চলতি আইপিএলের রান সংগ্রাহকদের লিস্টে বিরাট কোহলির ঠিক পরেই আছেন শিলিগুড়ির বাঙালি। তাঁর সংগ্রহে বর্তমানে ২০৯ রান যা তাকে পৌঁছে দিয়েছে লিস্টের ৩২ নম্বর স্থানে। পার্থক্য একটাই অন্যদের সাথে এবং তা হলো এই লিস্টে সাহা পৌঁছেছেন ৭টি ইনিংস খেলে যেখানে অন্যরা অন্তত ১০টি।
আজ স্মার্টস্ট্যাট দেখালো জসপ্রিত বুমরাহর বিরুদ্ধে পাওয়ার-প্লেতে ৯টি বল খেলে ২৫ রান করেছেন ঋদ্ধিমান সাহা। এই ২৫টি রান বুমরাহর বিরুদ্ধে কোনো টিটোয়েন্টি ম্যাচে পাওয়ারপ্লেতে কোনো ব্যাটারের করা সর্বোচ্চ রান।
প্রথম ওভারে ড্যানিয়েল স্যামস গুজরাটের ইনিংসকে একটু বিব্রত করার পর বুমরাহর ওভারে পয়েন্ট অঞ্চলে চার, মিড উইকেট দিয়ে ছয় এবং লফ্টেড অফ-ড্রাইভে চার মেরে ১৪ রান নেন ঋদ্ধি। এর পরের ওভারেই পুল করে ফাইন-লেগে ছয় এবং তার পর ইয়র্কারে চার মেরে ৯ বলে মোট ২৫ রান নেন বুমরাহর। পাওয়ার-প্লেতে আজ ঋদ্ধিমান সাহার ২৩ বলে ৩৭ রানই হয়ে গিয়েছিলো গুজরাটের একটি অসাধারণ শুরুর কারণ। বস্তুত উল্টোদিকে যখন খুব বাজে ভাবে ডট বল হজম করছেন শুভমান গিল তখন সাহার এই ইনিংসটি যেন অন্যরকম প্রাণশক্তির সঞ্চার করে ইনিংসে।
এই আইপিএলে আজকের ৪০ বলে ৫৫ রানের ইনিংস নিয়ে এখনও অবধি দুটি অর্ধশতক করেছেন ঋদ্ধিমান এবং ওপেনার হিসেবে দুরন্ত সফলতা পেয়েছেন। নিলামে ১ কোটি ৯০ লক্ষ্ টাকায় বিক্রীত হওয়ার পরেও খেলা নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন উঠে গিয়েছিলো একসময়। এরপরে আবার চক্রাকারে ঘুরতে থাকে তাঁর আইপিএল ভাগ্য। আসেন এক বিদেশী কিপার-ব্যাটার, তিনি ব্যর্থ হন বা চোট পান এবং তারপরে ওপেনিংয়ে আসেন ঋদ্ধি। এরপরে আবার সফল হন। ২০১৮ সাল থেকে যেন এমনই চলছে প্রতিবার। প্রতিবার একই ভঙ্গিমায় ফিরছেন তিনি।
২০১৩ সাল অবধি সবসময় ছিলেন আইপিএলে দ্বিতীয় পছন্দ। তারপরে পাঞ্জাব কিংস দলে যাওয়ার পর কেরিয়ারে পরিবর্তন আসে, করেন আইপিএল সেঞ্চুরি এবং খেলেন বেশ কিছু ম্যাচ-জেতানো ইনিংস। এরপরে কেরিয়ারের শেষ লগ্নে এসেও নিজস্ব ফর্ম বজায় রেখে খেলে চলেছেন।
এক সময় ছিলো যখন নিয়মিত সুযোগ পেয়ে ভারতীয় দলে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ঋদ্ধিমান। ২০১৬-১৭ টেস্ট মরশুমে তাঁর ৪৪.১০ ব্যাটিং গড় প্রমাণ করে ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন ঋদ্ধি। কিন্তু পুরো কেরিয়ার জুড়ে লেগে ছিলো অনিয়মিত সুযোগ পাওয়া। সেই অনিয়মিত সুযোগই হয়তো আজ তার ২৯.৪১ টেস্ট ব্যাটিং গড়ের জন্য দায়ী, বা ১৫ বছর আইপিএল খেলেও রান আড়াই হাজার না হওয়ার জন্যও দায়ী। নাহলে এই লোকটাই তো নিয়মিত সুযোগ পেয়ে ৭ ইনিংসে ৩৯৮ করে বাংলাকে বিজয় হাজারে জিতিয়েছেন, ২০১৭-তে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছেন কঠিন অবস্থায় এবং এই ৩৮-এও নিজেকে প্রমাণ করে যাচ্ছেন অবিরত। যদি জন্ম সাল ১৯৮৪ না হয়ে পিছিয়ে যেত আরো দশটি বছর বা নিদেনপক্ষে পাঁচটি বছর – ১০০টি টেস্ট হয়তো থাকতো নামের পাশে।
ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন? কার এতো ধৃষ্টতা?