আশঙ্কার দোলাচলে আশার স্বপ্ন

হঠাৎই একদিনের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রাক্তনদের একাংশ বেশ চিন্তিত। টি২০ ফরম্যাটের দাপটের জন্যই কি জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ৫০ ওভারের ক্রিকেট?‌ অনেকের বক্তব্য তেমনই। ওয়াসিম আক্রাম কোনও রাখঢাক না রেখেই পরিষ্কার জানিয়েছেন একদিনের ক্রিকেট তুলে দেওয়া হোক। একদিনের ক্রিকেটের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ কমিয়ে আনার পক্ষে সওয়াল করেছেন রবি শাস্ত্রী। প্রাক্তনদের এমন মন্তব্যে একদিনের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে অশনি সঙ্কেত দেখছেন অনেকেই। অস্বীকার করার জায়গা নেই অল্প সময়ে টি২০ ক্রিকেটের উত্তেজনা ও বিনোদনের জন্যই ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ভাটার টান। টি২০–র ক্রমবর্ধমান রমরমা ক্রমশ একঘেয়ে করে তুলছে একদিনের ক্রিকেটকে। কয়েকদিন আগেই দেখা গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ভারতের সঙ্গে একদিনের সিরিজে গ্যালারিতে উপস্থিত হাতে গোনা দর্শক!‌ পরিস্থিতি জটিল করছে পিঠোপিঠি সিরিজ। ইংল্যান্ডে খেলা শেষ হতে না হতেই এবার চলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ!‌ ইংল্যান্ডে শুরুর আগেই ছোট্ট সফর আয়ারল্যান্ডে!‌ সিরিজ অনুযায়ী ক্রিকেটাররা বিশ্রাম পেলেও দর্শকদের তো কোনও বিশ্রাম নেই!‌ 

আবার উল্টো মতও উঠে আসছে। ৫০ ওভারের ক্রিকেট নিয়ে কেউ কেউ যে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, তা কানে গেছে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার কানেও। তিনি কিন্তু একেবারেই বিচলিত নন। মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে রোহিতের সাফ কথা, ‘‌এ সব কথাবার্তার কোনও অর্থই নেই। আমার নামই হয়েছে ওয়ান ডে ক্রিকেট খেলে। অনেকে তো টেস্টের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত। কিন্তু আমার কাছে ক্রিকেটই আসল। খেলাটাকে এতটাই ভালবাসি যে, আমি চাই আরও একটা ফরম্যাট চালু হোক ক্রিকেটে।’‌ কয়েকদিন আগেই বাংলার এক প্রাক্তন ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘‌টি২০–র জনপ্রিয়তা বাড়ছে এটা অস্বীকার করব না। আবার এটাও ঠিক টি২০ দিয়ে কোনও ক্রিকেটারের দক্ষতা বিচার করা যায় না। আইপিএলের মঞ্চ যতই প্রতিভা তুলে আনুক না কেন, দর্শক সেখানে আনন্দ করতেই মাঠে যায়। টেস্ট খেলতে টেকনিকের পাশাপাশি ধৈর্যও লাগে। একদিনের ফরম্যাট সেটারই ছোট সংস্করণ। তাহলে এই ফরম্যাটকে কেন বিলুপ্ত করার ভাবনা মাথায় আসবে?‌’‌ ২০২৩–২০২৭, এই পাঁচ বছরে এফটিপি (‌ফিউচার ট্যুরস অ্যান্ড প্রোগ্রামস)‌ অনুযায়ী ভারত ওয়ান ডে খেলবে ৪২টি, সেখানে টি২০ ম্যাচের সংখ্যা ৬১। 

টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা তো অনেক দিনের। সম্প্রতি আবার মুখ খুলেছেন ইয়ান চ্যাপেল। ক্রিকেটের প্রাচীনতম ফরম্যাটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন এই অসি কিংবদন্তি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‌আমার জীবনকালে অন্তত টেস্ট ক্রিকেটের মৃত্যু হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, খেলবে কারা?‌ সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সেরা খেলোয়াড়রা না থাকলে টেস্ট ক্রিকেট কি দর্শনীয় থাকবে?‌ উত্তরটা সম্ভবত ‘‌না’‌। টেস্ট ক্রিকেট দারুণ। কিন্তু সেটাকে ধরেও রাখতে হবে।’‌ বিশ্বজুড়ে টি২০ লিগের উল্কাগ‌তির উত্থান টেস্ট ক্রিকেট ও তার ভবিষ্যতের মারাত্মক ক্ষতি করে দিচ্ছে বলে মত ইয়ান চ্যাপেলের। কী বলছেন তিনি?‌ ‘‌ক্রিকেটারদের টাকা দিতে পারছে না বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ভুগছে। শ্রীলঙ্কায় পরিকাঠামো থাকলেও রাজনৈতিক সমস্যা অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও নানা সমস্যা। আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ডকে টেস্ট খেলার মর্যাদা দেওয়া হলেও সেটা আদতে ভোটের চমক।’‌ তাঁর এই কথাগুলো একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার নয়। 

নতুন এফটিপি–তে অবশ্য ভারতের টেস্টপ্রেমীদের জন্য সুখবর আছে। ভারত–অস্ট্রেলিয়ার গাভাসকার–বর্ডার ট্রফির খেলা হত চার টেস্টের। আগামী পাঁচ বছরে দু’‌বার হবে এই সিরিজ, যেখানে খেলা হবে পাঁচ টেস্টের। এই পাঁচ বছরে ভারত খেলবে ৩৮ টেস্ট। তবু সংশয় থামে না টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কীভাবে তিন ফরম্যাটের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখা যায়, এব্যাপারে আইসিসি–কেই উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কপিলদেব। আমরাও তাকিয়ে তেমনই কিছুর দিকে। অনুরাগী হিসেবে আমরা চাই ক্রিকেটের সব ফরম্যাটই বেঁচে থাকুক নিজ নিজ গরিমায়, ঔজ্জ্বল্যে, বৈশিষ্টে।