জীবনকৃতি পুরস্কার নিতে কলকাতায় এসেছিলেন ভারতের চিরশ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডার কপিল দেব নিখাঞ্জ। তারই ফাঁকে কথা বললেন “উইলোর উইল”-এর সঙ্গে।
প্রশ্ন:- আপনি কিন্তু আবার সেই আগের মতো দৌড়দৌড়ি শুরু করেছেন, বয়স কিন্তু বাড়ছে।
কপিল দেব:- কী করবো বলুন, ইহার নাম কমিটমেন্ট। বাড়ি থেকে বেরিয়েছি ভোর ৪টেয়, কলকাতা এয়ারপোর্টে নামার পর ভেবেছিলাম ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়ে নেবো, কিন্তু এই শহরেরই এক বন্ধু এসে নিয়ে গেল ব্রেকফাস্ট করাতে। ব্যস, ঘুম উঠলো লাটে। জানিনা, এভাবে আর কতদিন দৌড়তে পারবো। ভোরের ফ্লাইট আমার ভালো লাগে। কারণ, তাতে গোটা দিনটা কাজে লাগানো যায়, দিল্লী ফিরবও এইরকমই ভোরের ফ্লাইটে।
প্রশ্ন:- ভারত তো এখন ব’লে ব’লে হারাচ্ছে বিপক্ষ দলগুলিকে।
কপিল দেব:- ভারতকে এখন হারানো কঠিন। দেশের মাঠে তো বটেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কাও তথৈবচ। এদের হারানোর জন্য বেগ পাওয়া উচিত নয়। তবু বলছি, এদেরও হারাতে হবে, যাতে জেতার অভ্যাসে থাকা যায়। উইনিং ইজ আ হ্যাবিট।
প্রশ্ন:- সেই সঙ্গে পরবর্তী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা ভেবে অনেক নতুন ক্রিকেটারদের দেখে নেওয়ার সুযোগ পেল রাহুল-রোহিত জুটি।
কপিল দেব:- টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দেরি আছে। এখন থেকেই বলা কঠিন ওই সময়ে কে কে ফিট থাকবে, কে কে অসুস্থ হয়ে পড়বে ইত্যাদি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে নতুন সব মুখগুলো একটা করে ব্রেক পেল, যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একেকজন ক্রিকেটার যদি একটানা ২৫-৩০টা ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়, তবে খুব স্বাভাবিকভাবেই উন্নতি করার সুযোগ থাকে। যদিও দেশের মাঠের এই জয়গুলোকে খুব সিরিয়াসলি না নেওয়াই ভালো। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে নতুন ক্রিকেটাররা যাতে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারে, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন:- রণজি ট্রফি তো শুরু হয়ে গেল।
কপিল দেব:- থ্যাংকফুলি। রণজি ট্রফি হলো ভারতীয় ক্রিকেটের আঁতুড়ঘর। আরও গুরুত্ব দিয়ে, মন দিয়ে, আন্তরিকভাবে রণজি ট্রফি আয়োজন করা উচিত। এখান থেকেই তো ক্রিকেটারদের পাওয়া যায়, অতীতেও গেছে, ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে। যদিও আইপিএল খেলার ব্যাপারে এই প্রজন্ম অপেক্ষা করে থাকছে। এতে করে রণজি ট্রফি পিছিয়ে পড়ছে। আইপিএল নিয়ে কতো আলোচনা, রণজি নিয়ে কোন কথা শুনছেন? গত বছর তো কেলেঙ্কারি কান্ড ঘটে গিয়েছিলো। আইপিএলকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ম্যাঞ্চেস্টার টেস্ট না খেলে মরুশহরে উড়ে যেতে হয়েছিল ভারতীয় দলকে। কে বা কারা এর পেছনে জড়িত তা জানার চেষ্টা করেছিলাম, শুনলাম বোর্ড কর্তারা চাইলেও ক্রিকেটাররা খেলতে চায়নি। স্ট্রেঞ্জ! কোভিড-এর কারণে? তাহলে দলে ২৫-২৬ জন ক্রিকেটার কি করতে রাখা হয়েছিলো? ভুল তো হয়েইছিলো। ভুল হয়েই চলেছে, একের পর এক। ক’টা ম্যাচ খেলেছে ঋষভ পন্থ যে ও ছুটি চাইলো শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে?
বিরাট কোহলিও ছুটি নিলো! চাইলেই ছুটি পাওয়া যায়? আমি তো বুঝতেই পারিনা বোর্ড এগুলো আ্যলাউ করছে কেন? এতোই যখন ক্লান্তি, জিমে পড়ে থেকে কি লাভ হচ্ছে বাবা? আসলে এই মুহূর্তে এত বেশি সংখ্যায় ক্রিকেটার এখন তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছে যে বোর্ড ক্রিকেটার পাওয়া নিয়ে কোন টেনশনে ভুগছে না। দিস ইজ রঙ। লেকিন এইসা দিন নেহি যাতা হ্যায় ভাই।
প্রশ্ন:- বিরাট কোহলি তো এখনও রান পাচ্ছেন না।
কপিল দেব:- ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পঞ্চাশ করার পরে ইডেনে নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এলো, টেস্ট খেলতে চাইছে না, আইপিএলে বড়ো রানে পৌঁছনোর আগেই আউট হয়ে যাচ্ছিলো। কী সমস্যা সেটা বাইরে থেকে কারো পক্ষে ওর মাথায় ঢোকানো সম্ভব নয়। ও নিজেই নিজের সমালোচক হয়ে একটু দেখে নিক কোথায় ও দাঁড়িয়ে আছে।
প্রশ্ন:- নতুন বোলারদের কেমন দেখলেন?
কপিল দেব :- প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ভালো বল করলো এবং ওকে বিশ্রামে পাঠিয়ে দিলো। এটাকে নাকি বলা হচ্ছে ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট। ভাগ্যিস আমাদের আমলে এই অদ্ভুত থিওরি-টিওরি ছিলো না। আমরা তো রণজি, দলীপ, টেস্ট, ওয়ান-ডে খেলা ছাড়াও কাউন্টি ক্রিকেট খেলেছি। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট করতে হয়নি। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমোতাম, প্রচুর দৌড়োতাম এবং মন দিয়ে প্র্যাক্টিস করতাম। নেটেও নো-বল না করার চেষ্টা করতাম, যাতে ম্যাচেও ওই বদ-অভ্যাস না ঢুকে পড়ে। এখন তো বিখ্যাত সব বোলাররাও আকছার নো, ওয়াইড ডেলিভারি করে যাচ্ছে।
প্রশ্ন:- আর কোনও পরামর্শ?
কপিল দেব:- খেলার ব্যাপারে আন্তরিক থাকতে হবে, সৎ হতে হবে, শিখতে হবে প্রতিদিন। বিশ্রাম নেওয়াটা আমার কাছে, পালিয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার। চোট-আঘাত খেলারই অঙ্গ, আই একসেপ্ট ইট। একবার নিজের শরীরের দিকে তাকাও, জিমে যাচ্ছো নিয়ম করে, তাতেও শরীর কেন পোক্ত করে তুলতে পারছো না? মাথায় রাখবেন, চোট এবং আঘাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়াটাও একটা আর্ট, ক্লিয়ার?