চেনা ছন্দে কোহলি। প্লে-অফ দেখছে আরসিবি।

লেগ-স্টাম্প লাইনের সামান্য বাইরে একটা ফুল-লেংথ বল করে ফেলেছিলেন রশিদ খান। হাল্কা জায়গা করে ঈশ্বরপ্ৰদত্ত কব্জির মোচড়ে বলটি উড়ে যখন সরাসরি পড়লো কাউ-কর্নার বাউন্ডারির বাইরে তখন তাঁর ইনিংসের বয়স ৩৩ বল এবং স্কোরকার্ডে দেখানো রানের খাতায় উঠেছে ৫০।

এই মরসুমে এটা বিরাটের দ্বিতীয় অর্ধশতরান। উল্লেখ্য যে এই মরশুমে দুটি হাফ-সেঞ্চুরিই এলো গুজরাট টাইটান্স দলের বিরুদ্ধে। যদিও এই হাফ-সেঞ্চুরি আগেরটার মতো দুঃস্থ নয়, বরং এতে আছে সাহসিকতা, রশিদ খানকে দুবার সাইটস্ক্রিনে ফেলার মতো দুর্বার মানসিকতা এবং অবশ্যই হিসেবি টিটোয়েন্টি খেলা।

আরসিবি ইনিংসে ওপেনিং পার্টনারশিপ হয় ১১৫ রানের এবং তাতে ফ্যাফ ডুপ্লেসির অবদান ছিলো ৩৮ বলে ৪৪। শুরু থেকেই মহম্মদ শামি, যশ দয়াল, রশিদ খানের মতো বোলারদের নিজের ঢঙে পিটিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি এবং বাদ যাননি লকি ফার্গুসন পর্যন্ত। কোহলির এই ইনিংসে শুধুমাত্র সমীহ আদায় করতে পেরেছেন তামিলনাড়ুর বাঁহাতি স্পিনার রবিশ্রীনিবাস সাই কিশোর। বেশ কিছু সময় উইকেটে ফেলে বাইরে টার্ন করিয়ে বিরাটকে পরাস্ত করেন সাই কিশোর।

রশিদ খানের গুগলিতে পরাস্ত হয়ে যখন ম্যাথিউ ওয়েডের হাতে স্টাম্পড হয়ে ফিরলেন কোহলি, তারপরে বাকি কাজ অর্থাৎ ৯ আস্কিং রেটে রান তোলা চিরাচরিত হিটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং অসাধারণ ফর্মে থাকা স্লগার দীনেশ কার্তিকের পক্ষে অসম্ভব ছিলোনা। হার্দিক পান্ডিয়াকে পুল, সুইচ-হিট সব কিছু মেরে যেন তা আবার প্রমাণ করলেন ম্যাক্সওয়েল। এরপরে আরসিবির জয় ছিলো স্রেফ সময়ের অপেক্ষা এবং হলোও তাই।

আরসিবির প্লে-অফ হয়তো এখনও শর্তসাপেক্ষ। তাদের আজ জয়ের পরেও তাকিয়ে থাকতে হবে দিল্লি ক্যাপিটালস কি করে তার দিকে, কিন্তু আপামর ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী যে বিরাটের ব্যাট থেকে স্ট্রোকের ফুলঝুরি মিশ্রিত রান চাইছিল তা হয়তো তারা পেয়ে গেলো আজ। রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন বিরাটের বিশ্রাম প্রয়োজন, কিন্তু সুনীল গাভাসকার “উইলোর উইল”-কে পরিষ্কার বলেছিলেন ফর্মে ফিরতে হলে বিরাটকে আরও বেশি মাঠের কাছাকাছি থাকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ঠাসা ক্রীড়াসূচির মধ্যে হয়তো বিশ্রাম সত্যিই প্রয়োজন সামনে এশিয়া কাপ, টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে। কিন্তু আজ এই বিরাটোচিত ৫৪ বলে ৭৩ সমগ্র ক্রিকেটপ্রেমী থেকে শুরু করে বিরাটের নিজের মধ্যেও একটা বিশ্বাস জাগাবে যে পুরোনো বিরাট ফিরে আসছেন। এবার অন্তত ফর্মের ছোঁয়া ফিরে পেয়ে তিনি হয়ে উঠবেন আরো রান-ক্ষুধার্ত, আরও ভালোভাবে তিনি বিশ্রামে যেতে পারবেন এবং তাকে বিশ্রামরত অবস্থায় হাতড়াতে হবে না রানে ফেরার উপায়।

বাকিটা তো একজন চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় জানেনই। চ্যাম্পিয়ন তো এক রাতে হয় না।