মহিমান্বিত টেস্ট ক্রিকেট

২০২৩ এর ২৮ শে ফেব্রুয়ারির ওয়েলিংটন কি টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়কদের অভিধানে ফলো অন নামক শব্দবন্ধ মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে আবির্ভূত হ‌ওয়ার স্থায়ী প্রবনতা তৈরি করে দিল? ১৪৬ বছরের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে ওয়েলিংটন কেবলমাত্র চতুর্থ নজির যেখানে ফলো অন করা দল অবিস্মরণীয় প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে শেষ হাসি হেসেছে।বাইশ বছর আগে ইডেন দেখেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এর টিম ইন্ডিয়ার অবিশ্বাস্য রূপকথা।শোনা যায় তৎকালীন অষ্ট্রেলিয় কোচ জন বুকাননের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও স্টিভ ওয়াঘ নাকি ফলো অনের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। অকল্পনীয় ( নাকি অনিবার্য) পরিনতি হিসেবে মার্চের গরমে টানা আড়াই দিন ফিল্ডিং এর খেসারত দেওয়ার কাহিনী সর্বজনবিদিত।

পরবর্তীকালে স্টিভ নিজের কৃতকর্মের জন্য প্রকাশ্যে অনুতাপ প্রকাশ করেছিলেন কিনা জানা নেই তবে বেন স্টোকস এক‌ই পথের পথিক হ‌ওয়ার মাশুল দিতে গিয়ে সিরিজ খোয়ালে গন সমালোচিত হ‌ওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

২২৬ রানে প্রথম ইনিংস লিডের পর আপাত নিরাপদজনক হিসেবে লিড আরও বাড়িয়ে প্রতিপক্ষকে চতুর্থ ইনিংসে পাহাড়প্রমাণ চাপের মুখে ফেলে দেওয়ার অধুনা জনপ্রিয় চিত্রনাট্য ম্যাককালাম এর ক্রিকেট দর্শনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা সে ব্যাপারে ধন্দ থাকলেও টেস্টের প্রথম তিনদিন প্রশ্নাতীত আধিপত্যের পর‌ও যে ম্যাচ শেষ পর্যন্ত হাতছাড়া হতে পারে এমন অনুমান ক্রিকেটীয় বোধবুদ্ধির বিচারে কষ্টকল্পিত ছিল।জো রুট ও স্টোকসের জুটি যখন স্বকীয় মেজাজে নিশ্চিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তখনও কি ভাবা গিয়েছিল এমন অভূতপূর্ব রোমাঞ্চকর ফটো ফিনিস অপেক্ষা করছে? ওয়াগনার এর সৌজন্যে কিউইরা যেভাবে খাদের কিনারা থেকে ফিরে এল তা ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্রত্যাঘাতের লোকগাথা হিসেবে অমর হয়ে থাকলে আশ্চর্য হব না। শেষ বিচারে অবশ্য জয়ী সনাতনী ক্রিকেটের ক্রম ক্ষয়িষ্ণু বিপন্নপ্রায় অস্তিত্বের ভগ্নস্তুপ থেকে ফিনিক্স পাখি গোত্রীয় পুনর্জন্ম।কুড়ি কুড়ির আগ্রাসনের উদ্যত থাবায় ক্ষতবিক্ষত হতে হতেও মুমুর্ষুপ্রায় টেস্ট ক্রিকেটের প্রত্যয়ী বার্তা — আমি এখনও বেঁচে আছি স্বমহিমায়।