ক্যাচ ফেলে-ধরে ম্যাচ ঘোরালেন সেই রবি-ভুবিই

দাদার ঘরে দাদাগিরি-র ‘হোস্ট’ হয়ে উঠছিলেন বিরাট কোহলি। শেষে অবশ্য ঋদ্ধির ঘরে ভারতকে সিদ্ধিলাভের পথে এগিয়ে দিয়েছিলেন ঋষভ পন্থ। আর তুলিতে শেষটানের মতো ক্যাচ ফেলা ভুলিয়ে নিকোলাস পুরনের ক্যাচ ধরে সেই রবি বিশনোই ফিরিয়ে আনলেন রোশনাই। ৮ রানে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজ পকেটে পুরল রোহিত শর্মার ভারত।

ছবি : সিএবি

রোভম্যান পাওয়েলের ব্যাট থেকে যে বাউন্ডারিটা এল ইনিংসের ১৬তম ওভারে, ভুবনেশ্বর কুমারের আত্মবিশ্বাস তুবড়ে-দেওয়া! পরের বলটা অবধারিত ওয়াইড। তারপরের বলেই ম্যাচটা বেরিয়ে গিয়েছিল ক্ষণিকের তরে, ভারতের হাত থেকে। আরও একটি ছয় তুলতে গিয়ে আকাশে তুলেছিলেন পাওয়েল। গ্লাভসসহ ঋষভ পন্থ ছুটে আসছিলেন। প্রায় শাহরুখীয় ভঙ্গিতে দুহাত ছড়িয়ে সবাইকে বারণ করে বলের তলায় পৌঁছেও ক্যাচটা ফেললেন ভুবি। সনাতন ক্রিকেট বলে, এমন উঁচু ক্যাচ উইকেটরক্ষকের পক্ষে ধরা সম্ভব হলে তাঁকেই দেওয়া উচিত। কিন্তু টিটোয়েন্টি আর সনাতনি ক্রিকেটের সম্পর্ক তো জন্মলগ্ন থেকেই অহি-নকুলে!

প্রথম ম্যাচের মতোই নিকোলাস পুরনকে জীবন দিয়েছিলেন বিশনোই। বোলারও সেই এক, হতভাগ্য যুজবেন্দ্র চহাল। ভারতীয় ইনিংসের তখন ৯.১ ওভার, পুরন ২১। সেই পুরন আউট হলেন ১৮.৩ ওভারে, সেই বিশনোই এবার ক্যাচ নিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযুক্ত মানের। আকাশ ছুঁতে চাওয়া বল নেমে আসছিল, মাথার ওপর দুহাত তুলে ধরলেন। ততক্ষণে ৬০ বলে ১০০ তুলে ফেলে সিরিজ জমিয়ে দিয়েছিল পুরন-পাওয়েল জুটি, পাওয়ারফুল পারফরম্যান্সে, যথাক্রমে ৩৪ ও ২৮ বলে নিজেদের পঞ্চাশ পেয়ে। অধিনায়ক পোলার্ডের শততম টিটোয়েন্টি ম্যাচ স্মরণীয় করে তুলবেন, এমন শক্তির প্রদর্শনীতে, প্রায়-নিশ্চিত দেখাচ্ছিল যখন, সেই ভুবনেশ্বর, সেই বিশনোই, আর উনিশতম ওভারে মাত্র চার রান দেওয়া ভুবির। শেষ ওভারে ২৫ চাই, উইকেটে পোলার্ড। ইডেনের স্মৃতিপটে ভেসে উঠেছিলেন ব্র্যাথওয়েট! 

কিন্তু ব্র্যাথওয়েট একবারই হয়। তাই পোলার্ড জিততে পারলেন না তাঁর শততম ম্যাচে। উল্টে ভারত পেল টিটোয়েন্টি-তে শততম জয়, জিতে নিল তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০।

ছবি : সিএবি

টস হারার দুঃখেই বোধহয় ইডেনে এমন একটা দিন এল যখন রোহিত শর্মার ব্যাটেবলে হল না। চতুর্থ ওভারেই পয়েন্টে ব্র্যান্ডন কিং-কে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিং ধরে রাখতে পারেননি, রোহিতও ধরে রাখতে পারেননি মেজাজ। দুটো চার একটা ছয়ে ১৮ বলে ১৯। তবু রোহিতোচিত নয়। ইশান কিষাণ দাবি করেছিলেন, যে কোনও মাঠই পার করতে পারেন অনায়াসে। দুদিনে দুবার দেখা গেল, আকাশে বল তুললে ৩০গজি বৃত্তও পেরচ্ছে না!

পদচ্যুত অধিনায়ক রান পাওয়ার পরও কি মিডিয়া চুপ করেই থাকবে, রোহিত?

দ্বিতীয় বল স্কোয়ার লেগে ফ্লিক করে চার, সেই ওভারেই দ্বিতীয় চার লং লেগ দিয়ে। দ্বিতীয় ওভারেই মাঠে নেমে পড়েছেন এবং সামনে নির্বিষ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলিং। কুড়ি ওভার পর্যন্ত টিকে থাকলে তিন অঙ্কে পৌঁছনর সম্ভাবনা, তা-ও আবার বোর্ড সভাপতির ঘরের মাঠে। সাতটি চার ও একটি ছক্কায় পঞ্চাশে পৌঁছনয় সেই সম্ভাবনা যখন বাস্তবায়নের পথে, আবারও ভেতরে ঢুকে আসা বলে পরাস্ত। ইনিংসের তখন ১৩.৪ ওভার, ভারতও সবে ১০৬। 

ছবি: সিএবি

তারুণ্যের জয়গান দেখল ইডেন তারপর। ১৮ বলে ৩৩ করে বেঙ্কটেশ আয়ার আউট ২০তম ওভারের তৃতীয় বলে। মাঝের এই ৩৫ বলে ৭৬ রানের মূল কারিগর বাঁহাতি ঋষভ। ২৮ বলে ৫২ অপরাজিত, সাতটি চার ও একটি ছয় বিরাটের পরিসংখ্যানের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হলেও আদপে নয়। বিরাট তাঁর শেষ ২৩ রান তুলেছিলেন ২৩ বলে, খানিকটা আটকে গিয়েছিলেন, সঙ্গে ভারতের রানরেটও। ।ম্যাচের সেরা ঋষভের এই অপরাজিত ইনিংস চলল ফর্মূলা ওয়ান ট্র্যাকে। শেষ পাঁচ ওভারে ৬২ তুলল ভারত। । তা-ও শেষ ওভারে রোমারিও নামের ‘রাখাল’ দুরন্ত বল করে মাত্র সাত রান দিলেন বলেই। ১৬, ১৭, ১৮ এবং ১৯তম ওভারে ভারতের রান ছিল যথাক্রমে ১৫, ১৩, ১২ ও ১৫!

রবিবার শেষ ম্যাচে প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস যদি সত্যিও হয়, সিরিজের ট্রফি রোহিতের হাতে এখন! 

সংক্ষিপ্ত স্কোর 

ভারত — ১৮৬/৫ (পন্থ ৫২*,বিরাট ৫২, চেজ ৩/২৫)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ — ১৭৮/৩ (পাওয়েল ৬৮*, পুরন ৬২)