গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের আত্মজীবনী প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন কপিল।

কপিল দেব একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে থাকা সত্ত্বেও গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথকে জানিয়ে দিয়েছেন যে দু’দিন পরে দেশে ফিরে অবশ্যই তিনি ভিশির আত্মজীবনী প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এর আগে ভিশি তাঁর সত্তরতম জন্মদিনের পার্টিতে কপিলকে আমন্ত্রণ করলেও কপিলদেব আসতে পারেননি। তাই এবারে “উইলোর উইল”-কে পরিষ্কার জানালেন ‘আমি অবশ্যই যাব।’ এই কথাও আমরা জানি যে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথই হলেন কপিলের আদর্শ ক্রিকেটার। আর তাই ভিশির আমন্ত্রণ তিনি গ্রহণ করছেন: ‘১২ মার্চ কাতার যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু এইবার আমি ব্যাঙ্গালোর যাচ্ছিই।’
এটাই হল কমিটমেন্ট, এটাই হল ভালবাসা, এটাই হলো শ্রদ্ধা প্রদর্শন।

ছবি : ইন্টারনেট

গত ১৫ দিনে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ অন্তত ১৫০বার টেলিফোন করেছিলেন। ভারতের সর্বকালের সেরা অফ-স্পিনার ফোন ধরেননি। তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশের অনুষ্ঠানে তিনি আসুন, এমনটাই চাইছিলেন সবার প্রিয় ভিশি। অগত্যা “আজকাল”-এর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্নে রজার বিনি জানালেন, এক মর্মান্তিক খবর। বাংলার জামাই, তাঁর স্ত্রী সীমাকে হারিয়েছেন। এতটাই শোকাহত যে এরাপল্লী প্রসন্ন কারও ফোন ধরছিলেন না। শোকে এতটাই কাতর যে কিছুই ভাল লাগছে না তাঁর। বিনির কাছ থেকে এমন খবর পেয়ে এদিন তাঁকে মোবাইলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। এক মহিলা ফোন ধরে প্রথমে দিতে চাইছিলেন না। শোকের খবর যে জানি এবং তাঁকে সমবেদনা জানাতে চাই বলায় খানিকটা নিমরাজি হয়ে প্রায় ৪০ সেকেন্ড পরে ফোন ধরলেন।

‘কে দিলো খবরটা? আমি তো কাউকে বলিনি।’

সূত্র জানালাম এবং প্রসন্ন বলতে শুরু করলেন: ‘ভাবতেই পারছি না যে সীমা আর নেই। আমি বাড়ি থেকে বেরোচ্ছি না, তাই ভিশির আমন্ত্রণ রাখতে পারব বলে মনে হয় না। পুজো-আচ্চা, প্রার্থনা চলছে। বড্ড একা হয়ে গেলাম। এত শূন্যতা আগে কখনও অনুভব করিনি।’

‘এইরকম কিছু শুনতে হবে কল্পনাও করিনি।’, বললেন ভিশিও, ‘১৯৬৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়ার কারণে সবাই কৃতিত্ব দেন টাইগার পতৌদিকে। কিন্তু আমি জানি, আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রাসি (প্রসন্নকে এই নামেই ডাকেন বিশ্বনাথ) কিভাবে পাখি পড়ানোর মতো বুঝিয়েছিল পতৌদিকে। আমাকে দলে সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিল, তাই চেয়েছিলাম ও আসুক।’

এই কথা শোনার পর প্রসন্ন জানালেন: ‘গেলে ভাল  লাগত। কিন্তু আমার হাত-পা বাঁধা। শরীর-মনে কোন জোর নেই। ৪ মার্চ সীমা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, খুব ভুগছিল। তাই বাড়ি থেকে বেরোচ্ছি না। তা না হলে বিশ্বনাথের আমন্ত্রণে সাড়া না দেওয়ার কোনও কারণ তো ছিল না।’ বহু বছর আগে প্রসন্ন-র আত্মজীবনী “ওয়ান মোর ওভার” এর সুরই যেন তাঁর গলায় ধরা পড়ল, ‘আমি যেন পরের জন্মে আর একবার সীমার সঙ্গে সংসার করতে পারি’। এবার বোঝা গেল কেন গত কদিনে ফোন ধরতেও ছিল তাঁর অনীহা।

থাকার জায়গা ছিল না মুম্বইয়ে। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটা সেই ১৯৬৯ এর ঘটনা। বিরক্ত হয়ে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ ভাবছেন ব্যাঙ্গালোর ফিরে আসার কথা। এরাপল্লী প্রসন্ন কিন্তু সেদিন আশাবাদী ছিলেন যে ভারতীয় ক্রিকেটে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের জায়গা রয়েছে এবং তাকে দলে নিতেই হবে। তাই কিছুতেই ভিশিকে ব্যাঙ্গালোর ফিরতে দিচ্ছিলেন না। নিয়ম করে প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা দেখা করতেন এবং বোঝাতেন এই কথা বলে যে তাঁর সময় অবশ্যই আসবে। এসেছিল সেই সময়। আর তাই ভিশি ভীষণ ভাবে চেয়েছিলেন যে এরাপল্লী প্রসন্ন যেন তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশের অনুষ্ঠানে অবশ্যই উপস্থিত থাকেন। কিন্তু বিধি বাম। তা না হলে সীমাকে সঙ্গে নিয়েই এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতেন তাঁর প্রিয় “প্রাসি”।