সারা বছর ক্রিকেট খেলার পর বছরের শেষ সপ্তাহটা ছুটিতেই কাটাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রায় গুরুত্বহীন টি২০ সিরিজের কথা বাদ দিলে আগামী বছর ভারতের ক্রিকেট শুরু হচ্ছে ১০ই জানুয়ারী থেকে। এই ১০ই জানুয়ারী থেকে ২৪শে জানুয়ারীর মধ্যে ৬টা একদিবসীয় ম্যাচ খেলবে রোহিত বাহিনী, তারপর ৯ই ফেব্রুয়ারী থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট, যার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলা।
অর্থাৎ ১০ই জানুয়ারীর আগের ১৫ দিন এবং ২৪শে জানুয়ারীর পরের ১৫দিন মূল ভারতীয় দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ের কোন খেলা নেই। অন্যদিকে রনজি সূচি বলছে ৩রা জানুয়ারী থেকে গ্ৰুপের চতুর্থ রাউন্ডের খেলা এবং ৩১শে জানুয়ারী থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল। যে সময়টায় ভারতীয় ক্রিকেটের হেড অফিসের বড় কর্তারা ফাঁকা আছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাঁরা কি এই ম্যাচগুলো নিজেদের রাজ্যে দলের হয়ে মাঠে নামবেন? এখনও অবধি ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোন সম্ভাবনাই শোনা যায়নি। যদিও প্রশ্ন উঠতেই পারে রনজি খেলার প্রয়োজন কী? ওই সময় বিশ্রাম নেওয়া অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।
প্রয়োজনের আগে বিশ্রামের কথায় আসা যাক। ১৯৯৭-৯৮ এর রনজি রেকর্ড বলছে ভারতের তৎকালীন তিন অপরিহার্য খেলোয়াড় শচীন, আজহার এবং সৌরভ সেই মরসুমে যথাক্ৰমে ৩, ৪ এবং ২ টো ম্যাচ তাঁদের রাজ্যের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। আর তার থেকেও ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে ওই রনজি মরসুম শুরুর আগে বা চলাকালীন অর্থাৎ ১৯৯৭ সালে ভারতীয় দল টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে প্রায় ৫০টার উপর ম্যাচ খেলেছিল যার ৯৫% এর উপর ম্যাচে এঁরা খেলেছিলেন। কাহিনী এখানেই শেষ নয়, ১৯৯৮এর শুরুতে ঢাকায় ইন্ডিপেন্ডেডেন্স কাপের পর অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে তৎকালীন রনজি বিজয়ী দল হিসেবে মুম্বাই যে ট্যুর ম্যাচ খেলেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, তাতেও খেলেছিলেন শচীন!
যদিও প্রশ্ন উঠবেই রনজি খেলার প্রয়োজন কী? শুধুই হারানো ফর্ম ফিরে পাওয়া? সদ্যসমাপ্ত বাংলাদেশ সফরের দিকে তাকিয়ে যতই পিচের দোষ দিই না কেন একটুও কি খারাপ লাগেনি সাকিব বাদে বাকি মাঝারি মানের স্পিনারদের বিরুদ্ধে অধিকাংশ ভারতীয় ব্যাটারের অসহায় আত্মসমর্পণ? মনে হয়নি টেকনিকের সমস্যা বা প্র্যাকটিসের অভাব রয়েছে? এর অন্যতম কারণ এই ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা দীর্ঘদিন ভারতীয় পিচে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেননি। মেহেদী, তাইজুল, লীচ, ও’কিফ মানের স্পিনার ভারতের প্রায় অধিকাংশ রাজ্য দলেই খুঁজলে পাওয়া যাবে। এদের বিরুদ্ধে নূন্যতম ম্যাচ প্র্যাকটিস থাকলে বর্তমান ভারতীয় ব্যাটারদের আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্পিনের সামনে এই নাকানি চোবানি খেতে হতো না। কুলদীপ, চাহাল, সুন্দরদের বিরুদ্ধে কোহলি, রোহিত, কে এল-রা লাল বলে ম্যাচ খেলছেন- আতস কাঁচ দিয়ে খুঁজতে হবে। আইপিএলে যেখানে বল মাত্র কুড়ি ওভারের বেশি পুরনো হয় না, একজন চার ওভারের বেশি বল করতে পারে না, ব্যাটারের ঘাড়ের উপর ফিল্ডার থাকে না সেখানে খেলে অন্তত স্পিন খেলার মান উন্নত করা যায় না। তার জন্য খুব করে প্রয়োজন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের উইকেটে হয়ে চলা চারদিনের ম্যাচে অংশ নেওয়া। বিশেষত রোহিত শর্মা, যিনি শেষ একবছরে লাল বলের ক্রিকেটে মাত্র দুটো মাত্র খেলেছেন। তিনিও কী সরাসরি অজি দমনে নেমে পড়বেন? এইভাবে সরাসরি ভারতীয় উইকেটে লায়নের সামনে নেমে পড়লে সে কিন্তু সিংহে পরিণত হওয়ার সম্ভবনা বাড়বে ছাড়া কমবে না। কোহলি, রোহিত, কে এল-রা কী করবেন সেটা একটু ভেবে দেখবেন।