২০১০ সালে তিনি গিয়েছিলেন বাংলাদেশ সফরে অনুর্ধ-১৭ বাংলা দলের হয়ে খেলতে। সেই সময় থেকে আর আজ অবধি তিনি খুব ভালোভাবেই রয়েছেন বাংলা দলের স্কিমে। শেষ তেরো বছরে প্রায় সব ধরণের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলা এবং দুটি ক্লাব দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পরে ২০১৯-২০ সফরে তিনি অভিষেক করেছেন রনজি ট্রফিতে। এছাড়াও তিনি সাদা বলের ফরম্যাটে অভিষেক করেন তার চার বছর আগে। সম্প্রতি কর্ণাটকের বিরুদ্ধে ডেথ ওভারে একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে তিনি নজর কেড়েছিলেন সবার।
বছর বারো বয়সে মানবেন্দ্র ঘোষের নজরে পড়া থেকে আর আজ অবধি সব ধরণের যাত্রা নিয়ে সিএবির ইন্ডোরে বসে কথা বললেন ঋত্বিক রায়চৌধুরী।
প্রশ্ন:- কর্ণাটকের সাথে শেষ ওভারে যখন ২০ রান বাকি ছিল তখন তোমার মাইন্ডসেট কি ছিল?
ঋত্বিক:- খুব বেশী কিছুই না। বল দেখে খেলার চেষ্টা করছিলাম এবং বল বাই বল ভাবনা চিন্তা করছিলাম। এইভাবে খেলাটাকে ক্লোস নিয়ে যেতে পেরেছিলাম।
প্রশ্ন:- ঐদিন শেষ ওভারে দেখা গিয়েছিল যে তুমি একটা ইম্প্রোভাইজ করা স্কুপ শট খেলো যেটা ছয় হয়। ওই শটটা নিয়ে কি বলবে?
ঋত্বিক:- আমি আগের বল একটু শর্ট পেয়েছিলাম এবং মিডউইকেট দিয়ে ছয় মেরেছিলাম। সেই জায়গা থেকে একটু ভাবনাচিন্তা করেছিলাম যে পরেরটা ইয়র্কার ফেলার চেষ্টা হয়তো বোলার করবে। সেইমতোই ওই স্কুপ শট খেলি। ব্যাপারটা এমন নয় যে আমি ওই শট ওখানে নতুন চেষ্টা করেছি বরং বেশ কিছুদিন ধরে টিটোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে ধার বাড়াতে ওই শটটা খেলার চেষ্টা করে গিয়েছিলাম। প্র্যাক্টিসেও খেলতাম, বিভিন্ন ম্যাচেও চেষ্টা করেছি। এখন ওই ম্যাচেই খেলে ফেলেছি বলে সবার চোখে পড়েছে। কিন্তু আগেও এরকম খেলেছি।
প্রশ্ন:- ফার্স্ট ক্লাস অভিষেকে যখন ১৯১ রান বোর্ডে ছিল তখন পীযূষ চাওলাকে বেশ কিছু নতুন শট খেলো। সেটা কি তাড়াতাড়ি রান তোলার উদ্দেশ্যে?
ঋত্বিক:- আমি তখনই ভালো যখন আমি রান করার চেষ্টা করি। বেশী ভয় পেয়ে ক্রিকেট খেলা হয়না। নিজের স্বাভাবিক খেলাকেই ব্যাক করতে হয়। কেউ ভালো বল করে তখন ডিফেন্স করবো। আমি যখন ম্যাচ বাঁচাচ্ছি তখন খুব ডিফেন্স করবো কিন্তু যখন আমি ইনিংস তৈরী করছি এবং আমি জানি যে আমার মুভমেন্ট ভালো হয় এবং ভালো বল মেরে দিতে পারি তখন আমি তাই করি। অনেকের দেখে মনে হয় যে একটু বেশী রিস্ক নিচ্ছে কিন্তু আমি কম্প্যাক্টভাবে শট নিতে পারি এবং ওটাই আমার প্রিপারেশন। ম্যাচে গিয়ে ভয়েডরহীন ক্রিকেটই খেলতে চাই।
প্রশ্ন:- এই মরশুমে তোমাকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে হয় এবং প্রায় নতুন বল খেলতে হতো। এই চ্যালেঞ্জটা কেমন ছিল?
