আকাশে সূর্য থাকে। সবাই জানেন। ক্রিকেট-আকাশেও সূর্য থাকেন এখন। কারণ, সূর্য কুমার যাদবের নামের আদ্যক্ষর তিনটি ‘এসকেওয়াই’, একত্রে ‘স্কাই’। তাই ইডেনের ক্রিকেটাকাশে রাতের সূর্য হয়ে দেখা দিলেন তিনি, ভারতের হয়ে। সঙ্গী হিসাবে পেয়ে গেলেন বেঙ্কটেশ আয়ারকে। দুজনে ৩৭ বলে জুড়লেন ৯১ রান। ভারত পৌঁছল ১৮৪ রানে। আর ইনিংসের শেষ বলে আরও একটি ছয়ের জন্য বল তুলতে গিয়ে ম্যাচের সেরা সূর্য আউট হলেন ব্যক্তিগত ৬৫ রানে। ইনিংসে চার মাত্র একটি। কিন্তু তাঁর ব্যাটাঘাতে বল ইডেনের শূন্য বা পূর্ণ গ্যালারি ছুঁল সাতবার! ভারতকে এগিয়ে দিয়েছিলেন টিটোয়েন্টি সিরিজেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ হারানোর দিকে। শেষে হলও তাই, ১৭ রানে তৃতীয় ম্যাচ জিতল ভারত।
বিরাট কোহলি আর ঋষভ পন্থ ভারতের সিরিজ জেতানোর কাজ সম্পন্ন করে বিশ্রামে। সুযোগ এসেছিল ঋতুরাজ গায়কোয়াড় আর শ্রেয়স আয়ারের কাছে। ঋতুরাজকে এগিয়ে দিতে অধিনায়ক রোহিত শর্মা নিজেকে পিছিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন চার নম্বরে। কিন্তু, এই বসন্তকালেও ঋতুরাজ প্রাপ্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেননি। একটা ম্যাচের পারফরম্যান্স অবশ্যই বহু দূরের ভবিষ্যত দেখায় না। তবু, সিরিজের ফয়সালা হয়ে গিয়েছে, ক্যাপ্টেন নিজেকে নামিয়ে এগিয়ে দিয়েছেন, ঋতুরাজের ব্যাটে রান সব দিক দিয়েই আদর্শ হতে পারত।
কেকেআর অধিনায়ক শ্রেয়সের শুরুটা বরঞ্চ আত্মবিশ্বাসী। ১৬ বলে ২৫, ইনিংসে চারটি বাউন্ডারিই দেখার মতো। ব্যাটেবলে হচ্ছিল, ছয় তুলতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দিলেন। শটটাও ঠিকঠাক হয়নি, ব্যাটের ওপরে লেগে যাত্রাপথ বদলে ক্যাচ। ভারত তখন ৮.৩ ওভারে তিন উইকেটে ৬৩ এবং উইকেটে সূর্য যাদব।
কলকাতা নাইট রাইডার্স-এর হয়েই প্রথম নজরে এসেছিলেন সূর্য, ইনিংসের শেষ দিকে বেশ কয়েকবার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে। ক্রমশ সেই সুযোগ কমে এল। তাই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ফিরিয়ে নিয়ে যায় ঘরের ছেলেকে এবং ওপেনার হিসাবে তুলে এনে সূর্যের সামনে খুলে দেয় জাতীয় দলে ঢোকার দরজা। বছরের শেষে অস্ট্রেলিয়ায় টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলের মিডল অর্ডারে তাঁর উপস্থিতি এখন অবশ্যম্ভাবী।
ভুললে চলবে না বেঙ্কটেশ আয়ারকেও। ১৯ বলে ৩৫ অপরাজিত, চারটি চার ও দুটি ছয়ে সাজানো ইনিংস কোনও অংশে কম বিধ্বংসী নয়। শেষ ৫ ওভারে সূর্য আর বেঙ্কটেশ মিলে ৮৬ রান তুলেছিলেন। শেষ দুটি ওভারেই আবার ২১ রান করে। না হলে, রোহিত আউট হয়েছিলেন যখন, ভারতীয় ইনিংস সেই ১৪তম ওভারেও ১০০ পেরয়নি!
সিরিজ জয় নিশ্চিত করার ম্যাচে পুরন আর পাওয়েল মিলে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে ম্যাচ প্রায় নিজেদের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তৃতীয় ম্যাচে দীপক চহার অবশ্য শুরুতেই দুটি উইকেট তুলে সেই দুজনকেই নিয়ে এসেছিলেন ক্রিজে। যদিও দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বল করার সময়ই হ্যামস্ট্রিং-এ টান ধরায় আর বল করতে পারেননি চহার, বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসকে পাওয়েল-পোলার্ড দুজনেই প্রয়োজনীয় গতি দিতে গিয়ে লাইনচ্যুত। ১৪ বলে ২৫ করেছিলেন পাওয়েল, অধিনায়ক পোলার্ডের আইপিএল ফর্ম মেরুন জার্সিতে ততটা ফেরে না সব সময়। সাত বলে পাঁচ, বিশেষ পরিশ্রম বাড়াননি স্কোরারদের।
প্রথম দুটি ম্যাচে যথাক্রমে ৬১ ও ৬২ করেছিলেন নিকোলাস পুরন। ক্যারিবিয়ান বাঁহাতি বললেই যাঁদের মনে ব্রায়ান লারার ছবি ভেসে ওঠে, পুরন তাঁদের খানিকটা নয়, অনেকটাই নিরাশ করবেন। কিন্তু এই তিন টিটোয়েন্টি ম্যাচের সিরিজে তাঁর ধারাবাহিকতা চমকে দেওয়ার মতোই। শেষ ম্যাচেও ৬১ করলেন। একা কুম্ভ তিনি ছাড়া আর কে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজে!
দ্বিতীয় ম্যাচ ছাড়া আর কোন্ও ম্যাচেই পুরনকে অন্য প্রান্ত থেকে সাহায্য করার মতো কেউ না থাকায় একদিনের সিরিজের মতোই টিটোয়েন্টিতেও তিন ম্যাচের সিরিজ ০-৩ হারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাদা বলে টানা ছয় ম্যাচে ছয় হার। হ্যাঁ, এই দলের অনেককেই এই পারফরম্যান্স নিয়ে বাড়ি ফিরে মুখ লুকোতে হবে না। নতুন সুরক্ষাবলয়ে ঢুকে যাবেন তাঁরা। আইপিএল আছে যে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত — ১৮৪/৫ (সূর্য ৬৫, বেঙ্কটেশ ৩৫*)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ — ১৬৭/৯ (পুরন ৬১, চহার ২/১৫, বেঙ্কটেশ ২/২৩)