এটা একেবারেই আমার দাবী নয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এমন হতেই পারে। দুর্গাপূজো ইউনিসেফের বিচারে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পেয়েছে বলেই এই আশা করছি না। বিশ্বায়ন যেভাবে ঘটছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা যেভাবে দুনিয়াকে পাল্টে দিচ্ছে, তাতে প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘটনা ঘটে চলেছে দুনিয়ায়, সে রকমই এই অদ্ভুত আশার ব্যাপারটাও দানা বেঁধেছে। আবারও বলছি হতে পারে। এটা কোন খবরের আভাস নয়, বা খবরও নয়। নেটিজেনরা ভাবতেই পারেন নেশাগ্রস্ত হয়ে হঠাৎ লর্ডসে দুর্গাপূজোর কথা ভাবছি বোধহয়। “উইলোর উইল”-র মহামান্য এক পাঠক আমার চৌহদ্দির কাছেপিঠে না এসেও আমকে নাকি নেশাখোর হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। গত একচল্লিশ বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করতে করতে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ার হাতছানি কম ছিল না। আমি কলকাতার একটা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, যার ১১৯ বছর বয়স এবং এই শহরে যাদের একটা পানশালাও আছে। চা পান করি দিনে কুড়ি বার। শ্রদ্ধেয় পাঠক বা তাঁর পরিবারের কেউ যদি মদ্যপান করতে চান, সেখানে আসতে পারেন। সব খরচ আমার। তবে নিষেধ করবো অন্যকে না জেনে আক্রমণের রাস্তায় যেতে। আমরা একটি বিশেষ পেশায় আছি, এখনও সততার সঙ্গে নিজের অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। কোন কৈফিয়ত দেওয়ার জন্য এই লেখা নয়। এই এনার্জি আরও বেশি করে পড়াশুনার কাজে ব্যবহার করলে ভাল হয়। এবার থেকে কোন অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, ফোন বা ই-মেলের মাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়াতে আমি নেই। মে দিবসের দিন সকালে সম্পাদক পার্থ প্রতিম রায় পাঠকদের প্রতিক্রিয়া সহ কয়েকটি অভিযোগের কথা জানালো, তাই ভুল বোঝাবুঝি পরিষ্কার করার জন্য নিজেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এলাম, প্রয়োজনে মাঝ পিচে এসে গ্যালারিতে পাঠাতেও সময় লাগবে না।
১৯৮৭ সাল থেকে লর্ডসে যাচ্ছি। সেবার এমসিসির বাইসেন্টিনারী টেস্ট ম্যাচ কভার করতে গিয়েছিলাম। তখন থেকেই দেখছি, ওই মাঠে শ্বেতাঙ্গদের একচেটিয়া কারবার। সে এক লম্বা কাহিনী, অন্য সময়ে লিখবো। গত ৩৬ বছরে অন্তত ৪০বার ওই মাঠে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে কিন্তু কখনও মনে হয়নি লর্ডসে নামাজ পড়ার সুযোগ পেতে পারেন মুসলমান ভাই-বোনেরা। “ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার”-এর পর শ্বেতাঙ্গদের নাক কাটা গেছে বেশ ভালরকম। ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় এমন উদ্যোগ নিতে হলো লর্ডস কর্তৃপক্ষকে।
কপিলদেবরা বিশ্বকাপ জেতার পরে ‘৮৩-তে সে রাতে যে জায়গাটায় ভাঙরা নেচেছিলেন, সেখানেই সাদা চাদর বিছিয়ে নামাজ পড়া হচ্ছে। আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিক পড়ছেন। লর্ডসের ড্রেসিংরুম এবং লং রুমে হচ্ছে ইফতারের জন্য মুসলমান ভাই-বোনদের জমায়েত এবং প্রার্থনা। জেনে অবাক হবেন, লর্ডসের ব্যালকনির যে জায়গায় দাঁড়িয়ে লয়েড, কপিলরা বিশ্ব জয়ের ট্রফি গ্রহণ করেছেন, সেখানে মোয়াজ্জেম মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে আজান-এর ডাক দিচ্ছেন, যা ছড়িয়ে পড়ছে লর্ডসের গ্রেস গেট থেকে গোটা স্টেডিয়াম। আপাতত লর্ডসে কোন খেলা হচ্ছে না, তবে এই অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকছে লর্ডসের সবুজ ঘাস এবং গ্যালারী। অসাধারণ পরিবেশ তৈরি হলো লর্ডসে – এমনটাই মনে করছেন সেখানকার মহিলা সিইও কেট মিলার। বোঝা যাচ্ছে এখান থেকেই ব্রিটিশরা শান্তির বাতাবরণ আনার জন্য অন্য সম্প্রদায়ের উৎসবকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছে। অবাক হবেন এটা জেনে যে লর্ডসের লং রুমে ইফতার করছেন গোল গোল টেবিলে বিভক্ত হয়ে।
সেখানেই ইসিবি কর্তৃপক্ষ আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের একদিনের দলের অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যানকে। মুসলমান ভাই-বোনদের সঙ্গে তিনিও ইফতারি খাবার গ্রহণ করছিলেন একই টেবিলে বসে। ইসিবি-র এহেন কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন মর্গ্যান।
কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিজ্ঞতা গোটা পৃথিবী জানে, ধিক্কৃত হয়েছেন ওঁরা বারংবার অতীতে। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ইংরেজরা নিজেদের ভুল শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই কে বলতে পারে, আগামীদিনে লর্ডসে দুর্গাপূজো হবে না? এক্ষেত্রে যেটা চাই সেটা হলো লর্ডস কর্তৃপক্ষকে বিষয়টার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলা। ইফতার হচ্ছে, ভালোই তো। কী বলবেন এটা একটা ভান? ভালোর ভানও ভালো। অবশ্য নেটিজনেরা অন্যরকম ভাবতেই পারেন।