‘চোকার্স’ – বিগত কয়েক বছরে এই শব্দটির সাথে সমার্থক হয়ে গেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের নাম এবং এই বিশেষ শব্দবন্ধের প্রতি সুবিচার করে মরশুমের প্রথম ম্যাচে ২০৫ রান বোর্ডে তুলেও পাঞ্জাব কিংসের কাছে পরাজয় স্বীকার করেছে ফাফ ডু প্লেসিসের নেতৃত্বাধীন ব্যাঙ্গালোর। নেট দুনিয়ায় যা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপের ঢেউ। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, অধিনায়কও পরিবর্তন হয় কিন্তু ‘গার্ডেন সিটি’-র ভাগ্যাকাশে ব্যর্থতার ঘন কালো মেঘ কাটিয়ে ওঠে না সাফল্যের ঝলমলে রোদ। এমতাবস্থায় আজকের (৩০ মার্চ) মুম্বাইয়ের ডাঃ ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ২০২২-এর ষষ্ঠ ম্যাচে যখন কলকাতা নাইট রাইডার্সের মুখোমুখি হবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর তখন তারা তাদের ভাগ্যাকাশের দ্রুত পরিবর্তনের দিকেই তাকিয়ে থাকবে।
প্রথম ম্যাচে বোলিং ব্যর্থতায় ঢাকা পড়ে যায় ফাফ ডু প্লেসিসের অধিনায়কোচিত ৮৮ (৫৭) ও শেষবেলায় দিনেশ কার্তিকের ঝোড়ো অপরাজিত ৩২ (১৪) রানের ইনিংস দু’টি। কলকাতার বিপক্ষে ডু প্লেসিস আশা করবেন মহম্মদ সিরাজ – হাসারঙ্গারা ছন্দে ফিরবেন। নাহলে অতীতে এই ব্যাঙ্গালোরের বিপক্ষে রাসেল-নারিনরা কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন তা সর্বজনবিদিত। তাই কাজটা মোটেও সহজ হবে না ব্যাঙ্গালোরের কাছে।
এই কোটি টাকার লিগে, কোটি কোটি টাকার প্লেয়ার সমৃদ্ধ কোনো দল যে নির্দিষ্ট কোন একজন প্লেয়ারের অনুপস্থিতি এতটা অনুভব করতে পারে তা ব্যাঙ্গালোরকে না দেখলে বোঝা যেত না। পুরো দলটার ভারসাম্যই যেন নড়বড়ে হয়ে গেছে এই একটা খেলোয়াড়ের অভাবে। অবশ্য খেলোয়াড়টিও যে সে কেউ নন। তিনি হলেন বিখ্যাত অজি অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। যার অনুপস্থিতি কাল হয়ে উঠেছে ব্যাঙ্গালোরের কাছে। মিডল-অর্ডারে সাবলীল ভঙ্গিতে স্পিনারদের সামলানোই শুধু নয়, বল হাতে অফ-স্পিনার হিসেবেও যে তিনি অপরিহার্য তার প্রমাণ আবারও হয়ে গেছে পাঞ্জাব ম্যাচে। একজন অফ-স্পিনারের অভাব পুরো ম্যাচ জুড়েই দেখা গিয়েছিল সেদিন, আর যে সুযোগের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করেছিলেন পাঞ্জাবের দুই অভিজ্ঞ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান ও ভানুকা রাজাপক্ষে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধেও ম্যাক্সওয়েলকে পাচ্ছে না ব্যাঙ্গালোর আর বিপক্ষে দলে আছে তিন তিন মারকুটে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান — ভেঙ্কটেশ আইয়ার, নীতীশ রানা এবং সুনীল নারিন। যা স্বভাবতই চিন্তার ভাঁজ ফেলবে ব্যাঙ্গালোর টিম ম্যানেজমেন্টের কপালে।
তবে বোলিং ব্যর্থতার মাঝেও ব্যাটিংয়ে গভীরতা ভরসা জোগাবে আরসিবি কে। আর সিরাজ ও হাসারঙ্গা একবার ছন্দে ফিরলে বোলিংয়েও উন্নতি করবে তারা। কিন্তু উল্টোদিকে ঠিক এখানেই অশনি সংকেত কেকেআরের কাছে। টিম হিসেবে অল-রাউন্ড পারফরম্যান্সের দ্বারা নতুন অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারের নেতৃত্বে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ছয় উইকেটে সহজ জয় তুলে নিয়ে গত আইপিএল ফাইনালে হারার বদলা নিলেও তাদের ডেথ-বোলিং যথেষ্ট নড়বড়ে লেগেছে। উমেশ যাদব দুর্দান্ত শুরু করলেও অন্তিম তিন ওভারে কেকেআর ডেথ-বোলিং হজম করে ৪৭ রান। যা চিন্তায় রাখবে (কেকেআর বোলিং কোচ) ভরত অরুণ কে।
টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নাও ও পরে রান তাড়া করে ম্যাচ জেতো — শিশিরের ভ্রুকুটি থাকুক আর না থাকুক, ইদানিং কালে ম্যাচ জেতার মন্ত্র হয়ে গেছে এটিই। তাই স্বাভাবিকভাবেই আজ যে দলই টস জিতুক না কেন তারা প্রথমে ফিল্ডিং করবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এমনিতে ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামের স্ট্রেট বাউন্ডারি ছাড়া বাকি স্কোয়ার বাউন্ডারিগুলি যথেষ্ট দীর্ঘ। আর পিচে ঘাস থাকায় স্পিনারদের খুব একটা সুবিধা হবেনা। আরসিবি তাদের প্রথম ম্যাচ এখানেই খেলেছে তাই কেকেআরের তুলনায় মাঠ, পরিবেশ ইত্যাদি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকবে ব্যাঙ্গালোরের। ডি ওয়াই পাটিলে দু’টি ম্যাচের মধ্যে দু’টিতেই জিতেছে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স (২০১০ ও ২০১১), আর ব্যাঙ্গালোর সেখানে এই মাঠে তাদের তিনটি ম্যাচের মধ্যে জিতেছে মাত্র একটিতে (২০১০)।
‘হেড-টু-হেড’-এও এগিয়ে থাকছে ‘সিটি অফ জয়’ — ১৬-১৩। গতবছর তিনবার সাক্ষাতে এলিমিনেটর সমেত দুইবার জয় পেয়েছে কেকেআর।
সীমিত ওভারের অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ও তাদের টেস্ট অধিনায়ক প্যাট কামিন্স কে এই ম্যাচেও পাবেনা কেকেআর। তবে তারকা কিউয়ি পেসার টিম সাউদি কে অফ ফর্মে থাকা শিবম মাভির পরিবর্ত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে কলকাতা টিম ম্যানেজমেন্ট। আর ওপেনিংয়ে ফিঞ্চ কে না পেলেও সাবেকি ভারতীয় ওপেনার অজিঙ্ক রাহানের ফর্ম (৩৪ বলে ৪৪ রান) স্বস্তি জোগাবে নাইটদের। হারানো ফর্ম ফিরে পাওয়া উমেশ যাদবের নেতৃত্বে নাইট বোলিং শুরুতেই ডু প্লেসিস, অনুজ রাওয়াত, কোহলিদের তুলে নিতে পারলে দ্বিতীয় ম্যাচেও ২ পয়েন্ট ঝুলিতে পুরে ফেলতে খুব একটা অসুবিধা হবেনা বাজিগরের দলের। তবে ডেথ বোলিংয়ের রোগ না সারালে তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে তাদেরই প্রাক্তন অধিনায়ক ডিকে।
অন্যদিকে একটা ম্যাচ হেরেই প্রথম একাদশে পরিবর্তন নাও করতে পারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, কারণ আজও তারা পাবে না তাদের অজি ত্রয়ী — ম্যাক্সওয়েল, হ্যাজেলউড ও বেহরেনডর্ফকে। কেকেআরের মন্ত্র যদি হয় ফাফ ও ডিকে কে থামাও উল্টোদিকে আরসিবির মন্ত্র হবে যেন তেন প্রকারেণ প্রথম ২ পয়েন্ট তুলে নাও। সবমিলিয়ে দুর্দান্ত এক লড়াই অপেক্ষা করে রয়েছে আজকের আইপিএলপ্রেমীদের জন্য।
সম্ভাব্য প্রথম একাদশ:
কেকেআর (KKR) – ভেঙ্কটেশ আইয়ার, অজিঙ্ক রাহানে, শ্রেয়স আইয়ার (অধিনায়ক), স্যাম বিলিংস, আন্দ্রে রাসেল, শেলডন জ্যাকসন (উইকেট রক্ষক), সুনীল নারিন, শিবম মাভি/ টিম সাউদি, উমেশ যাদব, বরুন চক্রবর্তী।
আরসিবি (RCB) – ফাফ ডু প্লেসিস (অধিনায়ক), অনুজ রাওয়াত, বিরাট কোহলি, দীনেশ কার্তিক (উইকেট রক্ষক), শেরফানে রাদারফোর্ড, ওয়ানিন্দু হাসারঙ্গা, ডেভিড উইলি, হর্ষল প্যাটেল, শাহবাজ আহমেদ, আকাশ দীপ, মহম্মদ সিরাজ।
ছবি: ইন্টারনেট