ব্রায়ান লারার জন্মদিন বলে কথা। তাই সোমবার, তাঁর ৫৩তম জন্মদিনে সকাল থেকেই বেজেছে টেলিফোন। “উইলোর উইল” অবশ্য রবিবার রাত ১২টার পর শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। এবং প্রত্যেক বারের মতো এবারও যেন তিনি খানিকটা লাজুক লাজুক ভঙ্গিতে শুরুতেই বলে উঠলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে হয় ঠিকই। ভেতরে ভেতরে অনুভব করি যে আরও একটা বছর জীবন থেকে কেটে গেল। আমাদের পরিবারে অনেক ভাই–বোন। আমি ছিলাম ছোট। তাই মা ও বাবার কাছে একটু বেশি আদর যে পেতাম সেটা আমি স্বীকার করি। করবও।’ এবং দুম করে বলে বসলেন, ‘এমন দিনে এবার আর একজনের টেলিফোন পাব না। প্রত্যেকবার শেন ওয়ার্নের টেলিফোনে প্রথমে আসত নানা রকমের জোকস, তারপরে অসাধারণ সব ক্রিকেটীয় প্রসঙ্গ। যুক্তি, পাল্টা যুক্তি। গতবারও ভাবিনি এই মানুষটাকে সমাধিস্থ করতে হবে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে আমি চলে গিয়েছিলাম বন্ধুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।’
ওখান থেকেই চলে এলাম সানরাইজার্সের এবারের বাঁ-হাতি ওপেনার অভিষেক শর্মার চমকপ্রদ উত্থানে। সুনীল গাভাসকার, কেভিন পিটারসেন, ম্যাথিউ হেডেনরা অভিষেকের ব্যাটে যে ব্যাট স্যুইং দেখছেন, তা যে ব্রায়ান লারার পাঠশালা থেকে তৈরি হয়েছে, সে ব্যাপারে ওঁরা নিশ্চিত। যা শুনে বার্থডে বয় বলে গেলেন, ‘অভিষেক হল এক প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। ক্রিকেট–ঈশ্বর ওকে যে উপহারটা দিয়েছেন, তা হল টাইমিং। আমি শুধু ওই উপহারকে অক্ষত রেখে ওর ঘষামাজা করে যাচ্ছি। উচ্চতা ভাল। ব্যাটের রিচ পৌঁছচ্ছে অনেকটা। এ সবের মাঝে চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কোন বলটায় শট নেবে আর কোনটায় ক্রিজের ভেতরে দাঁড়িয়ে খেলবে। যথেষ্ট সাহসী। আমি ওকে উৎসাহিত করে যাচ্ছি রানের খিদে বাড়ানোর ব্যাপারে।’ আমরা কিন্তু দেখছি, আউট হয়ে ডাগ-আউটে ফিরেও ব্রায়ান লারার পাশেই গিয়ে বসছেন অভিষেক। বোঝা যাচ্ছে, পেয়েছেন যখন হাতের কাছে, তখন প্রতি মুহূর্তে ব্যাটিং শেখার প্রশ্নমালা মেলে ধরতে চাইছেন লারার সামনে।
এখনও পর্যন্ত কোচ হিসেবে খুব বেশি নাম করেননি। কিন্তু অভিষেকের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই কিন্তু মনে করছেন ব্যাটিং কোচ হিসেবে সত্যিকারের একটা ভাল ক্যারিয়ার হয়ত অপেক্ষা করে আছে ব্রায়ান লারার সামনে, ‘আমি কোনও দিন ভেবে কাজ করেছি, একথা কেউ বলতে পারবে না। তা হলে টেস্টে আমার আরও হাজার দু’তিনেক রান বাড়ত। মনের আনন্দে খেলেছি, জীবনকে উপভোগ করেছি, কোচিংও করছি ওই একই মানসিকতায়। আমার কথা শুনে যদি কেউ নিজের খেলার উন্নতি ঘটাতে পারে, তা হলে তো আনন্দ হবেই। কোচিংয়ের কাজ ভাল, নাকি কমেন্ট্রি? এ ব্যাপারেও আমার মনে হয়েছে আনন্দ আছে দুটো কাজেই। মোদ্দা কথা হল, দ্য গ্রেট গেম অফ ক্রিকেটের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখা।’