বিগত ১০ বছর আগে অনুর্ধ-১৫ দল নিয়ে বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিল বাংলা দল। শুভ্রজিৎ দাস, কাজী জুনেইদ সৈফি, অগ্নিভ পানের মতো উৎকৃষ্টমানের খেলোয়াড়ের পাশে ছিলেন তিনিও। সেই বছর লাল বলের ক্রিকেটে চূড়ান্ত ইকোনমিকাল হলেও কোনো একটা ইনিংসে দুইটির বেশী উইকেট পাননি প্রদীপ্ত প্রামাণিক। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে তার পারফরমেন্স ছিল নিতান্তই অনবদ্য। প্রথম ম্যাচে কোটার ১০টি ওভার বল করে ৩৩ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট, দ্বিতীয় ম্যাচে একটু খরুচে হয়ে ৫৪ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন এবং তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচে ২৭ রান দিয়ে তুলে নেন ৫টি উইকেট। সেই সফরেই প্রদীপ্তর অ্যাসেট হয়ে ওঠার আভাস পাওয়া গিয়েছিল অনেকটাই।
এরপর বিজয় হাজারে ট্রফিতে প্রদীপ্ত অভিষেক করেন ২০১৫-১৬ মরশুমে সৌরাষ্ট্রর বিরুদ্ধে এবং প্রথম ম্যাচে আশানুরূপ কিছু করতে পারেননি তিনি। ১০ ওভার বল করে রবীন্দ্র জাদেজার উইকেট বাদ দিলে রান দেন ৫৬। উল্লেখ্য এরপর দীর্ঘ দুই মরশুম বসে থাকার পরে আবার সুযোগ পেলেও কিছু পেছনের সারির দল ছাড়া সেইরকম সাফল্য পাচ্ছিলেন না প্রদীপ্ত।
২০২১-২২ মরশুম থেকে যেন নতুন করে লিমিটেড ওভার ক্রিকেটে নিজেকে আবিষ্কার করেছেন প্রদীপ্ত। বিগত মরশুমে ওয়ানডে ফরম্যাটে মোট তিনটি ম্যাচ খেলেন তিনি। সেই তিনটি ম্যাচ ছিল হেভিওয়েইট তামিলনাড়ু, মুম্বাই ও কর্ণাটকের সাথে। এর মধ্যে মুম্বাই ম্যাচে যখন অনুষ্টুপ মজুমদার, শাহবাজ আহমেদের সেঞ্চুরি বাংলাকে রেখেছিল ভালো জায়গায়, তখন যশস্বী জয়সওয়াল, সূর্যকুমার যাদব, আরমান জাফরের মতো তারকা ব্যাটারদের সামনে ময়দানী ভাষায় ‘টাইট’ বোলিং করে ৯ ওভারে মাত্র ৩৩ রান দেন তিনি। যে তিনটি উইকেট নেন তা ছিল ঝোড়ো গতির সূর্যকুমার যাদব, মুম্বাই অধিনায়ক শ্যামস মুলানি এবং অনুর্ধ-১৯ স্টার অথর্ব আঁকোলকারের। এরপর কর্ণাটক ম্যাচে নিজের ভালো ফর্ম বজায় রাখেন তিনি। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৯২-৩ হয়ে যাওয়ার পরে যখন মনীশ পান্ডে এবং করুণ নায়ার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কর্ণাটককে এবং প্রায় ছয় প্রতি ওভার গতিতে এগোচ্ছে তাদের পার্টনারশীপ তখন খেলার গতির বিরুদ্ধে করুণ নায়ারকে ভুল করতে বাধ্য করেন তিনি। করুণ মুকেশের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলে বেহাল হয়ে পড়ে কর্ণাটক লাইনআপ। এরপর শ্রীনিবাস শরৎ এবং অভিজ্ঞ মনীশ পান্ডের উইকেট তোলেন প্রদীপ্ত। রাউন্ড দ্য উইকেট এসে মনীশকে ঠিক অফ-মিডল লাইনে যে বল প্রদীপ্ত করছিলেন তাতে কাট করতে গিয়ে বারবার সমস্যায় পড়ছিলেন মনীশ এবং শেষে অনুষ্ঠুপ মজুমদারের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য হন তিনি। মনীশ সেইসময় ক্রিজে থাকলে কর্ণাটকের তোলা ২৫২ আরো বাড়তে পারতো। ওই ম্যাচে ১০ ওভার বল করে ৪৮ রান দিয়ে ৪টি উইকেট তোলেন প্রদীপ্ত। এছাড়াও তামিলনাড়ু ম্যাচে যেখানে বাংলার অন্য বোলাররা প্রায় ব্যর্থ, সেখানে ১০ ওভার বল করে ৪৭ রান দিয়ে বাবা ইন্দ্রজিতের উইকেট তুলে নেন প্রদীপ্ত।
সদ্যসমাপ্ত মুস্তাক আলী ট্রফিতে যদি শেষ দুটি ম্যাচ বাদ দেওয়া হয় তবে প্রদীপ্তর বোলিং বেশ উচ্চস্তরের। তামিলনাড়ু ম্যাচে মাত্র ২টি ওভার বল করে প্রদীপ্ত তুলে নেন ক্রিজে সেট সাই সুদর্শন এবং হার্ড হিটিং ব্যাটার শাহরুখ খানের উইকেট। ছত্রিশগড় ম্যাচে ৩ ওভার বল করে ১৩ রান দিয়ে নেন ৪টি উইকেট।
যেখানে সাদা বলের খেলায় ঋত্বিক চ্যাটার্জীর মতো একজন স্পিনার রয়েছেন যিনি ইনিংসের শুরুতে কৃপণ বোলিং করে আটকে রাখেন ব্যাটারদের, সেখানে ইনিংসের মধ্যবর্তী ওভারগুলিতে প্রদীপ্তর কৃপণ বোলিংয়ের সাথে সাথে উইকেট নেওয়া চূড়ান্ত লাভজনক হয়ে দাঁড়ায় বাংলার পক্ষে। বাকিটার জন্য তো শাহবাজের মতো সুযোগসন্ধানী উইকেটশিকারি তো আছেনই। এই তিনজনের সমন্বয় ঠিকঠাক হলে বাংলার স্পিনের জালে আটকে যেতে বাধ্য বাঘা বাঘা প্রতিপক্ষও।