ভারতীয় দলের সামনে আজ অকল্যান্ডে যখন অজি দল মুখোমুখি হয়েছিলো তখন একটি সম্ভাবনা বেশ উন্নতভাবেই ছিলো যে এই ম্যাচ না জিতলে সেমিফাইনালের পথ দুর্গম হবে ভারতীয় দলের জন্য।
ভারতীয় দলে আজ শুরুতে একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বাঁহাতি ব্যাট দীপ্তি শর্মার পরিবর্তে দলে এসেছেন শেফালী ভার্মা। পরিবর্তন হয়তো সঠিক ছিলো। কারণ টপ অর্ডারে তিনজন বাঁহাতি থাকা ব্যাটিং দলের পক্ষে একটু অসুবিধাজনক তো হয় অবশ্যই। কিন্তু দীর্ঘ তিন ম্যাচ বাদে বিশ্বকাপের এতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলতে নামা শেফালী নিজস্ব ঢঙে একটি চার ও একটি ছয় মারলেও মাত্র ১২ রান করেই ফিরে যান দার্কলে ব্রাউনের বলে। এই ব্রাউনই পরবর্তীতে ফেরান অন্য ওপেনার স্মৃতি মান্ধানাকে (১০)।
দুই ভারতীয় ওপেনার খুবই অল্প রানের মধ্যে ফিরে গেলে বাড়তি দায়িত্ব আসে নবাগতা যাস্তিকা ভাটিয়া এবং অভিজ্ঞ মিতালী রাজের ওপর। তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে ইনিংসের একটি অনবদ্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তাঁরা। প্রয়োজনে অজি স্পিনারদের সুইপ করে বা পেসারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শট খেলে বেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা এবং তাঁদের মধ্যে ১৩০ রানের পার্টনারশিপই বর্তমানে বিশ্বকাপে ভারতের সেরা তৃতীয় উইকেটের পার্টনারশিপ। কিন্তু সেই দার্কলে ব্রাউনের বলে ব্যক্তিগত ৫৯ রানে যাস্তিকা ভাটিয়া ফিরে যেতেই ভারতের ইনিংসের সামনে প্রশ্নচিহ্ন পড়ে আবার। কিন্তু হরমনপ্রীত কৌর এসে হাল ধরলে আবারও ইনিংস এগোতে থাকে নিজের গতিতে। এরপর বাঁহাতি স্পিনার এলেনা কিংয়ের বলে স্লগ-সুইপ মারতে গিয়ে এলিসে পেরীর হাতে ক্যাচ দেন মিতালী (৬৮)।
পরবর্তীতে রিচা ঘোষ (৮) এবং স্নেহ রানা (০) ফিরে যান খুব দ্রুত সময়ে এবং বাকি কাজ করার দায়িত্ব আসে হরমনপ্রীত কৌর এবং পূজা বস্ত্রাকরের ওপর। ৪৫ ওভারের শেষে যখন ভারতের স্কোর ছিলো ২২৫ সেখান থেকে ২৭০ অসম্ভব দেখাচ্ছিল। কিন্তু অসম্ভব ক্ষিপ্ততার সঙ্গে শেষ ৫ ওভারে তাঁরা তোলেন ৫২ রান এবং পূজা ২টি ছয় ও একটি চারের সাহায্যে করেন ৩৪ এবং হরমন অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া প্রতি পদে বোঝাচ্ছিলো কেন ওডিআই ফরম্যাটে তাদের প্রমীলা দল এক নাম্বার। শুরুতেই দুই ভারতীয় বোলার ঝুলন গোস্বামী এবং মেঘনা সিংকে বেধড়ক মারতে থাকেন আলিসা হিলি। সঙ্গে রাচেল হ্যায়নেস ছিলেন অ্যাঙ্কর রোলে। দুজনের অসম্ভব ভালো বোঝাপড়ায় পাওয়ারপ্লেতে ৭ রেটে রান ওঠে এবং ওপেনিং পার্টনারশিপ পেরিয়ে যায় ১০০ রানের গন্ডি। কিন্তু ব্যক্তিগত ৭২ রানের মাথায় আলিসা হিলি স্নেহ রানার বলে মিতালী রাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসায় পার্টনারশিপ ভেঙে যায় অজিবাহিনীর। এর ঠিক পরেই পূজা বস্ত্রাকর উইকেটরক্ষক রিচা ঘোষের হাতে তুলে দেন রাচেল হ্যায়নেসকে (৪৩)।
ঠিক এখান থেকেই নিজের ফর্ম পুনরুদ্ধার শুরু করেন মেগ ল্যানিং। ভারতীয় মিডিয়াম পেসারদের তিনি বারবার খেলছিলেন দেরিতে এবং স্পিনারদের বলকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে নিজের ৯৭ রানের ইনিংস সাজান ল্যানিং। সঙ্গী ছিলেন অভিজ্ঞা এলিসে পেরি। পেরি অবশ্য বেশী রান করেননি কিন্তু তিনি থাকায় অজিদের ভেঙে পড়া রোধ হয় উন্নতভাবে। মাত্র ২৮ রানে পূজা বস্ত্রাকরের ফুল-টস বল মিতালী রাজের হাতে শর্ট কভারে ক্যাচ তুলে পেরি ফিরে গেলেও অজিদের অসুবিধা হয়নি। পঞ্চম ব্যাটার বেথ মুনি এসে যোগ্য সঙ্গত দিতে থাকেন মেগ ল্যানিংকে। একসময় দুই ব্যাটার মিলে সমীকরণ নামিয়ে আনেন ১৬ বলে ১১তে।
এরপর টানটান উত্তেজনার মধ্যে ঝুলন গোস্বামী চারটি ডট বল করায় আস্কিং রেট ৫.৫ এ গিয়ে ঠেকে অজিদের। এবং পরবর্তী ওভারে মেঘনা সিং মাত্র তিন রান দিয়ে ল্যানিং এর গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেওয়ায় শেষ ওভারে বাকি ছিলো আট। কিন্তু শেষরক্ষা করতে ব্যর্থ হন ঝুলন।
শেষ ওভারের প্রথম বল কাউ-কর্ণার দিয়ে লফ্টেড খেলে ৫ বলে ৪ অবস্থায় ম্যাচ নিয়ে আসেন বেথ মুনি। পরের বল এক্সট্রা-কভার অঞ্চলে ঠেলে এক রান নেন এবং বলটি স্মৃতি মান্ধানা মিসফিল্ড করায় তা দুই হয়ে দাঁড়ায়। ৪ বলে ২ বাকি এমন অবস্থায় ঝুলনের মাথার ওপর দিয়ে বল তুলে জয়সূচক বাউন্ডারি মারেন বেথ মুনি (৩০)।আজকের পর সেমির রাস্তা আরো কঠিন হলো ভারতের জন্য। তবে এই ম্যাচ থেকে প্রাপ্তি হলো দুই। এক, সিনিয়র ব্যাটার মিতালী রাজের ফর্ম এবং দুই প্রকৃত অলরাউন্ডার পূজা বস্ত্রাকর। তবে এই প্রাপ্তি সম্বল করে কতটা এগোবে ভারত? ভরসা কি সেই মিরাকলই!