ঋত্বিক:- চ্যালেঞ্জ তো ছিলই। মজাও আসছিল খুব এবং আমি খুব ডিসিপ্লিন থাকার চেষ্টা করেছিলাম। আমি দেখেছি ভালো টপ অর্ডার ব্যাটাররা কিভাবে নতুন বল খেলে এবং হয়তো এটা আমার ন্যাচারাল খেলার বিরুদ্ধে কিন্তু আমার ভালোই লেগেছে। আমি হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে নতুন বল সামলে নিয়েছিলাম এবং ৩০-৪০ রান করার পরে স্পিনারের সামনে যেটা উচিৎ হয়নি। বাংলা মাঠে সবাই বলে ‘টাইট খেল’, আমিও সেরকমই খেলছিলাম। বিট হয়েছি, ভালো ডিফেন্স হচ্ছিল, স্ট্রাইক রোটেট হচ্ছিল এবং কাট বা ফ্লিকের বল পেলে সেটাও খেলছিলাম।
প্রশ্ন:- বরিশা ক্লাবের অধিনায়ক হিসেবে কতটা দায়িত্ব উপভোগ করেছ?
ঋত্বিক:- ক্যাপ্টেন্সি বরাবরই এনজয় করেছি। ২০১৮ সালে অনুর্ধ-২৩ দলের ক্যাপ্টেন্সি করি তারপরে কালীঘাটে কয়েকটা ম্যাচ করেছি, বাইজুস্ টুর্নামেন্টে কলকাতা হিরোজ দলে ক্যাপ্টেন্সি করেছি। নিজের খেলার পাশাপাশি কিভাবে অন্য সতীর্থরা নিজেদের এক্সপ্রেস করছে ওই দায়িত্ব এবং ওই পরিবেশ তৈরীটা করা খুব ভালো লাগে। এই কাজটাকে আমি খুব গুরুত্ব দিই। ফিল্ডিং বা প্র্যাক্টিসের সময় আমি এই ম্যান ম্যানেজমেন্ট বা বন্ধুত্ব রেখে চলার চেষ্টাই করি।
প্রশ্ন:- কেরিয়ারে তোমার বাবা রূপনাথ রায়চৌধুরীর কতোটা অবদান আছে?
ঋত্বিক:- উনি খুবই সাপোর্টিং ফাদার। একজন ব্যক্তি হিসেবে উনি খুব সলিড। বাবা হিসেবে, বন্ধু হিসেবে উনি খুবই ভালো। উনি হয়তো বকা দেন, কথা হয়তো কম বলেন কিন্তু আমি তাতেই বুঝে যাই যে আমি কি কি বেটার করতে পারি। ওনার থেকে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। উনি অবদান অনেক ভাবেই রেখেছেন।
প্রশ্ন:- পেস বোলিংয়ের সামনে তোমার বেসিক খুব স্ট্রং। এটা নিয়ে ডেথ বোলিংয়ের সামনে তুমি কতটা অবদান রাখতে পারবে বলে তোমার মনে হয়?
ঋত্বিক:- ডেথ বোলিং খেলা চ্যালেঞ্জিং কারণ তোমাকে প্রতিপক্ষের সেরা বোলাররাই বল করবে। তাদের সামনে সিঙ্গেল নেওয়া বা বাউন্ডারি বার করা একটা ভালো চ্যালেঞ্জ। আমাদের প্রিপারেশন থাকবে কারণ ডেথের সামনে রেঞ্জ অনেক বাড়াতে হয়। ভালো বোলার খেললে আপনি বুঝবেন ফিল্ডিং দেখে যে ও কি করার চেষ্টা করছে। ঐদিন যেটা ম্যাটার করে তা হলো যে কে ভালো ভাবছে বা ভালো করছে। দুটো বলের মাঝখানে যে তিরিশ সেকেন্ড সময় পাওয়া যায় ওটা কে কিভাবে ব্যবহার করছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাট করা বা বল করা এই ইভেন্টের মাঝে যে ক্যাট এন্ড মাউস খেলা চলে সেটা যে জিতবে সেই জিতবে।
প্রশ্ন:- অফ সিজনে কিভাবে তৈরী করবে নিজেকে?
ঋত্বিক:- এই সময়ে আমরা বডিকে পুশ করতে পারি এবং সুযোগ থাকে নিজের ফিজিক্যাল ফিটনেস বাড়িয়ে নেওয়ার। স্কিলওয়ার্ক বাড়িয়ে নিতে সর্বোচ্চ একটা কি দুটো সপ্তাহ লাগে। ইন্ডোরে বেশী সময় কাটাচ্ছি তাই।
প্রশ্ন:- বল হাতে কবে ফিরবে।
ঋত্বিক:- ইচ্ছা আছে এই সিজনেই ফিরবো। আমি এখনই বলতে পারবোনা যে সাদা বলে না লাল বলে করবো তবে সাদা বলে বোলার হিসেবে অবদান রাখতে চাই।