এই হিরওয়ানিকে আমরা চিনতাম না। ‘তেষ্টা পেয়েছে? তাহলে তো কুয়োর কাছে যেতে হবে।’

নরেন্দ্র হিরওয়ানির ব্যাপার-স্যাপারই আলাদা। যখন খেলতেন, তখন কারোর ইয়েস-ম্যান ছিলেন না এবং মুখের ওপর যোগ্য জবাব দিয়ে দিতেন। সত্যি কথা হজম করতে পারেন না অনেকেই, তাই দ্রুত শত্রুর সংখ্যা যায় বেড়ে। নরেন্দ্র হিরওয়ানিরও তাই হয়েছে এবং তাতে অবশ্য নিজেকে বদলানোর বিন্দুমাত্র প্রয়োজন অনুভব করেননি তিনি কখনও। এখনও হিরু একইরকম থেকে গেছেন।

শুনলে অবাক হবেন, গোরক্ষপুরে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে যখন ইন্দোরে এসে পায়ের তলায় মাটি ছিল না, তখন অনুভব করেন প্র্যাক্টিস সেরে এসে যদি বাজার করা, রান্না করার কাজ করতে হয়, তাহলে নিবিষ্ট মনে অনুশীলন করা যাবে না। তাই বাড়ির লোকেরা  বয়সে বড় একজন গ্রামতুতো দাদাকে ওনার কাছে পাঠিয়েছিলেন, রান্না করার জন্য। বাড়ি ফিরে আর কখনও রান্নার চিন্তা করতে হয়নি হিরুকে। 

শুনলে অবাক হবেন, ওই মানুষটি এখনও হিরওয়ানি পরিবারের সঙ্গেই আছেন। অবাক হবেন না, পরের তথ্য জানতে পেরে। বয়সে বড় হওয়ায়, যখনই দেখা হয়, নরেন্দ্র হিরওয়ানি ওঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন, ‘আরে ও তো আমার অভিভাবক। আমার বাড়ির কাছেই ওকে বাড়ি করে দিয়েছি, ওর বাড়ির সব দায়িত্ব আমার, যে মানুষের জন্য আমি ভারতের হয়ে খেলতে পেরেছি, তার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে অসুবিধা কোথায়?” এবার নিশ্চয়ই বোঝা গেল, নরেন্দ্র হিরওয়ানিকে কেন আলাদা সন্মান করেন ওর বন্ধুবান্ধবরাও। 

জীবনের প্রথম টেস্টে যিনি ১৬ উইকেট পেয়েছিলেন, তাঁকে আটকাবে কে? শুরুতে এমন মনে হয়েছিলো হিরওয়ানিরও। কিন্তু পাকেচক্রে বেশি খেলতে পারেননি, এখন মন দিয়েছেন কোচিংয়ে, ‘প্রথাসিদ্ধ ব্যাকরণ বইয়ের পথে আমি কোচিং করিনা। আমার কোচিং হলো অদ্ভুত ভেষজ প্রথায়। বোলারদের কাছে জানতে চাই, কোথায় তাদের অসুবিধা হচ্ছে অথবা কেমন সাফল্য প্রত্যাশা করছে। এরপরে সেই বোলারের বোলিং ঘরানাকে মোটামুটি অক্ষত রেখে, উন্নতির রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। একইসঙ্গে তার মানসিক শক্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নিই।’ লখনউ সুপারজায়ান্টসের স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে যুক্ত হওয়ার পরেও এই ভেষজ কায়দায় কোচিং করিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্দরমহলের পরিস্থিতি কেমন, কেমন উপভোগ করছেন কোচিং ওখানে – এ বিষয়ে জানতে বেশ খানিকক্ষণ আড্ডা দিলাম আর তারই নির্যাস নিচে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

— কী ব্যাপার?‌ তুমি নাকি অল-রাউন্ডার?‌

— ইয়েস স্যার, আই অ্যাম অ্যান অল-রাউন্ডার।

— তাই নাকি?‌ কই নেটে তো বোলিং করতে দেখি না।

— আসলে গত ক’‌দিন নেটে চার–‌ছয় মারা প্র্যাকটিস করছিলাম। এবার থেকে আপনার কাছে রোজ বোলিং শিখতে আসব।

ঠিক এভাবেই কথাবার্তা বলেছেন লখনউ সুপার জায়েন্টসের স্পিন বোলিং কোচ নরেন্দ্র হিরওয়ানির সঙ্গে দীপক হুডা। এবং সঙ্গে সঙ্গেই একান্ত নিজস্ব ভঙ্গিমায় হিরওয়ানি জবাব দিয়েছেন, ‘‌তৃষ্ণা পেলে কুয়োর কাছে যেতে হয়। তারপর বালতি ফেলতে হয়। তবে জল ওপরে উঠে আসে। তেমনি যদি শিখতে চাও, তা হলে কুয়োর কাছে যেতে হবে।’‌ ইঙ্গিতটা বুঝে গেছেন দীপক এবং সঙ্গে সঙ্গেই নিয়ম করে হিরওয়ানির কাছে আরও ভাল করে স্পিন বোলিং আয়ত্তে আনার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, ‘‌মনে হয় আইপিএল চলাকালীন হুডা সত্যিকারের এক ভাল স্পিনার হয়ে উঠবে। আমি ওকে বলে দিয়েছি, অলরাউন্ডার হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চাইলে বোলিংয়ে উন্নতি করতেই হবে, অন্যথায় ইউ আর ওনলি আ ব্যাটার। প্রতিভা আছে। আমি চাই না, ভাল স্পিনার হওয়ার জন্য ব্যাটিং বিভাগের সঙ্গে ও কোনও কম্প্রোমাইজ করুক।’‌

একই সঙ্গে হিরওয়ানি সময় দিচ্ছেন রবি বিষ্ণোইকেও, ‘‌হয়ত ও স্ট্রিট স্মার্ট নয়। তবে, একেবারে প্রতিভায় ডগমগ। ওর হাতে যে ফাস্টার ওয়ান আছে, সেটি একটি বিপজ্জনক ডেলিভারি। ভারতের হয়ে বিষ্ণোইয়ের অনেক ম্যাচ খেলা উচিত। আমি ওর বোলিংকে পাল্টানোর কোনও চেষ্টা করছি না। শুধু একটু–‌আধটু পরিমার্জন ঘটানোর চেষ্টা করি। আর ম্যাচ সিচুয়েশন অনুযায়ী কী করা উচিত, সেটা নিয়ে আলোচনা করি। মানসিক শক্তি বাড়ানোর কথা বলি। এটাই আসল।’‌

 এই ফ্র্যাঞ্চাইজির মেন্টর গৌতম গম্ভীর নিয়ে এসেছেন হিরওয়ানিকে, ‘আমি তো বাড়িতে বসেছিলাম। গম্ভীর নিয়ে এল। আনন্দের সঙ্গে কাজ করছি। ওকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমাদের স্পিনাররা ভাল বোলিং করলে আনন্দ হবে। খাটাচ্ছি খুব। বেঞ্চে বসে আছে কর্ণ শর্মা। ওর পিছনেও সময় দিচ্ছি। কে বলতে পারে, কবে কর্ণকে কাজে লাগবে।’‌ এরই মাঝে দিলেন একটি সুখবর, ছেলে মিহিরের বিয়ে। পাত্রী নিমিশার সঙ্গে। বিয়ের আসর ইন্দোরে, ২২ এপ্রিল। ৪ দিনের জন্য ছুটি নিয়ে শ্বশুর হতে যাবেন। গৌতম গম্ভীর ছুটি দিয়েছেন ৪ দিনের জন্য‌।‌