাট নিজের ছন্দে ব্যাটিং করতে পারছেন না। সবচেয়ে অবাক করার মতো ব্যাপার যা, সেটা হলো, এবার আইপিএলের বাজারে তাঁর প্রিয় আরসিবি মোটামুটি খেলছে বটে, প্লে-অফে যাওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে। কিন্তু অধিনায়কত্বের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া বিরাটের অবদান বিশেষ কিছুই থাকছে না।

১২ ম্যাচ, রান ২১৬, গড় ১৯.৬৩! শ্রদ্ধেয় নেটিজনরা ভাবতেই পারেন এই পরিসংখ্যান একান্তই আমার কল্পনা, বিরাটকে টেনে হিঁচড়ে নাকি নামাতে চাইছি! সে কারনেই এমন একটি স্ট্যাটিস্টিক্স দেখানোর চেষ্টা নাকি করছি। কী করে বোঝাই এই বিরাট-ভক্তদের যে বিরাট যদি মাঠে নেমে ১৭ রান করেন, সেটাকে আমাকে ১৭ই লিখতে হবে, ৭১ নয়। বিরাটের বাবার সঙ্গে আমার বাবার অশান্তির কারণেই নাকি এভাবে আমি অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। দুজনের বাবাই এই মুহূর্তে উপরে চলে গিয়েছেন। আমি জানি না এরকম একটি তথ্য মাননীয় নেটিজন কোথা থেকে পেলেন, তবে সেই নিয়ে বাজার গরম করার জন্য “উইলোর উইল”-এর মঞ্চ ব্যবহার না করার অনুরোধ জানাই। সেই সঙ্গে অনুরোধ দয়া করে ক্রিকেট খেলাকে ভালবাসুন, এই মহান খেলার খুঁটিনাটি বোঝার চেষ্টা করুন। বিরাটকে ভালবাসতে গিয়ে সুনীল গাভাসকার, কপিলদেব মতো মহান ব্যক্তিত্বদের প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ টেনে নামাবেন না।

অতি সম্প্রতি কি বিরাটের ব্যাটিং দেখেছেন? পা নড়ছে না, বলের গতি অনুধাবন করার ক্ষেত্রে সময়ের ভুলচুক হয়ে যাচ্ছে, বোল্ডও হচ্ছেন। ফর্মে না থাকা সত্ত্বেও ইনিংসের শুরুতে হুক মারতে যাচ্ছেন, সময়ের ভুলচুক হয়ে যাচ্ছে। তাই অপ্রত্যাশিত ভাবে বারবার আউট হয়ে যাচ্ছেন। এতে আমার বা “উইলোর উইল”-এর দোষ কোথায়? আমার বিশ্বাস এই দীর্ঘ সময় ধরে চলা দুঃসময় বিরাট কাটিয়ে উঠবেন। আমি ভুলত্রুটি উল্লেখ করে লিখছি বলেই বিরাট তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যাচ্ছেন, এমন ভাবার কোন কারণ নেই। কোহলি ফর্মে নেই, এটা মেনে নিন। বিরাট কি চেষ্টা করছেন না? অবশ্যই করছেন। তবে নেটে আরও একটু বেশী সময় দিতে হবে। তাঁর গুরু, সরি মহাগুরু, পরামর্শ দিয়েছেন তাঁকে বিশ্রামে যেতে। সেখানে সুনীল গাভাসকার বলেছেন খেলতে খেলতে নিজের ফর্ম ফিরে পেতে হবে এবং ইনিংসের শুরুতে ক্রিকেটের ব্যাকরণ মাথায় রেখে ব্যাট করতে হবে। অযথা তাড়াহুড়োর রাস্তায় না গিয়ে খুচরো রান নিতে হবে, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেই খানিকটা ছন্দে ফেরার সম্ভবনা দেখা যাবে। বিরাটের খেলা দেখে কি মনে হচ্ছে যে তিনি এমন পরামর্শ (যা আসলে মহামূল্যবান মতামত) মাথায় রেখে খেলছেন? মানুষ হিসেবে গাভাসকারকে পছন্দ নাই-বা করতে পারেন বিরাট, কিন্তু তাঁর ক্রিকেট প্রজ্ঞাকে অস্বীকার করতে পারেন? নাকি সুনীল গাভাসকার বলছেন বলেই এমন পরামর্শ তিনি মানছেন না? এতে কার ক্ষতি হচ্ছে? শুভানুধ্যায়ীরা কেন একজন সুদক্ষ কোচের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন না? এটা কিন্তু তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে এই কথাগুলো বললাম। সবকিছু যখন তালগোল পাকিয়ে যায়, তখন ঠান্ডা মাথায় ভুলগুলো চিহ্নিত করতে হয় সবার আগে এবং সেটা করতে গিয়ে সবার আগে বিরাটকে নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই করতে হবে। লড়াইটা কিছুই না। যতদিন ক্রিকেট খেলবেন, এই মহান খেলাটার থেকে নিজেকে বড় ভাববেন না এবং দুনিয়ার সবকিছু ভুলে নিষ্ঠা ভরে ব্যাট-পুজো করতে হবে, অহংকারী মনোভাব, উদ্ধত হয়ে পড়ার যে আলখাল্লা সেটাকে খুলে ফেলতে হবে এবং শুধু রান করার দিকে মন দিতে হবে। একমাত্র তবেই রুষ্ট হয়ে যাওয়া ক্রিকেট-দেবতার মন গলতে পারে। এটা এমন একটা খেলা যেটা মুহূর্তের মধ্যে এভারেষ্টের চূড়া থেকে মাটিতে টেনে নামিয়ে দিতে পারে এবং এখন বিরাট সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন (হয়তো মুখে সেটা স্বীকার করবেন না)। শুভানুধ্যায়ী এবং নেটিজনরা এই সময় কিছুই না করে বিরাটকে সমর্থন জানাতে গিয়ে যা করছেন তাতে আমার মাসির কান কাটার গল্প মনে পড়ে যাচ্ছে। ভালবাসতে নিষেধ করছি না, কিন্তু ভুল রাস্তায় চলে যাওয়া ক্রীড়াবিদকে ঠিক রাস্তায় আনার জন্য একটু কঠোর না হলে কিন্তু একদিন বিরাটও একই কথা বলবেন। আপনাদের চেয়ে বিরাটের প্রতি আমার ভালবাসা আপনাদের থার্মোমিটারে কম মনে হতেই পারে, সেটা তো আপনাদের সমস্যা, আমার নয়।