বালকোচিত স্বপ্ন থেকে ঝলমলে আইপিএল – স্যালুট কার্তিকেয়!

২০১৩ সালের কথা। বছর পনেরোর একটি ছেলে দিল্লির সঞ্জয় ভরদ্বাজের অ্যাকাডেমিতে আসে একজন বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে। তার জন্ম সুলতানপুরে হলেও মাত্র ১৫ বছর বয়সে সে বাড়ি ছাড়ে ক্রিকেটের প্রতি এক অকৃত্রিম ভালোবাসার তাড়নায়। হতে পারতো অবাস্তব ধাওয়া করা, হয়তো তার এই ভালোবাসা ট্যাগ পেত অপরিণত মানসিকতার। যার বাবা উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সাধারণ একজন কনস্টেবল, সেই ছেলের গগনচুম্বী স্বপ্ন দেখা তো আপাতভাবে অবাস্তব বটেই। কিন্তু মাত্র পনেরো বছর বয়সে সেই স্বপ্নের তাড়নায় আসা দিল্লিতে যেখানে থাকতো লোকাল ক্ষেপ খেলা ক্রিকেটার বন্ধু রাধেশ্যাম।


দিল্লির বিভিন্ন অ্যাকাডেমিতে ট্রায়ালের জন্য যাওয়া হলেও বাড়তি মাসমাইনের চাহিদা দরজা খোলেনি কার্তিকেয়র জন্য। অবশেষে সঞ্জয় ভরদ্বাজের অ্যাকাডেমি কোনোরকম অর্থ ব্যতীত প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয় তাকে। কার্তিকেয়কে নেটে একটি বল করতে দেখেই তার অ্যাকশন পছন্দ হয় সঞ্জয়ের। এরপরেও চ্যালেঞ্জ ছিলো নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ জোগানোর ব্যবস্থা। তার জন্য অ্যাকাডেমি থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে গাজিয়াবাদ গিয়ে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন সারা রাত। রাতে ফ্যাক্টরিতে থাকা এবং বেতন দিয়ে খাবারের জোগাড় করা এরপরে আবার পরদিন সকালে ফিরে অ্যাকাডেমির প্র্যাক্টিস – এইভাবেই গঠিত ছিলো তাঁর দিনলিপি।
বাঁ-হাতি অর্থোডক্স স্পিনার হয়ে শুরু করলেও প্রতিযোগিতা কমাতে রপ্ত করেন বাঁ-হাতে রিস্ট স্পিন। নতুন স্কিল রপ্ত করতে তাঁর অনেকটা সময় লাগলেও সেই স্কিল একেবারে সফলভাবে রপ্ত করেন কার্তিকেয়। তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ আসে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ২০২২ আইপিএলের নবম ম্যাচে। সেই ম্যাচে নিজের অভিষেক করে রং-আন, লেগ-স্পিন এমনকি ক্যারম-বলও করেন কুমার।
কার্তিকেয়কে দিল্লির একটি স্কুলে ভর্তি করান সঞ্জয়। স্কুল দল খেলে পরবর্তীতে ওমনাথ সুদ টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হন কার্তিকেয়। কিন্তু দিল্লি দলে ট্রায়ালে বারবার প্রত্যাখ্যান পান তিনি। এরপরে মধ্যপ্রদেশে ফিরে গিয়ে খেলেন ডিভিশন ক্রিকেট এবং দুটি মরশুমে মোট ১০০ উইকেট পান। এরপর সুযোগ পান রাজ্য দলের ট্রায়ালে। সেখানে প্রতি ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে রঞ্জি ট্রফি অভিষেক করেন এবং টিটোয়েন্টি অভিষেক করেন মধ্যপ্রদেশ দলের হয়ে। তাঁর টিটোয়েন্টি ইকোনমি ৫.২৯ হওয়া এবং বলের ভেরিয়েশন তাঁকে নজরে আনে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স স্কাউটদের। এবং আইপিএল অভিষেকেই অভাবনীয় সফল তিনি।
অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে এককভাবে নিজের স্বপ্নকে যত্ন করে বাড়িয়ে তোলা সহজ ছিলোনা। সেই স্বপ্নপূরণের রাস্তায় ছিল বাবার কাঁধে নিজের স্বপ্নপূরণের আর্থিক বোঝা না চাপানোর জেদ, মাত্র ১০ টাকার বিস্কুটের খরচ তোলার জন্য মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়েছে রাস্তায়। তবুও হেরে যাননি কার্তিকেয়। শচীন তেন্ডুলকার বলেছিলেন “নিজের স্বপ্নকে ছেড়োনা। স্বপ্ন সত্যি হয়।” এবং আজ সেই শচীন তেন্ডুলকারের মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলেই একজন সদস্য তিনি।
স্বপ্ন তো সত্যিই হলো, কুমার কার্তিকেয়।